সদর শহরে যানজট সমস্যা এড়াতে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার উদ্যোগ নিয়েছিল মেদিনীপুর মহকুমা প্রশাসন। তৈরি হয়েছিল ট্রাফিক সিগন্যাল। শহরের কেরানিতলা ও এলআইসি মোড়ে সিগন্যাল বসানোও হয়। পরে আরও তিনটি এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করার প্রস্তাব ছিল। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল। কিন্ত কোথায় কী! অন্যত্র চালু হওয়া দূর্ অস্ত, শহরের দু’টি এলাকার ট্রাফিক সিগন্যালও দীর্ঘ দিন ধরে অচল। ফলে নিত্য যানজটে নাজেহাল হচ্ছেন শহরবাসী। যাঁরা কাজ হাতে নিয়ে জেলা সদরে আসছেন, দুর্ভোগে পড়ছেন তাঁরাও। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি দেখে জরুরি বৈঠক ডাকলেন সদরের মহকুমাশাসক সুরজিৎ রায়। বৈঠকে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি নিয়েই আলোচনা হবে। ১৬ জুনের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা বিভাগীয় আধিকারিকদের। মহকুমাশাসক বলেন, “শহরের বুকে যানজট সমস্যা কী ভাবে এড়ানো যায়, সে নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা নিয়েও কথা হবে।” |
পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুর। শহর দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে একের পর এক বহুতল। শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থা সে ভাবে না-থাকার ফলে পথচলতি মানুষের সমস্যা বাড়ছে। ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হলে সহজেই যানজট এড়নো যেতে পারে বলে মনে করেছিলেন শহরবাসী। এমন ভাবনা থেকেই শহরের বুকে সিগন্যাল চালু হয়। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজটও তেমন হত না। কিন্তু ক’মাস ঘুরতেই অচল হয়ে পড়ে সিগন্যাল। ফের দুর্ভোগের মুখোমুখি হন সাধারণ মানুষ। রাস্তা দখল করে অবৈধ নির্মাণের ফলেও যানজট সমস্যা বেড়েছে। ২০০৭ সালে কেরানিতলায় ট্রাফিক সিগন্যাল পরিষেবা চালু হয়। দু’বছরের মাথায় ২০০৯ সালে এলআইসি মোড়েও সিগন্যাল চালু হয় (আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশ্য নয়)। কিন্তু পরে দু’টি সিগন্যালই অচল হয়ে পড়ে। সদর শহরে যানজট সমস্যা বাড়তে থাকায় গত বছরের ৭ জুন মহকুমাশাসকের উদ্যোগে এক বৈঠক হয়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পুরসভা, পুলিশ--সব পক্ষই এ নিয়ে একমত হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত শহরের মধ্যে লরি ঢুকতে পারবে না। জেলা কালেক্টরেট সংলগ্ন এলআইসি মোড়ের সিগন্যাল ১৫ দিনের মধ্যে চালু করা হবে। কিন্তু এই সব সিদ্ধান্তই খাতায়-কলমেই থেকে গিয়েছে। ‘অচল’ ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হয়নি, পাশাপাশি যাবতীয় নির্দেশ উড়িয়ে শহরের মধ্যে অবাধে লরি ঢোকাও বন্ধ হয়নি।
শহরের ধর্মা থেকে গোলকুঁয়াচক, মোহনপুর থেকে নতুনবাজার, মহাতাবপুর, জজকোর্ট রোড হয়ে কেরানিতলা, আবাস থেকে এলআইসি, এলআইসি থেকে কালেক্টরেট মোড় হয়ে কেরানিতলা, গোলকুঁয়াচক থেকে কলেজ মোড় হয়ে এলআইসি প্রভৃতি রাস্তাগুলি খুবই গুরুত্বপূণর্র্। রাস্তাগুলির আশপাশে স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে। ফলে বেলা ৯টার পর থেকেই এই সব রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “মেদিনীপুর সদর শহর। ফলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই বহু মানুষ এখানে আসেন। ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে সমস্যা তো হবেই। শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না। তা কার্যকরও করতে হবে।”
শহরে যানজট সমস্যা যে রয়েছে, তা মেনেই মহকুমাশাসক বলেন, “সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৬ তারিখের বৈঠকেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল ফের চালু করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” বৈঠক আগেও হয়েছে। এ বারও হবে। কিন্তু পথচলতি মানুষের দুর্ভোগ কমবে তো? এ প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়। |