দীর্ঘ দিন নেই হেরিটেজ কমিটিই
মুঘল আমলের সমাধিক্ষেত্রের ফলক বাঁচালেন সাধারণ মানুষ
স্থানীয় মানুষের তৎপরতায় রক্ষা পেল বর্ধমান শহরের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের তিনটি ফলকনামা। সোমবার পুলিশের সহযোগিতায় কালনা থেকে আসা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কর্মীরা এই ফলকনামা গুলি নিয়ে গিয়েছেন। বর্ধমান থানার পুলিশ জানিয়েছে, প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র বা পীরবাহারামের দেওয়াল থেকে ওই ফলকনামা গুলি খসে পড়েছিল।
জানা গিয়েছে, বর্ধমানের পুরাতন চকের এই পীরবাহারাম সমাধিক্ষেত্র মুঘল আমলের। সিংহল যাত্রার পথে পীর বাহারাম সাক্কা এই জনপদে আসেন। মুঘল সম্রাট আকবর এই সাধককে খুবই মান্য করতেন। এই সাধক বর্ধমানেই দেহত্যাগ করেন। তার পরে তাঁর স্মৃতিতে এখানে সৌধ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চারটি মৌজাও দান করা হয় বলে স্থানীয় ইতিহাস গবেষকদের একাংশ দাবি করেছেন।
এই সমাধিক্ষেত্রেই সমাহিত আছেন বর্ধমানের একদা শাসক শের আফগান ও সম্রাট জাহাঙ্গীরের ধাত্রীপুত্র, তথা বাংলার শাসক কুতুবউদ্দিন কোকা। শের আফগানের ঘরণী মেহেরউন্নেসা-কে (পরে ভারতসম্রাজ্ঞী নুরজাহান) জাহাঙ্গীরের আদেশে দিল্লিতে ধরে নিয়ে যেতে আসেন কুতুবউদ্দিন। ১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে শহরের সাধনপুর এলাকায় শের আফগান ও কুতুবউদ্দিনের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল বলে জানাচ্ছে স্থানীয় ইতিহাস। তাতে দু’জনেরই মৃত্যু হয়।
পুরনো এই সমাধিক্ষেত্রটি শহরে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণস্থল। কিন্তু এই সমাধিক্ষেত্রের প্রাচীন
ফাইল চিত্র।
ফলকনামাগুলির দিকে পুরসভার তেমন নজর নেই, বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সোমবারের ঘটনা সেই দিকেই ইঙ্গিত করে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই সমাধিক্ষেত্রের তিনটি পুরনো ফলকনামা খসে পড়ে। তিনটিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দা হাসান খান পুলিশে খবর দেন। হাসান খান বলেন, “আমার আশঙ্কা ছিল যে ও গুলি বেশি দিন ধরে পড়ে থাকলে চুরি হয়ে যেতে পারে। তাই তখনই পুলিশকে জানাই।”
পুলিশ এই খবর জানায় আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা জোনকে। সেখান থেকে খবর যায় কলনায় সোসাইটির শাখায়। সেখান থেকে চার কর্মী সোমবার বর্ধমানে এসে ফলকনামাগুলি নিয়ে গিয়েছেন।
সোসাইটির কর্মী সুশীল ঘরামি জানিয়েছেন, যথেষ্ট প্রাচীন তিনটি ফলকনামাই শ্বেত পাথরের তৈরি। একটি দু’ফুট লম্বা, দেড় ফুট চওড়া। দ্বিতীয়টির একটি কোনা ভাঙা। সেটি দেড়ফুট লম্বা, একফুট চওড়া। তৃতীয় ফলকনামাটি দু’টুকরো হয়ে ভেঙে গিয়েছে। সেটিও দেড় ফুট লম্বা, এক ফুট চওড়া। প্রতিটিতেই আরবি বা ফারসি ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই শহরের হেরিটেজ কমিটি গঠিত হয়নি। তাই প্রাচীন প্রত্নবস্তুগুলির দিকে সব সময় নজর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
একদা হেরিটেজ কমিটির সদস্য ছিলেন নিশীথ কুমার দত্ত বলেছেন, “প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন এই সমাধিক্ষেত্রের ফলকগুলিও ইতিহাস গবেষকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় মানুষ যে সেগুলি রক্ষা করেছেন, তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
Previous Story Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.