বেথ এ পেন-এর প্রদর্শনী
বাংলার মুখ
লকাতায় এসে মার্কিন সি জি, মানে কনসাল জেনারেলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন এক ভরা শ্রাবণে, ১ অগস্ট ২০০৮। এ বার যাওয়ার বেলায় যদি পিছু ডাকে এই শহর, তিনি, বেথ এ পেন, কিছু ছবি দিয়ে যেতেই পারেন, স্মারক হিসেবে। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি জানাচ্ছে, ঘোরাঘুরি আর রান্নাবান্নার বাইরে ভালবাসেন কায়াকিং, হাইকিং (হায়, এ শহরে আর সি জি-র তেমন সুযোগ কোথায়?), তাই আরও একটি শখ, অর্থাৎ ফোটোগ্রাফি নিয়েই কাটল তাঁর সময়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে। অনেক কাল আগে, স্কুল এবং কলেজ বেলাতেই হাতে উঠেছিল ক্যামেরা। তারপর পেশার দাবি, জীবনের ঝোড়ো গতি, শেষে অশান্ত ইরাকে কাজকর্ম কেড়ে নিল মনোযোগ। বিধ্বস্ত ইরাকের অভিজ্ঞতা যখন তাঁকে ট্রমা-য় এনে ফেলেছে, তখনই ফের হাতে উঠল ক্যামেরা। আরোগ্যের মতো। বেথ এ পেন যখন কলকাতায় এলেন, তাঁর শাটারের ক্লিক চালু থাকল নিয়মিত। সেই সব ক্ষণমুহূর্তের ফসল চল্লিশটি আলোকচিত্র নিয়েই ৮ হো চি মিন সরণির হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টার-এ শুরু হয়েছে তাঁর প্রদর্শনী, ‘ফেসেস অব বেঙ্গল’।
চলবে ২৪ জুন পর্যন্ত (১২-৭টা), রবিবার আর জাতীয় ছুটির দিন বাদ দিয়ে। মহানগরীর পথে পথে ভোরবেলায় ঘুরে বেড়ান তিনি, সদ্য ঘুম ভাঙা শহর এই বিদেশিনিকে চিনতে পারে কি না, বলা মুশকিল। কিন্তু, তিনি যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন এই মাটির সঙ্গে, ক্যামেরা-চোখে তো বটেই, স্ব-চক্ষেও, এই প্রদর্শনীর ছবিগুলি তার প্রমাণ। শুধুই সাবজেক্ট হিসেবে ভাবলে (আলোক)চিত্রিত বিষয়ের এত কাছে যাওয়া কঠিন। বেথ এ পেন-এর ছবি সেই কাঁটাতার ভেঙে ছুঁতে চেয়েছে ক্যামেরার সামনে থাকা মুখগুলিকে, কম্পোজিশনে রঙও এসেছে আশ্চর্য ভাবে। বিভিন্ন মুখের ছবি তুলেছেন পেন, মুখের সঙ্গে ধরা দিয়েছে মুহূর্ত। সেই অর্থে, এই সব ছবি নিছকই ব্যক্তিবিশেষের নয়, তাদের মধ্যে ধরা দিয়েছে স্থানেরও অবয়ব। কিংবা, সময়ের আপাত-বিরোধী সব প্রান্ত। এক আকারে সেই দুই আভাসকে খুঁজে নিতে পারলেই দর্শকের পক্ষে এই পরিক্রমা সার্থক হবে। সঙ্গের ছবি প্রদর্শনী থেকে।

মল্লিকা-স্মরণ
মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী হবে?... গৃহশ্রমে মজুরি হয় না বলে/ মেয়েগুলি শুধু/ ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত/ রেঁধে দেবে... এমন প্রশ্ন নিরন্তর তুলতেন যে-কবি, সেই মল্লিকা সেনগুপ্ত-র (১৯৬০-২০১১) অকাল প্রয়াণে বিষণ্ণ এখন বাঙালি। স্মরণের ভিতর দিয়ে তাঁকে, কিংবা তাঁর সাহিত্য-সমাজতত্ত্বে তাই ফিরে যাওয়ার আয়োজন। ১০ জুন সন্ধেয় কবির বাসভূমি সিরিটি-র পৌষালি আবাসনে স্মরণানুষ্ঠান হল: ‘আমি সিন্ধুর মেয়ে’ (সহায়তা সপ্তর্ষি প্রকাশন)। ১১ জুন বিকেলে যাদবপুরে ওয়ার্ল্ডভিউ বুকস্টোর-এ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ‘একশো ফুল’ পত্রিকা। ১৬ জুন বাংলা আকাদেমি-তে সন্ধে ৬টায় গান-কবিতা-কথায় স্মরণ করা হবে তাঁকে: ‘শুধুই মল্লিকা’, নিবেদনে ব্যঞ্জনা।

ফলাহারী বাবা
হাতছানি দিয়েছিল শুশুনিয়া পাহাড়, আর অনুপ্রেরণা উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ভ্রমণকাহিনি। সব মিলিয়েই পাহাড়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে যুবক কালিদাস চক্রবর্তীর। জন্ম নাটোরে। সাতচল্লিশে দাদুর সঙ্গে এ পারে এসে ভর্তি হন বনগাঁ হাইস্কুলে। পাঠশেষে অধ্যাপনার সঙ্গে চলতে থাকে হিমালয়দর্শন, সেই সঙ্গে লেখালেখি। নিজেই গড়ে তোলেন ট্রেকস অ্যান্ড ট্যুরস নামের প্রকাশনা সংস্থা। ১৯৯০-এ প্রকাশিত হয় পঞ্চকেদার পরিক্রমা। তার পর একে একে রূপময়ী পিণ্ডারী, দেবভূমি কেদারতাল, অমৃতময় অমরনাথ। এখনও ঘোরেন গাড়োয়াল কুমায়ুন থেকে কাশ্মীর-সিকিম-নেপালে, ট্রেকিং-এর অজানা পথে। ১৯৯৪-এ অবসরের পর উত্তরাখণ্ডে চলে যান পাকাপাকি ভাবে। স্থানীয় মানুষ ওঁকে ডাকেন ‘ফলাহারী বাবা’। সেখানে আশি ছুঁই ছুঁই কালিদাসবাবু গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি তীর্থাবাস। তবে মাঝে মাঝে কলকাতায় ঘুরে যান। ওঁর বই এখন ১৮টি। হিমালয় দর্শন বেরিয়েছে চার খণ্ডে এবং হিমালয় মন্থন তিনটি ভাষায়। ওঁর কলম এখনও অক্লান্ত।
ছবি: গোপী দে সরকার


গানের ভাণ্ডারি
তাঁকে বলা যায় নজরুলের গানের ভাণ্ডারি। নানা বিকৃতি আর ভুল তথ্যে ফুলেফেঁপে উঠেছে যে আপাত ‘নজরুলগীতিসমগ্র’, প্রাণপণে তা থেকে জঞ্জাল সরানোর সাধনায় ব্রতী ছিলেন ব্রহ্মমোহন ঠাকুর। জন্ম ১৯৪৫-এ, বর্ধমানে। কর্মজীবনে প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন নানা স্তরে। পাশাপাশি অব্যাহত ছিল নজরুলচর্চা। ১৯৯২ থেকে ২০০৪ এই সময়পর্বে নজরুল-সংক্রান্ত সতেরোটি বই লিখেছেন, সম্পাদনা করেছেন। নজরুল-চর্চায় নিরলস সেই মানুষটির নানা লেখা ও তাঁকে নিয়ে নানা জনের লেখা নিয়ে ‘তাঁতঘর একুশ শতক’ প্রকাশ করেছে ব্রহ্মমোহন ঠাকুর সংখ্যা। আছে বেশ কিছু ছবিও।

গঙ্গা বাঁচাতে
দূষণে ক্লিষ্ট গঙ্গার জল এখন স্নানেরও অযোগ্য। তবু গঙ্গা এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে সমান পবিত্র, পতিতোদ্ধারিণী, সর্বপাপহরা। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু গঙ্গায় নগর ধোয়া জল, শিল্প-বর্জ্য, জঞ্জাল ফেলা চলছেই। তবে পাশাপাশি ‘নির্মল গঙ্গা অভিযান’-এর মতো সচেতনতা বিস্তারের উদ্যোগও শুরু হয়েছে। তেমনই এক অনন্য উদ্যোগ লোকসখা প্রকাশনার গঙ্গা-দূষণ নিয়ে ছড়ার সংকলন গঙ্গা বাঁচায় আমরা বাঁচি। সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় সেনের ‘মনে হয়েছে, ছড়া সহজে সকলের মনোগ্রাহী হতে পারবে।’ সঙ্গে পাতায় পাতায় গঙ্গা নিয়ে অসংখ্য প্রাসঙ্গিক তথ্য। কেবল গঙ্গায় নয়, জলের দূষণ পৌঁছেছে ভূতলেও। আমরা এতকাল ভয়াবহ আর্সেনিক দূষণের কথা জেনেছি। এখন মাটির নীচের জলে ফ্লোরাইডের কালান্তক দূষণ। মণীন্দ্রনারায়ণ মজুমদার তাঁর তথ্য সমৃদ্ধ ফ্লোরাইড বিষণ পুস্তিকায় বলেছেন, ‘পানীয় জল, খাদ্যাদি থেকে আসা ফ্লোরাইড আর্সেনিকের মতোই ভয়ঙ্কর বিষ’। দিশা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রকাশ করেছে দরকারি পুস্তিকাটি।

অর্চির জন্য
পৃথিবীর উপর একরাশ অভিমানে নিজেকে দূরে নিয়ে গিয়েছে অর্চি। শিল্পী পিতা অসিত পালের পাশে সে দিন দাঁড়িয়েছিলেন এ শহরের ভাস্কররা। আয়োজিত হয়েছিল এক অন্য মাত্রার প্রদর্শনী। দেখতে দেখতে বছর পেরিয়ে গেল। ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে অর্চি ফাউন্ডেশন। নবীন-প্রবীণ প্রায় একশো শিল্পী দিয়েছেন তাঁদের শিল্পকর্ম। বিক্রির অর্থে চলবে ফাউন্ডেশনের কাজ। মেধাবী, অথচ দুঃস্থ শিল্প-শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেবে এরা, বিশেষ করে মেয়েদের। থাকবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ, প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য। ইচ্ছে আছে নিজস্ব একটি স্টুডিয়ো গড়ে তোলার। আপাতত প্রথম বার্ষিক শিল্প প্রদর্শনী, শুরু হচ্ছে ১৬ জুন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ, চলবে ২২ পর্যন্ত, ৩-৮টা। সূচনায় শুভাপ্রসন্ন।

মুক্ত বাতাস
হাফ প্যান্টের আগের যোগাযোগ, বা একসঙ্গে এ-মাঠ ও-মাঠ খেলে বেড়ানোর সঙ্গী। হয়তো বা স্কুলের বেঞ্চি উল্টে দেওয়ার সময় থেকে। মোটামুটি চোদ্দো জনের দল, বউ-বাচ্চা নিয়ে এখন প্রায় পঞ্চাশ জনের পরিবার। নিবাস হাওড়া শিবপুর। মূল কেন্দ্র রায়চৌধুরী বাড়ি। কেউ খুবই নিকট আত্মীয় অথবা শুধুই বন্ধু। এরা সকলেই প্রায় বটকৃষ্ণ পাল ইনস্টিটিউশনের ছাত্র। কৈশোর গিয়েছে, গিয়েছে যৌবন, তবু যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি। বরঞ্চ জোরদার হয়েছে। কার্যক্রম সপ্তাহে দু’দিন চুটিয়ে আড্ডা, বছরে একবার অন্তত দল বেঁধে বেরনো। এ ছাড়াও সপরিবার দিঘা কিংবা পুরী, বা এর-ওর বাড়িতে ফিস্ট। সম্প্রতি এ-দলটি প্রকাশ করল তাদের যূথবদ্ধতার চিহ্ন: ক্যালেন্ডার ‘মুক্ত বাতাস’। তাতে রঙিন ছবিতে এ-দলটিরই সমস্ত চরিত্র।

ছোটদের ছবি
রাহুল দেবশ্রী অজয় সন্তোষী সুরয অমিত প্রান্তিক ছোট ছেলেমেয়ে ছ’জনের দল, ফিল্ম ইউনিট। ছোট ছোট পাঁচটি ছবি বানিয়েছে, কোনওটা এক-দেড় মিনিট, কোনওটা দুই, কোনওটা আবার তেরো মিনিটের ওপর। সংলাপ-এর তত্ত্বাবধানে ইউনিসেফ-এর জন্যে তৈরি এ সব ছবির বিষয় কিন্তু গুরুগম্ভীর: মেয়ে পাচার, নাবালিকা পড়ুয়ার ওপর বিয়ের চাপ, এডস সচেতনতা ইত্যাদি। ছবিগুলি দেখা যাবে ১৭ জুন পূর্বশ্রী অডিটোরিয়ামে একাদশ আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর দিন। উদ্বোধনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। চলবে ২১ জুন অবধি। এ-উৎসব নন্দন-২-এ চলবে ৪-৮ জুলাই, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় চলবে ৩১ অগস্ট পর্যন্ত। সিনে সেন্ট্রালের এই উদ্যোগে সহায়ক পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র ও নন্দন।

লোক-ভাস্কর্য
বর্ধমানের শিল্পী প্রভাত মাঝি কাজ করেন লৌকিক ভাবনা ও শৈলীতে। তাঁর প্রত্যেকটি কাজের পিছনে তাই খুঁজে পাওয়া যায় এক নিটোল গল্প। দেবী, বন্ধুত্ব (সঙ্গের ছবি), প্রতীক্ষা, সুখ এমন শিরোনামে ‘লাইফ’ শীর্ষক ভাস্কর্য-প্রদর্শনী এখন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ। গোটা একুশ ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যের এই প্রদর্শনী ১৫ পর্যন্ত, ৩-৮টা।

চারুকৃতি
আর্ট ফোটোগ্রাফিতে অনুপ পাল এখন যথেষ্ট পরিচিত শিল্পী। ওঁর কাজ দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছে। অনুপ এ বারে কাজ করেছেন নারী ও প্রকৃতি নিয়ে। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে ছবিগুলি বাছাই করে দিয়েছিলেন বেণু সেন নিজে। তাঁরই স্মৃতিতে অনুপের ২৫টি আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ‘চারুকৃতি’ শীর্ষকে, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ। চলবে ১৫ পর্যন্ত, ৩-৮টা। অন্য দিকে পেশায় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সজল ঘোষ নেশায় আলোকচিত্রী বা স্থিরচিত্রগ্রাহক। ঝাড়খণ্ডের নিসর্গ সজল-এর মনে ফোটোগ্রাফির নেশা ধরিয়ে দেয়। ছাব্বিশ বছর ধরে লেন্সবন্দি করেছেন মানবজীবনের নানান মুহূর্ত ও নিসর্গদৃশ্য। ১৫-১৯ জুন সজলের একগুচ্ছ স্থিরচিত্র নিয়ে প্রদর্শনী বিড়লা অ্যাকাডেমিতে: ‘এক্সপ্রেশনস অন ক্যানভাস’ (৩-৮টা)। ১৪ জুন সন্ধে ৬টায় উদ্বোধন। সঙ্গে তারই একটি ছবি।

হাসির গান
হাস্যরস চর্চায় রবীন্দ্রনাথ কম উৎসাহী ছিলেন না। জোড়াসাঁকোয় নজরুল একবার কবিকে শুনিয়েছিলেন ওঁর ‘আমায় ক্ষম হে ক্ষম’ গানটির প্যারডি। রণজিৎ রায়ের অসামান্য গায়কিতে ‘ওহে শ্যাম হে শ্যাম/ তুমি নাম হে নাম/ কদম্বডাল ছাইড়্যা নাম/ আহা দুপুর রোদে বৃথাই ঘাম, ব্যস্ত রাধা কাজে’ শুনে আহ্লাদিত রবীন্দ্রনাথ আবার শুনতে চেয়েছিলেন সে গান। কবির বেশ কিছু হাসির গান রয়েছে চিরকুমার সভা, বিনি পয়সার ভোজ, বিবাহ উৎসব, বা তাসের দেশ-এ। এ সময়ের গায়ক অলক রায়চৌধুরী ধরে রেখেছেন হাসির গানের সেই পরম্পরা। আঠাশ বছর ধরে চলছে তাঁর সংগীতাশ্রম ‘রবিছন্দম’। এখানকার শিক্ষার্থী স্বাগতা-আশিসদের নিয়ে তিনি গড়েছেন গানের দল। টুকরো কথকতার সঙ্গে ওরা পরিবেশন করছে হাসির গান। ‘রবীন্দ্রনাথের হাসির গান’ ও ‘ব্যঙ্গবাণীর রবীন্দ্রগীতি’ শীর্ষকে দু’খানি অডিয়ো সিডি প্রকাশ পেয়েছে অলকবাবুর কণ্ঠে। এ বার পুজোয় ডাক এসেছে, কবির হাসির গানের ধারা বইবে সুদূর সাগরপারে।

সহজিয়া
বাংলার লোকায়ত সংগীতের সম্পদ নিয়ে দীর্ঘদিনের চর্চা শিল্পী দেব চৌধুরির। এর ফসল হিসেবে গড়ে উঠেছে সহজিয়া। দুই বাংলা ঘুরে ওরা সংগ্রহ করেছে বাউল, ফকির, দরবেশি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া বা ঝুমুর গান। দীর্ঘ পথচলায় সঙ্গী হয়েছে বাপ্পা, শরদিন্দু, কুশল, রাজদীপ, সুসেন, টুবাই বা ক্ষুদিরামের মতো বন্ধুরা। শুধু বাংলায় নয়, ওরা খুঁজে বেড়িয়েছে স্পেন, রাশিয়া বা লাতিন আমেরিকায় প্রচলিত ফোকের সম্পদকেও। ফলে সহজিয়া এখন আক্ষরিক অর্থে আন্তর্জাতিক। লালন, ভবা পাগলা, রসিদ উদ্দিন, বিজয় সরকারের সঙ্গে এখন বব ডিলান, পিট সিগার বা হ্যারি বেলাফন্টের যুগলবন্দি। এ বারে ওদের দরবেশি গানের কর্মশালা ১৪-১৫ জুন, সল্টলেকের পূর্বশ্রী সভাগৃহে। ১৬ জুন সন্ধেয় সহজিয়ার গান, থাকবেন কালাচাঁদ দরবেশ স্বয়ং। আয়োজক পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র।

কত অজানারে
পঞ্চাশের দশকের কলকাতা। সতেরো বছরের একটি তরুণ হেঁটে চলেছে ওল্ড পোস্ট অফিস স্ট্রিট ধরে। পৌঁছতে হবে হাইকোর্টে। না, কোনও মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারে নয়, কেরানি হিসেবে কাজে যোগ দিতে। কিন্তু বদলে গেল ভবিষ্যৎ। হাইকোর্টেই তরুণটির সঙ্গে পরিচয় হল শহরের শেষ ইংরেজ ব্যারিস্টারের। তার পরে দিনের কাজের ভিতরে বেজে উঠল অজানার বাঁশি। হাইকোর্টের সেই জীবনের গল্প, যার শুরুটা আসলে আদালত-চত্বরের বাইরে, লিখতে শুরু করলেন তরুণটি। ক্রমে হয়ে উঠল কত অজানারে। মণিশংকর মুখোপাধ্যায়ের শংকর হয়ে ওঠার শুরু হল। পঞ্চাশের দশকেই কত অজানারে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। শংকরের সেই কলকাতা-উপাখ্যান অনেকটা ট্রিলজি-র মতোই এর পরে বয়ে চলে চৌরঙ্গী ও সীমাবদ্ধ-এ। শেষের দুটি এর আগে অনূদিত হয়েছে ইংরেজিতে, চৌরঙ্গী ও দ্য মিডলম্যান নামে, অরুণাভ সিংহের অনুবাদে। প্রকাশ করেছিল পেঙ্গুইন। এ বার পেঙ্গুইন ভাইকিং থেকে প্রকাশিত হল কত অজানারে-র সোমা দাস-কৃত অনুবাদ দ্য গ্রেট আননোন।
 
জাদু-কণ্ঠ
আকাশবাণীতে প্রথম ঢুকেছিলাম ঘোষক হিসেবে। হয়ে গেলাম সংবাদপাঠক আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৩৪-এর ২৫ জুন শান্তিপুরে জন্ম। বাবা নন্দদুলাল, মা নীহারবালা। সাত বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৮-এ প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। তত দিনে সাহিত্য-সংস্কৃতির নেশা ধরেছে, সময় পেলেই মন দিয়ে শুনতেন জনপ্রিয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান বা বাচনভঙ্গি। আবৃত্তি চর্চার সূত্রপাত সেই থেকে। সঙ্গে অনুপ্রেরণা কিশোর বয়সে শোনা বাবার কণ্ঠে সংস্কৃত স্তোত্রের সুরেলা আবৃত্তি এবং মেজো জ্যাঠামশাইয়ের কথকতা। এ দিকে রোজগারের নানা চেষ্টায় গৃহশিক্ষকতা থেকে চায়ের দোকান, টাইপিস্ট, স্টোরকিপার কিছুই বাদ যায়নি। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৫৮-য়। বলরাম দে স্ট্রিটের দত্তবাড়িতে সভা হত ভারতীয় শিল্পীসংঘের, এখানেই একদিন অনিল ঠাকুর অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর বিজ্ঞাপনের কথা জানালেন। অতঃপর পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হন ঘোষক পদে। ১৯৬৪-তে তিনি দিল্লিতে বাংলা বিভাগে সংবাদ পাঠক নির্বাচিত হন। তার পর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের শেষদিকে ফিরে আসেন কলকাতা বেতার কেন্দ্রে। পরেরটুকু ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে দেবদুলালের হৃদয়স্পর্শী পাঠ অনেক দিন মনে রাখবে বাংলা। ওঁর আবৃত্তি প্রকাশ পেয়েছে রেকর্ড-ক্যাসেটে। সম্পাদনা করেছেন বিষয়: আবৃত্তি, বাংলাদেশের গল্প, একাত্তরের যুদ্ধে ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ, বইগুলি, যৌথ বা একক ভাবে। ভাষ্যপাঠ করেছেন বহু তথ্যচিত্র এবং ‘মহানগর’ ও ‘কলকাতা ৭১’-এ। পেয়েছেন নানা পুরস্কার, ১৯৭২-এ পদ্মশ্রী। স্ত্রী কত্থক নৃত্যশিল্পী রুবির সঙ্গে শুরু করেছিলেন ‘রসকলি’ নামে একটি আবৃত্তি ও নৃত্যচর্চা কেন্দ্র। ২ জুন রাতে স্তব্ধ হল সেই দেবকণ্ঠের জাদু। ১৬ জুন ছ’টায় তপন থিয়েটারে ‘শিল্পী সংসদ’-এর উদ্যোগে স্মরণ সভা।
  First Page  


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.