সম্পাদকীয় ১...
প্রশাসন কাহাকে বলে
প্রশাসনের একটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব: কোনও সংকটের সম্মুখে পড়িলে কী রকম পদক্ষেপ করা উচিত, দৃঢ় না নমনীয়, নরম না গরম, উত্তম রূপে ভাবিয়া সেই সিদ্ধান্ত লওয়া। কাজটি সহজ নহে। জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা নিশ্চয়ই এই মুহূর্তে উপলব্ধি করিতেছেন যে, সিদ্ধান্ত লইবার ব্যাপারে প্রশাসনের পরীক্ষায় তাঁহারা বেশি নম্বর পান নাই। যেখানে শক্ত পায়ে এগোনো উচিত, সেখানে ক্রমাগত তাঁহারা দুর্বলতা ও দ্বিধায় ডুবিয়া গিয়াছেন। স্বভাবতই বাঞ্ছিত ফল আসে নাই। রামদেবের অনশন-নাটিকার ক্ষেত্রেও তাঁহারা ঠিক একই রকম অনাবশ্যক দুর্বলতা দেখাইয়া পরিস্থিতি জটিল করিয়া তুলিয়াছিলেন। পরে, ভুল বুঝিয়া দৃঢ় হাতে লাগাম পরাইবার চেষ্টা করিয়াছেন, এবং দেখিয়াছেন, ফল প্রায় হাতে হাতে। প্রশাসন দৃঢ় হইতেই অনশন-বিক্ষোভ আন্দোলন ছত্রভঙ্গ, রামদেব ফলের রস খাইয়া উঠিয়া বসিয়াছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার সহচররা নিশ্চয়ই বুঝিয়াছেন তাঁহারা কোথায় ভুল করিয়াছিলেন। রামদেবের আগে আন্না হাজারের আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাঁহারা এক ভুল করিয়াছিলেন।
এবং ১৫ অগস্টের মধ্যে লোকপাল বিল চূড়ান্ত না করিলে আবার অনশনের যে হুমকি এখনও আন্না দিতেছেন, সেই ব্ল্যাকমেল-এর ফাঁদে পড়িলে নেতারা আবারও সেই এক ভুলই করিবেন। নাগরিক সমাজের দাবির প্রতি সম্মান রাখিয়া লোকপাল বিল-এর মতো একটি অত্যন্ত অনাবশ্যক প্রস্তাব লইয়া ইতিমধ্যেই ইউ পি এ সরকার অগ্রসর হইতেছে । কিন্তু ইহার পর সেই সংস্কার কী ভাবে, কখন, কোন পদ্ধতিতে সাধিত হইবে, তাহাও কি কোনও ব্যক্তিবিশেষ বা গোষ্ঠীবিশেষ বাহির হইতে ঠিক করিয়া দিবে? সংস্কারের পদ্ধতি নিশ্চিত করা একান্ত ভাবে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারেরই কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ভাবে ব্ল্যাকমেল করিয়া বিভিন্ন শাসন-সংস্কারে বাধ্য করা কোনও গণতান্ত্রিক দেশের দস্তুর হইতে পারে না। গণতন্ত্রের সুযোগে যাহাতে যথেচ্ছ ব্ল্যাকমেল না চলিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করাটা কিন্তু প্রশাসনেরই দায়িত্ব। গণতন্ত্র কাহাকে বলে, কাহাকে বলে না, দৃঢ় সীমারেখার সাহায্যে তাহা প্রতিষ্ঠা করা প্রশাসনেরই দায়। এই দায় ও দায়িত্ব সহজ না হইতে পারে, কিন্তু অবশ্যপালনীয়। এই প্রসঙ্গে স্বভাবতই আরও এক পক্ষের দায়িত্বের কথা আসিয়া যায়। তাহার নাম সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজ। যে কোনও গণতন্ত্রেই নাগরিক সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের মতো দেশে, যেখানে সাক্ষরতা ও সচেতনতা এখনও বিরাট বাধাপ্রাচীর, সেখানে নাগরিক সমাজের নির্মাণ ও ক্রমবর্ধন নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। কিন্তু সেই নাগরিক সমাজ যদি নিজের গুরুত্ব ও দায়িত্ব ঠিক ভাবে অনুধাবন না করিয়া অনশন প্রভৃতি ব্ল্যাকমেল-এর পথ ধরিয়া বসে, সরকারের কাজে জবরদস্তির চেষ্টা করে, তাহা সুসংবাদ নহে, অত্যন্ত দুঃসংবাদ। কেননা সেই চটজলদি জবরদস্তির পথ গণতান্ত্রিক সংবিধানের পথ নহে, এবং সাংবিধানিক পথ হইতে বিচ্যুত হওয়ার বিপদ গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ানক, তাহা খোদ গণতন্ত্রকেই অর্থহীন ও অকেজো করিয়া দিতে পারে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মনে রাখিতে হইবে, তাঁহারা জনগণের তরফে মত প্রকাশ ও বিনিময় করিতেছেন মাত্র, জনগণের জীবন নিয়ন্ত্রণ করিবার অধিকার পান নাই। তাঁহারা সামাজিক প্রতিনিধি। জনগণের রাজনৈতিক প্রতিনিধি কিন্তু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতারা। নেতাদের কাজ পছন্দ না হইলে পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁহাদের কর্মচ্যুত করিবার কাজটি কেবল নাগরিক সমাজের দায় নহে, সকল জনগণের দায়। গণতন্ত্রের এই মৌলিক পাঠটি না বুঝিলে, এবং প্রশাসন শক্ত হাতে তাহার নিজস্ব অধিকারের জায়গাটি রক্ষা না করিলে নাগরিক সমাজ নামক বস্তুটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের মতো দেশের পক্ষে বিপজ্জনক হইয়া বসিতে পারে।
First Page Editorial Next Item



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.