কোতুলপুরে সিপিএম নেতা খুনে ধৃত ২ তৃণমূলকর্মীর জেল হাজত
লীয় নেতা খুন হওয়ার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরে শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গেল সিপিএম।
শনিবার রাতে বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার সাইমনি গ্রামের সিপিএম নেতা অলক বেওড়াকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু দলের জেলা বা স্থানীয় নেতারা ‘ভয়ে’ রবিবার পর্যন্ত ওই বাড়িতে যাননি। সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ওই গ্রামে যান রাজ্যের প্রাক্তন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ দে। নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন তিনি। এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ গ্রামেই নিহত নেতার অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডে প্রদ্যুৎ নন্দী ও কল্যাণ সিংহ নামে দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এলাকার ১৬ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের বাবা রামজয় বেওড়া। পুলিশের দাবি, বাকি ১৪ জন পলাতক। খোঁজ চলছে। অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন তৃণমূলের স্থানীয় সিহড় অঞ্চল সভাপতি তথা কোতুলপুর ব্লকের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সেন।
নিহত সিপিএম নেতার পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ দে। নিজস্ব চিত্র
অলকবাবুর ছেলে সহদেবের অভিযোগ, “ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই তৃণমূল বাবাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল। প্রদ্যুৎ আর কল্যাণও হুমকি দিয়েছিল।” এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “জেরা করে ধৃত দু’জনের কাছ থেকে খুনের ঘটনার বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। আরও অনেকের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের ধরতে জোর তল্লাশি চলছে।” হামলাকারীদের মারধরে আহত অলকবাবুর বাবা ও ভাইপো সঞ্জয় এখনও গোগরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও তারা কতটা কী করেছে, জানি না। তবে তৃণমূলের ওই দুষ্কৃতীরাই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।” যে জেলায় তিন দশক ধরে বিরোধীরা কখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি, সেখানে দলীয় নেতা খুনের প্রতিবাদে সিপিএমের পক্ষ থেকে কোনও কর্মসূচিও নেওয়া হয়নি। দলের কোতুলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক গৌরহরি পালের কথায়, “অলকবাবু দলের বড় নেতা ছিলেন না। তবে পার্টিকে ভালবাসতেন। হিমঘরের মুটে মজদুর সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “ওখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। তৃণমূল রোজই কারও না কারও বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। মারধর করছে। দলীয় কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই মুহূর্তে এই ঘটনা নিয়ে বড় প্রতিবাদ আন্দোলন করছি না।”
সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা কার্যকরী সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “অলক বেওড়ার বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় অনেক অভিযোগ আছে। তিনি ছিলেন ওই এলাকায় সন্ত্রাসের নায়ক। হিমঘর থেকে আলু নামানো নিয়ে সিপিএমের মধ্যেই সংঘাত বেধেছিল। তারই পরিণতিতে এই খুন। আমাদের দলীয় কর্মীদের অহেতুক ফাঁসানো হচ্ছে।” ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিমাই ঘোষ বলেন, “১৯৯৯-এ তৃণমূল কর্মী শেখ নিয়াজুদ্দিনকে খুনের অভিযোগ ছিল অলকের বিরুদ্ধে। সাইমনি গ্রামেই তাঁকে খুন করে সিপিএম।” তাঁর আরও দাবি, “সিপিএম নেতাদের চাপেই নিহতের পরিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে অভিযোগ করেছে। বিশ্বজিৎ ঘটনার রাতে গ্রামে না থাকলেও তাঁর নাম এফআইআরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ভোট গণনার পর থেকেই কোতুলপুর ও লাগোয়া জয়পুর ব্লকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। তবু কেন সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ঠেকানো যাচ্ছে না, সে প্রশ্ন উঠছে। এসডিপিও বলেন, “আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। তবে অতর্কিতে কোথাও হামলা হলে, কিছু করার থাকে না।”
বিধানসভা নির্বাচনের পরে দলীয় কর্মীদের হত্যা ও লাগাতার রাজনৈতিক আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরব হলেন সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে অন্য দলের সাংসদেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রশান্তবাবু জানান, গত কালের বাঁকুড়ার ঘটনাটি নিয়ে মোট ১৫ জন সিপিএম কর্মী ভোটের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। অবিলম্বে ওই হামলা বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি যে ভাবে তৃণমূলের প্ররোচনায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে হামলা হচ্ছে বৈঠকে তারও প্রতিবাদ করেন তিনি। সিপিএম করার অপরাধে দলীয় কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি বলে জানা গিয়েছে।
First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.