|
|
|
|
জমি ফেরানো নিয়ে বিএলআরও দফতরে ব্যস্ততা |
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • সিঙ্গুর |
সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমির কাগজপত্র সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। আর রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাল রেখে সেই কাজ করতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলতে হয়েছে সিঙ্গুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও) দফতরকে।
বস্তুত, রাজ্যের তরফে যে দ্রুততার সঙ্গে ওই চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতেই এই আগাম প্রস্তুতি। আপাতত, সিঙ্গুর কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মাধ্যমেই এই কাজ চলছে। যে কমিটিতে পঞ্চায়েত সমিতির কয়েক জন সদস্যও রয়েছেন।
এ পর্যন্ত কৃষিজমি রক্ষা কমিটির হিসেব অনুযায়ী, মোট ২৯০০ ‘অনিচ্ছুক’ চাষি রয়েছেন। তাঁরা নিজেরা প্রকল্প এলাকার মধ্যে জমি আছে বলে দাবি করলেও, সেই দাবি তাঁদের কাগজপত্রের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, এখন সেটাই খতিয়ে দেখার পালা চলছে। ‘অনিচ্ছুকদের’ মধ্যে কারও যদি শরিকি ঝামেলা থাকে বা কোনও জমির যদি মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, সেগুলিও খতিয়ে দেখার কাজ চলছে এখন। ‘অনিচ্ছুকদের’ মধ্যে যাঁদের কাগজপত্র নিয়ে সরকারি স্তরে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তাঁদের বিএলআরও দফতরে গিয়ে জমির বিধিবদ্ধ মান্যতা আদায়ের কাগজ সংগ্রহ করতে বলছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। যাতে পরে শুধু এই কারণে জমি ফেরতের কাজ আটকে না থাকে। ‘ইচ্ছুক’ এবং ‘অনিচ্ছুকদের’ নিয়ে সিঙ্গুরে এক সময় প্রশাসনিক স্তরে যে লড়াইয়ের পরিস্থিতি ছিল, রাজ্যে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র আমূল বদলে গিয়েছে। ‘অনিচ্ছুকদের’ জমি ফেরত দিলে এখন আপত্তি নেই ‘ইচ্ছুকদের’। সিঙ্গুরের গোপালনগর মৌজার কৃষ্ণকিশোর ঘোষের পরিবার অন্তত ৬৫ বিঘা জমি টাটা প্রকল্পে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “এখন রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে এটা নিশ্চিত ভাবেই চাই, ৬০০ একরে শিল্প হোক। তাতে সিঙ্গুরের ভাল হবে।” তবে, ‘অনিচ্ছুক’ চাষি কার্তিক ঘোষ জমি ফিরে পেতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, “পাঁচ বছর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছি। আমরা যে ভুল ছিলাম না, মানুষ ভোটের বাক্সেই তার প্রমাণ দিয়েছে। এ বার দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কাছে জমি ফেরত চাওয়ার সময় এসেছে। তাই আর দেরি নয়।”
শুধু প্রকল্প এলাকাতেই নয়, প্রয়োজনে এর বাইরে যদি জমি দিতে হয়, সে জন্য এ সবের পাশাপাশি জোর কদমে জমি-ব্যাঙ্ক তৈরির কাজও শুরু করেছে সিঙ্গুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার (বিএলআরও) দফতর। এর ফলে কোথায় কতটা কী ধরনের জমি রয়েছে, তা রাজ্য সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝতে পারবে। সিঙ্গুর বিএলআরও অফিসের কর্মীদের এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। বিএলআরও প্রবাল বাগাল-সহ অন্য কর্মীরা ছুটির দিনেও অফিস করছেন। শুধু জমি চিহ্নিত করাই নয়, যে জমি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, মানচিত্রে কালো দাগ দিয়ে তা চিহ্নিত করে দ্রুততার সঙ্গে সেই জমির চরিত্র নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। দফতরের এক কর্মীর কথায়, “ঘড়ির কাঁটাকে পিছনে ফেলে এখন আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, খাতায়-কলমে দফতরে যত কর্মী রয়েছে, আদতে আছে তার মাত্র ২৫ শতাংশ। তাই কাজের ক্ষেত্রে প্রভূত সমস্যা রয়েছে। যদিও সরকারি স্তরে চাপ রয়েছে, যে কোনও উপায়ে এই কাজ দ্রুত শেষ করার।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফিরিয়ে দিতে প্রকল্প এলাকার বাইরেও যদি জমির প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রেও সরকার প্রস্তুত থাকতে চাইছে। তাই, জমি-ব্যাঙ্কের ‘রোড ম্যাপ’ টেবিলে ফেলেই সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষিদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ সমাধা করতে চাইছে রাজ্য সরকার। |
|
|
|
|
|