রুগ্ণ স্বাস্থ্য/২
চিকিৎসক থেকে যন্ত্রপাতি নেই আর নেই হলদিয়া হাসপাতালে
৯৮৮ সালের ২০ নভেম্বর। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উদ্বোধন করেছিলেন হলদিয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের। সেই স্টেট জেনারেল হাসপাতালই এখন হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল। ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়েছে এই হাসপাতাল। মানুষ বেড়েছে। কিন্তু অতীতের পরিকাঠামো আর বদলায়নি। কঙ্কালসার চেহারা নিয়ে খানিকটা নাম-কা-ওয়াস্তেই টিকে আছে এই হাসপাতাল। রোগী কল্যাণ সমিতির নিয়মিত বৈঠক হয় বটে। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। পার্থ দে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এক বারই এখানে পা পড়েছিল কোনও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। তার পরে আর কোনও কেষ্টবিষ্টু আসেননি। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র তো এক বারও পা দেননি এই হাসপাতালে।
কেমন অবস্থা হাসপাতালের? ২৩ মে হলদিয়ার মহকুমাশাসক অসিতা মিশ্র-র অফিসে বসেছিল রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক। বিধায়ক শিউলি সাহার উপস্থিতিতে অব্যবস্থা নিয়ে সরব হন অনেকেই। সেখানেই পেশ হয় কিছু তথ্য, যা বলে দেবে কেমন আছে মহকুমা হাসপাতাল!
জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ১৫ জন, আছেন ৫ জন। মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ২ জন, আছেন এক জন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কথা ৩ জন, আছেন এক জন। মেডিক্যাল অফিসার (রেডিওলজি) থাকার কথা ৩ জন, আছেন এক জন। ৩ জন চক্ষু চিকিৎসক থাকার কথা, আছেন সেই এক জন। ব্লাডব্যাঙ্কে দু’জন থাকার কথা। প্রায় বছরখানেক ধরে ব্লাডব্যাঙ্কে কোনও চিকিৎসকই নেই। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কথা ৪ জন, আছেন মাত্র ২ জন। ৮২ জন সেবাকর্মী থাকার কথা, আছেন তার অর্ধেক, ৪২ জন। গ্রুপ-ডি কর্মী থাকার কথা ৬০ জন, আছেন তিন ভাগের এক ভাগ, মাত্র ২২ জন। ঝাড়ুদার ৪৫ জন থাকার কথা, আছেন এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ মাত্র ১৫ জন।
পরিত্যক্ত নার্স হস্টেলে গজিয়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসকদের আবাসন যেন ভূতের বাড়ি। ভেঙে পড়ছে আবাসনের বিভিন্ন অংশের চাঙড়। হাসপাতাল অপরিষ্কার। ঝোপঝাড়ে ভরা। তীব্র কটু গন্ধ চত্বর জুড়ে।
ইসিজি-র ব্যবস্থা নেই। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি নেই। এক্স-রে মেশিন নেই। এ সব যে নেই, তা সরাসরি স্বীকার করেন হাসপাতালের সুপার হারাধন বর্মন। হারাধনবাবু বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় বার বার বলেছি, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ১৫ জন ঝাড়ুদারের অধিকাংশই মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। কাজে আসে না। ওঁদের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণও নেই। চিকিৎসকের অভাবে এখন আমাকেই ময়নাতদন্তও করতে হয়। না হলে বিক্ষোভ, ভাঙচুর!” হতাশ সুপার জানান, হাসপাতালের কতিপয় নার্স ও চিকিৎসক নিয়ে পরিষেবার কাজ চলছে। মাত্র ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে কার্যত ঠাঁই নেই অবস্থা। পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি। তা সত্ত্বেও হাসপাতালের চেষ্টা থাকে রোগীকে না-ফেরানোর, মন্তব্য এক চিকিৎসকের।
বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য। গত সপ্তাহেই গিরীশ মোড়ের বাসিন্দা ভারতী দাসকে সাপে কামড়ায়। রাত ৮টার সময়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এলেও ১০টা পর্যন্ত জরুরি তলবেও চিকিৎসক না আসায় ভারতীদেবীকে তমলুকে নিয়ে যেতে বাধ্য হন বাড়ির লোকেরা। রামনগরের বাসিন্দা ইমদাদুল ইসলামের অভিযোগ, “হাসপাতালে পরিষেবা নামমাত্র। অল্পসংখ্যক চিকিৎসক যাঁরা আছেন, তাঁরা আউটডোরে সময়মতো বসেন না। নার্সিংহোমে যেতে হয় রোগীদের। সেখানে ঠিকই পাওয়া যায় হাসপাতালের ডাক্তারবাবুদের!”
রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মহকুমা শাসক অসিতা মিশ্র-র বক্তব্য, “পরিষেবার উন্নয়নে আমরা আরও চিকিৎসক-নার্স-কর্মী চেয়েছি।” পূর্ব মেদিনীপুরের সিএমওএইচ সুকুমার দাসের বক্তব্য, “জেলার সব হাসপাতালের স্ট্যাটাস রিপোর্ট নিচ্ছি।” সভাধিপতি গাঁধী হাজরাও হাসপাতাল পরিদর্শনে বেরোচ্ছেন। বিধায়ক শিউলি সাহা রোগীকল্যাণ সমিতির সভায় বলেছেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে সব বিষয় জানাব।” সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সাংসদ তহবিলের টাকায় ইসিজি মেশিন দেবেন বলে উদ্যোগী হয়েছেন। রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য আনন্দময় অধিকারী কথায়, “নানা জন নানা ভাবে সাহায্য করছেন। তবে পরিকাঠামো ও পরিষেবার সার্বিক উন্নয়নে বৃহত্তর পরিকল্পনা ও বরাদ্দ প্রয়োজন।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.