|
|
|
|
আর্সেনিক-দূষণ |
রাজ্যের নিষেধ সত্ত্বেও পুর-ভরসা গভীর নলকূপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সারা রাজ্যের সঙ্গে কলকাতার ভূগর্ভ জলস্তরও নেমে যাচ্ছে হুহু করে। আর জলস্তর নামার সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গার পূর্ব তীরের অঞ্চলগুলির মতো কলকাতাতেও বাড়ছে আর্সেনিক-দূষণের আশঙ্কা। বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ অংশে। সমস্যা মোকাবিলায় কলকাতা থেকে গভীর নলকূপ তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। নলকূপ তোলা তো দূর, কলকাতা পুরসভার সংযোজিত এলাকার জলসঙ্কট মোকাবিলায় সেখানে নতুন করে গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। গোটা এলাকা আর্সেনিকপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও।
ই এম বাইপাসের দু’পাশে যে সব বহুতল আবাসন গত দু’দশকে তৈরি হয়েছে, তারা সকলেই জল নেয় গভীর নলকূপ ব্যবহার করে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, লেক গার্ডেন্স, গল্ফ গার্ডেন এলাকাতেও বহুতলগুলির জল সরবরাহের প্রধান ভরসা গভীর নলকূপ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, লেক গার্ডেন্স, গল্ফ গার্ডেন, যাদবপুর, নাকতলা, বাঁশদ্রোণী এলাকার পানীয় জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই সব এলাকায় জল পেতে ভূগর্ভের অনেক নীচে নিয়ে যেতে হচ্ছে পাইপ। ফলে ভূগর্ভের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিপদের ঝুঁকি সত্ত্বেও কেন পুরসভা ফের গভীর নলকূপ বসানোর অনুমতি দিচ্ছে? পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গার্ডেনরিচ এবং পলতা প্রকল্পের জল সরবরাহের পরিমাণ এই মুহূর্তে তাঁরা বাড়াতে পারছেন না। এই অবস্থায় দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুর, বাঁশদ্রোণী, বেহালা-ঠাকুরপুকুর এলাকার জলসঙ্কট মোকাবিলায় গভীর নলকূপ বসানো ছাড়া উপায় নেই। রাজ্যে ভূগর্ভের জলস্তর দ্রুত নেমে যাওয়ায় এবং আর্সেনিক ও ফ্লোরাইড দূষণ বাড়তে থাকায় রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর নতুন করে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কলকাতা পুরসভাকেই তারা এই সিদ্ধান্ত মানাতে পারছে না।
এই অবস্থায় কী বলছেন জলসম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র? তাঁর মন্তব্য, “গভীর নলকূপ তুলে দিয়ে রাজ্যবাসীর ঘরে ঘরে ভূপৃষ্ঠের জল পরিশোধন করে সরবরাহ করাই আমাদের লক্ষ্য। গভীর নলকূপের পরিশোধিত জল না-খেয়ে প্রয়োজনে বৃষ্টির জল ধরে রেখে পরিশোধন করেও খাওয়া যেতে পারে।” কিন্তু কলকাতা পুরসভাই তো সেই পরামর্শ মানছে না! সৌমেনবাবু বলেন, “শহরের অনেক বহুতল আবাসনে অবৈধ ভাবে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তবে যেখানে গভীর নলকূপ ছাড়া বিকল্প পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, সেখানে মানুষ নিরুপায় হয়ে ওই জলই পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে যাদবপুর বিধানসভা এলাকায় জলসঙ্কট মেটানোর আশ্বাস দেন রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনামন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। ওই এলাকায় জলসঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজতে সম্প্রতি ১২ নম্বর বরোর অফিসে পুর-কমিশনার অর্ণব রায় এবং পুর জল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে কি বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে না? মণীশবাবু বলেন, “এলাকার জল-সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।”
তবে পুরসভার সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদ তারক সিংহ বলেন, “সংযোজিত এলাকার অনেক জায়গায় গার্ডেনরিচের জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ওই সব এলাকায় গভীর নলকূপের জলই ভরসা। আপাতত বাঁশদ্রোণী এবং বেহালা-ঠাকুরপুকুরে ৫টি গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এ ব্যাপারে কী বলছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়? তিনি বলেন, “আমরা শহরের প্রত্যন্ত এলাকায় গঙ্গার পরিশোধিত জল সরবরাহ করতে চাই। আমরা ধীরে ধীরে শহর থেকে গভীর নলকূপগুলি তুলে দিতে চাইছি। তবে যত দিন না গঙ্গার পরিশোধিত জল সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে, তত দিন তো জল দিতে হবে।” |
|
|
|
|
|