আসন্ন রায়গঞ্জ পুরভোটে ৫টি ওয়ার্ডে দলের কাউকে না-দাঁড় করিয়ে ‘নির্দল’ প্রার্থী দেবে উত্তর দিনাজপুর জেলা বামফ্রন্ট। সোমবার দুপুরে রায়গঞ্জের সিপিএমের জোনাল কমিটির তরফে সাংবাদিক বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে জেলা বামফ্রন্ট। সিপিএমের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই পাঁচটি ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীরা জিতে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সিপিএম কিংবা তার শরিক দলের কেউ-ই প্রার্থী হতে চাইছেন না। অগত্যা, সব দিক খতিয়ে দেখেই নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর কৌশল নিতে হয়েছে সিপিএমকে। তবে কেউ প্রার্থী চাইছে না বলেই ওই সিদ্ধান্ত কি না সেই প্রশ্নে কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি বাম নেতারা। সিপিএমের রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক অনিরুদ্ধ ভৌমিক বলেন, “কৌশলগত কারণে বামফ্রন্ট ১২, ১৩, ১৫, ১৯ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” আর দলের রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক নীলকমল সাহা বলেন, “বামফ্রন্ট নেতৃত্বের মনে হয়েছে ওই ওয়ার্ডগুলিতে দলীয় প্রার্থীদের থেকে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে। তাঁরাই ভাল লড়াই দিতে পারবেন।”
পুরসভার ১৯ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডটি গত প্রায় ৩০ বছর ধরে কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। ১৯ নম্বরের কাউন্সিলর হলেন পুর চেয়ারম্যান তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত। ২১ নম্বরের কাউন্সিলর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ বিশ্বাসের স্ত্রী অনিমিতা বিশ্বাস। একই ভাবে ১২ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডও বহুদিন ধরে কংগ্রেসের এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে রয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ১২ নম্বরে ৫৫৩, ১৩ নম্বরে ৩৭১, ১৫ নম্বরে ৪৫০, ১৯ নম্বরে ৯২৯ এবং ২১ নম্বরে ১৩৫৬ ভোটে জোট প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন। এই সব মিলিয়ে ওয়ার্ডগুলিতে জেতা অত্যন্ত মুশকিলের ব্যাপার বলে বাম নেতারা অনেকেই মনে করছেন। এদিন অবশ্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি বামফ্রন্ট। শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে সিপিএম, ২টি ওয়ার্ডে আরএসপি, ২টি ওয়ার্ডে সোসালিস্ট পার্টি এবং ৫টি ওয়ার্ডে নিদর্ল প্রার্থীরা দাঁড়াবেন। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ নারায়ণ ঘোষ বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩-৪ জনকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। ১৮ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। গতবারের বিজয়ীদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”
বাম শরিকদের মধ্যে মতবিরোধ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিপিএমের আপত্তির পরেও সোসালিস্ট পার্টির তরফে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ২টি আসন নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। দলের জেলা সম্পাদক অরুণ দে বলেন, “পুর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে শিখা বিশ্বাস রায় এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডে অধীর দাস প্রার্থী হচ্ছেন। আর আমরা ৪টি আসন চেয়েছিলাম। ২ টি ওয়ার্ড দেওয়া হল। বাধ্য হয়ে বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মানতে হয়েছে।” আগে ২৬ আসন বিশিষ্ট হলেও বতর্মানে রায়গঞ্জ পুরসভায় ২৫টি ওয়ার্ড। ২০০৬ সালে কংগ্রেস ১৮টি আসন পেয়েছিল। বামফ্রন্টের দখলে ৬টি এবং নির্দলেরা দুটি ওয়ার্ডে জেতে। ইতিমধ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট গড়ে লড়াই-র কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। কংগ্রেস ১৮টি আসনে এবং তৃণমূল ৭টি আসনে লড়াই করছে। ১০ জুলাই রায়গঞ্জ পুরসভার নির্বাচন হবে। আগামী ১৫ জুন অবধি মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। |