|
|
|
|
জবকার্ড ‘সরানোর’ সময় ধৃত সিপিএম নেতার ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথপুর |
দলীয় কার্যালয় থেকে বছরে ১০০ দিনের কাজের ‘জবকার্ড’ নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়লেন এক সিপিএম নেতার ছেলে। পরে পুলিশ গিয়ে সমীর দাস নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে রঘুনাথপুর থানার বামড়রা গ্রামে। সোমবার ধৃতকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে তাঁর ১৪ দিন জেল হাজত হয়। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ধৃত যুবকের কাছ থেকে ৮৭টি ‘জবকার্ড’ উদ্ধার হয়েছে।
দু’সপ্তাহ আগেই রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বড়রা পঞ্চায়েতের এই বামড়রা গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য এমন্না খাতুন ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, আকুড়াবাঁধ ও জুলুলিয়া নামের দু’টি পুকুর সংস্কারে মোট ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ওই পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগ ছিল, পুকুর দু’টি সংস্কারের ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থের পুরোটা খরচ করা হয়নি। অনেক কম টাকায় কাজ করানোর পরে সিপিএম নেতারা ‘চাপ’ দিয়ে তাঁকে ফাঁকা ‘মাস্টাররোলে’ সই করিয়ে নিয়েছিলেন। প্রকৃত শ্রমিকদের নাম সেখানে ছিল না। তার বদলে নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের নাম ওই প্রকল্পের শ্রমিক হিসাবে ‘মাস্টারোলে’ দেখিয়েছিলেন ওই সিপিএম নেতারা বলেও তাঁর অভিযোগ।পঞ্চায়েত সদস্যের ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেই ব্লক প্রশাসন দু’টি পুকুর সংস্কারের কাজ সম্পর্কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সোমবার বামড়রা গ্রামে সরেজমিন তদন্তে যাওয়ার কথা ছিল ব্লকের কিছু কর্মীর। তার আগেই রবিবার রাতে সিপিএমের কার্যালয় থেকে ‘জবকার্ড’ সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। রঘুনাথপুর ২-এর যুগ্ম-বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, “ওই পঞ্চায়েত সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে একবার শুনানি করেছেন। এ দিন থেকে সরেজমিন তদন্ত শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হয়েছে কাজের পরিমাণ, জবকার্ড-সহ সমস্ত বিষয়।”
তবে রবিবার রাতের ঘটনা কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমত, ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী ‘জবকার্ড’ যেখানে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের হাতে থাকা উচিত, তা সিপিএমের কার্যালয়ে পাওয়া গেল কী ভাবে। দ্বিতীয়ত, দু’টি পুকুর সংস্কারের কাজে যে-সব নাম ‘মাস্টাররোলে’ দেখানো হয়েছিল, তাঁদের জবকার্ডগুলিই কি রাতারাতি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল প্রশাসনিক তদন্তের ভয়ে? বস্তুত, রবিবার রাতে গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাই আটক করেছিলেন সিপিএমের স্থানীয় শাখা কমিটির সম্পাদক চিন্তাহরণ দাসের ছেলে সমীরকে। তাঁকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। রঘুনাথপুর ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বরুণ মাহাতো বলেন, “পুকুর সংস্কারের কাজে দলের নেতারাই দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন সিপিএমেরই পঞ্চায়েত সদস্যা। তার উপর এই জবকার্ড সরানোর চেষ্টা প্রমাণ করছে যে, ১০০ দিনের কাজে আক্ষরিক অর্থেই পুকুর চুরি করেছে সিপিএমের নেতারা। আমাদের প্রশ্ন, শ্রমিকদের জবকার্ড সিপিএমের কার্যালয়ে থাকবে কেন।”
যদিও দলীয় কার্যালয়ে জবকার্ড থাকার মধ্যে কোনও রকম ‘অস্বাভাবিকত্ব’ দেখছেন না স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা দলের লোকাল কমিটির সদস্য রহুল্যা মির্ধার যুক্তি, “অনেক সময় দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিকেরা জবকার্ড নিয়ে আসেন। কার্যালয় থেকেই কাজকর্ম করা হয়। তাই জবকার্ড থেকে যায়। গ্রামে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক।” তবে তাঁদের দলেরই এক কর্মীর জবকার্ড সমেত ধরা পড়ার ঘটনা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য তিনি করতে চাননি। বড়রা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান দীপেন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানা নেই।” |
|
|
|
|
|