|
|
|
|
দিনের বেলা খেতমজুরি, রাতে পড়েই সফল জয়ন্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা• পূর্বস্থলী |
সংসার চালাতে দিনভর মাঠে খেত মজুরের কাজ করতে হয়। প্রতি দিন সকালে যখন সহপাঠীরা বই খাতা নিয়ে পড়তে বসত, তখন পারুলিয়ার জয়ন্ত সাহা ব্যস্ত থাকতেন মাঠের কাজে। সেই সকালগুলো পড়ার বদলে মাটিতে কোদাল চালিয়েই কেটে যেত তাঁর। সারা দিনের হাড় ভাঙা খাটুনির পরের রাতটুকুই ছিল তাঁর একমাত্র পড়ার সময়।
জয়ন্ত এ বছর স্থানীয় পারুলিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ফল প্রকাশের পরে জানা যায় কলা বিভাগে ৩৭৯ পেয়েছে সে। পূর্বস্থলীর পারুলিয়ার ইটভাটা পাড়ার বাসিন্দা জয়ন্ত তাঁর পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী সদস্য। বাবা জয়দেব সাহা বয়সের ভারে প্রতি দিন মাঠের কাজে যেতে পারেন না। ফলে, বাধ্য হয়েই নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই খেত মজুরের কাজ করে সংসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জয়ন্ত। তাঁর ভাই বর্তমানে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাঁর মা বাড়ির সব কাজ সামলে শালপাতার ঠোঙা তৈরি করেন। পূর্বস্থলী বাড়ি বলতে অবশ্য কোনও রকমে দাঁড়িয়ে থাকা চার খানা মাটির দেওয়াল। মাথার উপরে খড়ের চাল। সেই ছাউনিতেও রয়েছে বড় বড় ছিদ্র। বিদ্যুৎ সংযোগ তো দুরের কথা। বাড়ির পাশেই থাকেন জয়ন্তর কাকা বলদেব সাহা। তিনি পেশায় মোট বাহক। বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য সুলভ বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে তাঁর বাড়িতে। কাকার সহযোগিতাতেই সারা দিনের পরিশ্রমের পরে রাত জেগে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছে সে।
জয়ন্ত বললেন, “দিনের অনেকটা সময়ই মাঠে-ঘাটে কাজ করে কেটে যেত। ফলে পড়ার জন্য রাতটুকুই ভরসা ছিল। রাত জাগা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না আমার।” চতুর্থ শ্রেণি থেকেই স্থানীয় বিনয় সাহা আমার গৃহশিক্ষক। তিনি লেখাপড়ায় আমাকে সাহায্য করেছেন। সঙ্গে ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী এবং মাস্টারমশাই মদনমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই আমার লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ বহন করেছেন। ওঁরা দু’জন না থাকলে আমি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে পারতাম না।”
উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও ভবিষ্যতের বিষয়ে এখনও অনিশ্চিত জয়ন্ত। এর পরে কী ভাবে চলবে তার পড়াশোনা? এখন এই একটাই চিন্তা তাঁর পরিবারের। মা, মালা সাহা বলেন, “আমাদের বংশে ওই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল। আমরা চাই ও আরও পড়ুক। কিন্তু সেই পড়াশোনার স্বপ্ন কী ভাবে সত্যি হবে জানি না।” বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
জয়ন্ত বললেন, “আমি ভূগোল নিয়ে পড়তে চাই। কৃষ্ণনগর আর কালনা কলেজ থেকে ফর্ম তুলেছি। তবে জানি না সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে পারব কি না।”
তাঁর দীর্ঘ দিনের শিক্ষক বিনয়বাবু বলেন, “ভূগোল পড়তে অনেক খরচ। কে জোগাবে? আমার বিদ্যায় তো আর কুলোবে না।” অন্য দিকে, কাষ্ঠশালী স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা জয়ন্তর প্রতিবেশী মদনমোহনবাবু বলেন, “আমরা তো রয়েছি। তবে কলেজে গিয়ে পড়াশোনা করলে বা অন্য জায়গায় গিয়ে পড়লে ওর উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কী ভাবে ওদের সংসার চলবে? পড়াশোনার খরচই বা কী ভাবে উঠবে? কিছুই বুঝতে পারছি না।” |
|
|
|
|
|