বেহাল দশার কথা রাজ্যপালের মুখেও
আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রণব-অমিত কথা শুরু
শ্চিমবঙ্গের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। আজ নর্থ ব্লকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘আর্থিক প্যাকেজ’-এর ব্লু-প্রিন্ট রচনার কাজ শুরু হল। শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে যার রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন প্রণববাবু।
বৈঠকের পর অমিত মিত্র জানান, “আজকের আলোচনা যথেষ্টই ইতিবাচক ও গঠনমূলক হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক হাল খুবই করুণ। কিন্তু এখন এই অবস্থা কী করে পরিবর্তন করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা শুরু হল। আজ আলোচনার প্রথম ধাপ। তার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এটি আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।” প্রণববাবুও জানিয়েছেন, “আমি পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক সাহায্য তো করবই। কিছু হবে স্বল্প মেয়াদের, কিছু মাঝারি সময়ের জন্য, কিছু দীর্ঘ মেয়াদের। কী ভাবে, কোন কোন পথে সেটি করা যায়, তা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করব। বিভিন্ন খাতে সাহায্যটাই সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিক প্যাকেজ হয়ে যাবে।”
আজ নতুন বিধানসভায় তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও রাজ্যের ‘বেহাল’ আর্থিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নতুন সরকার ‘যথাসময়ে’ রাজ্যের আর্থিক অবস্থা নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। রাজ্যপাল বলেছেন, “নতুন সরকার বিপুল ঋণের বোঝা নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ও আর্থিক ঘাটতিরও সম্মুখীন হতে হয়েছে সরকারকে। ...এই ঘাটতির মধ্যে সামাজিক পরিকাঠামো এবং এবং মানব উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিও অন্তর্ভূক্ত।”
রাজ্যপাল জানিয়েছেন, চলতি বছরে এই ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করে ২ লক্ষ ৩ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে পরিমাণ ১ কোটি ৮৫ লক্ষ ৬৬০.৪৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
রাজ্যপাল বলেছেন, “২০১০-১১ সালের জন্য যে রাজস্ব আদায় হবে বলে ধরা হয়েছিল, সংশোধিত ব্যয় অনুসারে, তা অতিশয়োক্তি সূচক। দুর্ভাগ্যক্রমে, ব্যয়ের পরিমাণও কম করে দেখানো হয়েছে। পরিস্থিতির বাস্তবতা বিচার করে অনুমান করা হচ্ছে, রাজ্য চলতি আর্থিক বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা নগদ ঘাটতির সম্মুখীন হবে।” রাজ্যপাল আরও জানিয়েছেন, সামাজিক পরিকাঠামো এবং মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় কম বরাদ্দ করার ফলে ৩ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তাঁর কথায়, “অন্য ভাবে বলতে গেলে, নতুন সরকার বিপুল আকারের আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে কোন পথে আর্থিক সাহায্য করতে পারে কেন্দ্র?
প্রথমত, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) পশ্চিমবঙ্গকে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ দিতে পারে। আজ রাজ্যের অর্থসচিব চন্দ্রমোহন বাচাওয়াত এডিবি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রণববাবুর সঙ্গে অমিত মিত্রের বৈঠকেও কিছু ক্ষণ তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেই সময়ে ছিলেন কেন্দ্রের ব্যয়সচিব সুমিত বসুও। পরে ব্যয়সচিবের সঙ্গে রাজ্যের অর্থসচিব পৃথক বৈঠক করেন। তবে এডিবি-র সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হলেও সেটি কার্যকর হতে অনেক সময় লেগে যাবে বলে মনে করেন প্রণববাবু।
রাজ্য সরকারের কাছে আশু লক্ষ্য হল, এ বছরের যোজনা আয়তন নির্ধারণ করা। আজই মমতার সঙ্গে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিগত বাম সরকার যোজনা কমিশনকে যে হিসেব দিত, তাতে প্রচুর কারসাজি ছিল বলে নতুন সরকারের অভিযোগ। সেই হিসেবের উপরে ভিত্তি করেই যোজনা আয়তন নির্ধারণ করা হত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চান, রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত খতিয়ান যোজনা কমিশনের সামনে তুলে ধরতে। সেই হিসেবনিকেশের কাজ এখনও হয়নি বলেই মমতা-মন্টেক বৈঠক আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তার বদলে আগে প্রণববাবুর সঙ্গে বৈঠক করে নিলেন অমিতবাবু। মন্টেকের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।
আজ অমিতবাবু সঙ্গে বৈঠকের আগে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয় প্রণববাবুকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন শুল্ক থেকে শুরু করে স্ট্যাম্প ডিউটি আদায়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ যে টাকা খরচ করেছে, তা অন্য রাজ্যের তুলনায় ঢের বেশি। সে কারণে রাজ্যকে ব্যয় সঙ্কোচেরও পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে রাজ্য সরকারেরও এখন লক্ষ্য বাজার থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ানো, আর্থিক ঘাটতি কমানো ও সম্পদের সঠিক পরিচালন করা।
পাশাপাশি শতকার একশো ভাগ কেন্দ্রীয় সাহায্য দেওয়া হয়, এমন বিভিন্ন প্রকল্পেও কেন্দ্র এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ দিতে চায়। তবে রাজ্য সরকার আরও বেশি অর্থের দাবি করছে। সেই দাবিও এখন খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। নতুন সরকার কী কী নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছে, এবং তাতে কত খরচ হবে, তারও হিসেব চাওয়া হয়েছে। স্বল্প সঞ্চয়ে ঋণের বোঝা কমানোর বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সুদ মকুব করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের সংঘাতের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল কয়লার রয়্যালটি ও সেস। রাজ্যের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্র বর্ধিত হারে রয়্যালটি দিচ্ছে না। অন্য দিকে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল রাজ্য কয়লার উপরে সেস আদায় করছে, ফলে বাড়তি রয়্যালটি তাদের প্রাপ্য নয়। নতুন সরকার এই বিরোধের ইতি ঘটিয়ে শুধু রয়্যালটি নেওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে বলে খবর। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রাপ্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রণববাবু।
Previous Story Rajya Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.