|
|
|
|
দেব-জিতের ‘দ্বৈরথে’ ফের হল-মুখী জেলার দর্শকেরাও |
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় • নবদ্বীপ |
দেবের ‘পাগলু’ বনাম জিতের ‘শত্রু’র লড়াইয়ে জিৎ কিন্তু সিনেমারই।
বাণিজ্যিক বাংলা ছবির এমন রমরমা বাজার সাম্প্রতিক কালে জেলার সিনেমা হলগুলিতে দেখা যায়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় টানা ‘হাউসফুল’ বোর্ড ঝুলেছে হলগুলিতে। নবদ্বীপের একটি সিনেমা হলের মালিক ত্রিলোচন ভট্টাচার্য বলেন, “আমাকে নতুন করে হাউসফুল বোর্ড রং করাতে হয়েছে।” জেলা সদর কৃষ্ণনগরের সঙ্গীতা হলে প্রথম সপ্তাহের ২১টি শোয়ের মধ্যে ১৮টি হাউসফুল গিয়েছে। একটি শো হতে পারেনি ঝড়-বৃষ্টির জন্য। ওই সিনেমা হলের কর্তৃপক্ষ মনে করতে পারছেন না, শেষ কবে এমন ঘটনা ঘটেছে। নবদ্বীপের আলোছায়া সিনেমা হলে ‘শত্রু’র জন্য প্রদর্শনের সময় পরিবর্তন করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ওয়ান্টেড, ফাইটার, চ্যালেঞ্জ, পরান যায় জ্বলিয়া, চিরদিনই তুমি যে আমার, দুই পৃথিবীর মতো সিনেমাতেও ভিড় হয়েছে। হাউসফুল হয়েছে অনেক ‘শো’। কিন্তু খুব কাছাকাছি সময়ে দু’টি মেগা ছবি পরপর বাজারে আসায় এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বাংলা সিনেমাকে ঘিরে তা কিন্তু অনেকদিন দেখা যায়নি। সিনেমা হল মালিকেরা বলছেন, গত দু’আড়াই বছর ধরেই টলিউডের সিনেমা বাজার ধরছে। এ বার এক সঙ্গে দুই নায়কের সিনেমা চলে আসায় বাজার আরও জমজমাট হয়ে গিয়েছে। এখন যে জোয়ার দেখা যাচ্ছে, তা আগে দেখা যায়নি। |
সিনেমা হল মালিকেরা জানাচ্ছেন, সিনেমার টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। তবু ভিড় হচ্ছে। নবদ্বীপের শ্রীগুরু টকিজের সামনে রবিবার দুপুরে বিরাট ভিড়। বেশিরভাগ দর্শকই পাশের গ্রামের। কিন্তু শহুরে পোশাকও কিছু কম নেই। জেলার অন্তত ৮টি হলে চলছে ‘পাগলু’। ৬টি হলে চলছে ‘শত্রু’। নবদ্বীপের ব্যবসায়ী গৌরগোপাল সাহা বলেন, “জামাইষষ্ঠীর সময় থেকেই বারবার চেষ্টা করেছি দু’টি সিনেমার কোনও একটি দেখার। কিন্তু পারিনি।” একই কথা কলেজ ছাত্রী ঊষসী ভট্টাচার্যেরও। তাঁর কথায়, “দেব-কোয়েল জুটির আগের ছবিও ভাল লেগেছিল। বন্ধুদের অনেক এমন ছেলেমেয়েকেও সিনেমাটা দেখতে যেতে দেখছি, যারা আগে বাংলা সিনেমার নাম উচ্চারণ করাটাই ব্যাকরণে ভুল বলে মনে করত।” সঙ্গীতা হলের ম্যানেজার নিতাইচন্দ্র দাস বলেন, “দুই কি আড়াই বছর ধরে বাংলা ছবির বাজার বদলেছে। অনেক ছবিও সেই কারণে নিয়মিত বাজারে আসছে। কিন্তু তার মধ্যেই এমন ভাল সময় খুব কম এসেছে।” তিনি বলেন, “সময়টা ভাল বলে অনেক ছবি যেমন বাজারে আসছে, তেমন সকলে কিন্তু তেমন বাণিজ্য করতে পারছে না।” নবদ্বীপের সায়ন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু বলেন, “সমস্যা হল, বাংলা ছবির সুদিন কেবল বাণিজ্যিক ছবিতেই আসেনি। গত কয়েক বছরে মুক্তি পেয়েছে একাধিক ভাল ছবিও। কিন্তু সে সব সিনেমা মফসসলের হলে দেখা যায় না। নৌকাডুবি, আবহমান, জানালা, মনের মানুষ কিংবা অন্তহীন দেখার জন্য কলকাতা যেতে হয়।” ইম্পার সদস্য রথীন কুণ্ডু বলেন, “ওই সব ছবি একেবারেই শহুরে মানসিকতার দর্শকের জন্য। ওই ধরনের কিছু ছবি জেলার হলে মুক্তিও পেয়েছিল। কিন্তু ভাল চলেনি। তাই হল মালিকেরা চান দেব, জিৎ, প্রসেনজিৎদেরই।”
কিন্তু এই হিট ছবির জোয়ারে কি খুলতে পারে জেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমাহলগুলি? নদিয়া জেলা সিনেমা হল মালিকদের সংগঠনের সহ সভাপতি রথীনবাবু বলেন, “এখনও সেই অবস্থাটা আসেনি। বছরে এমন চারটি হিট ছবি হলে তবেই আবার বন্ধ হল খোলার কথা ভাবতে পারেন মালিকেরা।” |
|
|
|
|
|