সম্পাদকীয় ২...
নিষেধাজ্ঞা কেন
ত্তর-পূর্ব ভারতের প্রান্তীয় রাজ্য মিজোরামে মিজো সমাজ এক অদ্ভূত সমস্যার সম্মুখীন। সেখানে মদ্যপানের উপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ও বিপক্ষে জনমত খাড়াখাড়ি দ্বিধাবিভক্ত হইয়া গিয়াছে। নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রবীণ ও বিদ্বৎ সমাজ একজোট, অন্য দিকে বাকিরা নিষেধাজ্ঞা রদের পক্ষে। এই অবস্থায় একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ সরকার মদ্য নিবারণ নীতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়িয়াছে। সমস্যাটি আপাতদৃষ্টিতে অকিঞ্চিৎকর মনে হইলেও মিজোরামের মতো খ্রিস্টান-অধ্যুষিত, পর্বতসঙ্কুল, শীতপ্রধান ও একশো শতাংশ সাক্ষরের রাজ্যে নিতান্ত উপেক্ষণীয় নয়। ইংরাজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রভাবিত মিজো সমাজকে মধ্য ভারতের প্রকৃতিপূজক জনজাতীয় সমাজের সহিত মিলাইয়া ফেলিলে চলিবে না। মদ্য পানের অভ্যাসের নিরিখেও এই সমাজকে গুজরাতের গাঁধীবাদী খাদি-উৎপাদকদের সহিত একাসনে বসানো উচিত হইবে না।
খ্রিস্টান-অধ্যুষিত বলিয়াই মিজো সমাজে গির্জা ও তাহার পাদ্রিদের প্রভাব যথেষ্ট। প্রধানত এই পাদ্রিদের চাপেই সরকার সেখানে ১৯৯৭ সালে মদ্য পান নিষিদ্ধ করে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার পরিণাম সর্বত্রই যাহা হইয়া থাকে, মিজোরামে তাহার কোনও ব্যত্যয় হয় নাই। রাজ্যের সর্বত্রই আনাচে-কানাচে মদ বিক্রয় চলিতে থাকে। জনসাধারণও সুরার নেশা হইতে বঞ্চিত থাকেন না। কেবল মাঝখান হইতে দুইটি বিষয় ঘটিতে থাকে। এক, চোরাপথে মদের কেনাবেচা অব্যাহত থাকায় সরকার ইহার উৎপাদন ও বিক্রয় বাবদ প্রাপ্য বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হইতে বঞ্চিত হইতে থাকে। দুই, চোরা পথে আসা-যাওয়ার কারণেই সামগ্রীটির গুণমান অপরীক্ষিত থাকিয়া যায় এবং বিষাক্ত মদও অসাধু ব্যবসায়ীরা পাচার করিতে থাকে, যাহার কারণে বহু মানুষ অসুস্থ হইতে থাকেন। এই সব কারণেই মদ্যপানের উপর নিষেধাজ্ঞা রদ করার দাবি নূতন করিয়া লুসাই পাহাড়ে ধ্বনিত হইতেছে।
এই দাবি শিরোধার্য করাই সরকারের কর্তব্য হইবে। মদ্যপান ও তজ্জনিত নেশা যাহাতে সমাজের ক্ষতিসাধন করিতে না পারে, সে জন্য নিশ্চয় কিছু বিধি প্রণয়ন সম্ভব। যেমন প্রকাশ্য জনস্থানে মদ্যপান চলিবে না কিংবা নেশা করিয়া অপরের অসুবিধা সৃষ্টি করা যাইবে না, ইত্যাদি। কিন্তু তাহা একেবারে নিষিদ্ধ করা ব্যক্তির স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল। ব্যক্তির জীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নাগরিকরা মানিয়া লইতে পারেন না। রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দাবির কাছে আত্মসমর্পণের যুক্তিও দিতে পারে না। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং মিজোরাম সেই রাষ্ট্রেরই একটি অঙ্গরাজ্য। সেখানে ধর্মগুরুদের দাবি বা প্রভাব মাথা পাতিয়া লওয়া আর কট্টরপন্থী মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া একই ব্যাপার। সকল ধর্মেই মৌলবাদীরা আছেন, থাকিবেন। তাঁহারা ধর্মাবলম্বীদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক আচরণ সব কিছুই শাস্ত্রীয় অনুশাসনের নিগঢ়ে বাঁধিয়া নিয়ন্ত্রণ করিতে চাহেন। প্রায়শ অন্য ধর্মাবলম্বীদের অভ্যাস ও জীবনচর্যাও নিয়ন্ত্রণ করিতে উদ্যত হন, যদি তাহারা সংখ্যালঘু হয়। একটি সেকুলার রাষ্ট্রের কোনও দায় নাই কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের প্রবণতাকে তোষণ করার। তাহার দায় সর্বতোভাবে নাগরিকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষিত রাখার। নির্বাচকমণ্ডলী অর্থাৎ জনগণেশই তাঁহাদের একমাত্র আরাধ্য।
Previous Item Editorial Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.