|
|
|
|
আন্নার বিরুদ্ধে আরও চড়া সুরে আক্রমণ কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সরকার ও কংগ্রেসের নেতারা তাঁকে আরএসএসের ‘মুখোশ’ বলায় কালই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখেছিলেন ক্ষুব্ধ আন্না হাজারে। সনিয়া এখনও জবাব দেননি। আর এর মধ্যেই আন্নার বিরুদ্ধে সমালোচনা আরও তীব্র করল কংগ্রেস। এ-ও জানিয়ে দিল, এই ধরনের ‘অ-নির্বাচিত স্বৈরাচারী শক্তি’ই সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে বিপদ!
সনিয়াকে লেখা চিঠিতে কিছু কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন আন্না। জবাবে আজ কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “আন্না ও সমর্থকদের মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। এক দিকে তাঁরা নিজেদের গাঁধীবাদী বলে দাবি করছেন, অন্য দিকে অত্যন্ত উগ্র ও হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। যা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁদের এই সংলাপ পর্দার পিছন থেকে অন্য কেউ লিখে দিচ্ছে।” এই মন্তব্যে বস্তুত আরএসএস-বিজেপিকেই বোঝাতে চেয়েছেন মণীশ। তাঁর কথায়, “সরকারের নেতাদের আন্না-সমর্থকেরা ‘চিটিংবাজ’, ‘ঠগ’ ইত্যাদি বলছেন! অথচ ভুলে যাচ্ছেন, সরকারের এই নেতারাই আন্না-সমর্থকদের নিয়ে লোকপাল বিলের খসড়া করতে সম্মত হয়েছিলেন। আর সেই কমিটিতে মতান্তর হওয়া মাত্রই তাঁরা বাইরে বেরিয়ে বিষোদ্গার করছেন! যার অর্থ তাঁরা যা বলবেন, তা-ই মানতে হবে। না হলেই অনশনে বসবেন! বার্তা এই যে, আমার পথ নইলে রাজপথ!” প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেস কেন আন্নাদের বিরুদ্ধে এত আক্রমণাত্মক হচ্ছে? দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এটা ঠিকই যে, শুরুতে আন্নাদের অনশন-আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার কিছুটা নত হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাঁদের অন্যায্য সব দাবি সরকারকে মানতে হবে। তাতে বরং ভবিষ্যতে সরকার ও কংগ্রেসের সঙ্কট বাড়বে। আন্নাদের মতো আরও দশটি গোষ্ঠী নিজেদের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বলে দাবি করে গোল পাকাবেন।” মণীশ কটাক্ষ করে বলেন, “নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আবার কী বস্তু? ওঁদের কে প্রতিনিধি বানিয়েছে? ১২০ কোটি মানুষের দেশের প্রতিনিধি পাঁচ জন! বরং নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শুরু করে সাংসদরাই গণতন্ত্রে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি।” সরকার ও কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, আসলে আন্না-রামদেবরাই কংগ্রেসকে প্রতি-আক্রমণের পথ করে দিয়েছেন। তাঁরা যত অন্যায্য কথা বলবেন, ততই কংগ্রেসের সুবিধা। এই কৌশল আঁচ করেই আজ বিজেপি আন্না সমর্থকদের বার্তা দিয়েছে, তাঁরা যেন কংগ্রেসের প্ররোচনায় পা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।
আন্নাদের সঙ্গে চাপান-উতোরেরই মধ্যেই কাল কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ জানায়, লোকপাল বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদকে রাখার পক্ষে তিনি। দিগ্বিজয়ের এই মতকে সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে মতান্তর বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল। কারণ সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছিল, লোকপাল বিলের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ শেষ পর্যন্ত রাখা হবে না। দিগ্বিজয় বলেন, “ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছি মাত্র।” পরে কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, দল ও সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে মতান্তর নেই। কারণ ক’দিন আগেই খসড়া কমিটির সদস্য তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ লোকপালের আওতায় রাখা হবে না, সরকার এমন বলেনি। বরং এই মতও রয়েছে যে কিছু বিধিনিষেধ সাপেক্ষে তা রাখা যেতেই পারে। এ ব্যাপারে সরকার চাইবে রাজনৈতিক সর্বসম্মতি গড়ে তুলতে।” দিগ্বিজয় বা তাঁর দল যা-ই ব্যাখ্যা দিন, লোকপাল নিয়ে বিজেপি অস্ত্র পেয়েছে। দলের মুখপাত্র রাজীব প্রতাপ রুডির কথায়, “লোকপালের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকবে কি না, তা নিয়ে সরকার ও কংগ্রেসের মতান্তর শুরু হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অবস্থান জানান।” অক্সিজেন পেয়েছেন আন্নার সমর্থকরাও। আন্না-ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আমরা প্রশ্ন তুলতে চাইছি। কাল যদি মধু কোড়া প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে কি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না!” সংসদের বাদল অধিবেশনে পেশ হওয়ার কথা থাকলেও লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির কাজ বাকি। অথচ এ নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল তরজা। আপাতত বুধবার যৌথ খসড়া কমিটির পরবর্তী বৈঠকের অপেক্ষা। |
|
|
|
|
|