রবিবাসরীয় গল্প
জ্যোৎস্না-প্রেম
বার হবে।
সারা দিন ধরে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করেছি। এ বার সেই সাঙ্ঘাতিক সময়টা কী যেন বলে মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হবে। যাতে ঘুমিয়ে না পড়ি দু’বার চা, তিন বার কফি খেয়েছি। জিভ, মুখের ভিতর, গলা মায় খাদ্যনালী পর্যন্ত তেঁতুলের মতো টকে আছে। দুটো পুদিনহরা খেলাম। কিস্যু হল না। তেতো থেকে স্বাদটা কেমন একটা তিতকুটেতে পরিণত হল। শাশুড়িমাকে দেখেছি গ্যাস-অম্বল হলে বড় একটা কাচের গ্লাসে ঈষদুষ্ণ গরম জল করে সময় নিয়ে একটু একটু করে খেতে। আমিও তাই করলাম। সত্যি উপকারও পেলাম। বাড়ির বউ হয়ে চোরের মতো পা টিপে টিপে এ-ঘর ও-ঘর উঁকি দিলাম। মেঘার বাবা ঘুমিয়ে কাদা। নাকও ডাকছে। শাশুড়ির ঘরে উঁকি দিতে উনি কী একটা গোঙিয়ে বলে পাশ ফিরে শুলেন। মনে হয় বাতের ব্যথা। আমি দরজার গায়ে পোস্টারের মতো সেঁটে দাঁড়িয়ে থাকি। দেখতে পেলে তার্পিন তেল আর কেরোসিন মিশিয়ে এক্ষুনি মালিশ করে দিতে বলবে। খুব আফসোস হয়। ইস্, হাতের কাছে যদি একটু ক্লোরোফর্ম থাকত সামান্য স্প্রে করে দিতাম। শাশুড়িমার তা হলে সকাল আটটার আগে ঘুম ভাঙবার সম্ভাবনাই থাকত না।

ডাইনিং হলে এসে প্রাণায়ামের মতো করে বার দুই জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিই। এ ব্যাপারটা করলে দেখেছি মাথাটা বেশ খোলতাই হয়। এ যাত্রায় হল না। বরং জিগ্-স-পাজল-এর মতো সব কিছু কেমন গুলিয়ে যায়। এর পর মেঘার ঘরে যাই। সেও ঘুমিয়ে অচেতন। মেয়েটার ছোট থেকেই শোওয়া খুব খারাপ। ছোটবেলায় এই নিয়ে খুব বকুনিও খেত। মান্ধাতার আমলের পেটাই ঘড়িতে ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজতে শুরু করলে চমকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাই। কী কাণ্ড! বারোটা বেজে গেল। এখনই তো হবে। সেই অমোঘ মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হবে।
পনেরো না আঠারো কত বছর পর যেন চাঁদ আর পৃথিবীর অনেক দূরত্ব কমে যাবে। কতটা কাছাকাছি আসবে? যতটা কাছাকাছি আসলে ফিসফিস করে কথা বললে শোনা যায়?
আর ‘ধ্যাত্তেরি, কী সব আগডুম বাগডুম ভাবছি’ বলে নিজেকেই নিজে ধমক লাগাই। আর সময় নেওয়া যাবে না। চাঁদ এখন আকাশের বুকে পূর্ণ যৌবনবতী শশীকলা। তার রং-রূপ-রস উপুড় করে দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে। চাঁদের বুকে টলটল করছে এক দিঘি প্রেম। আমি সেই চাঁদকে দেখব। ভালবাসব। আদরে সোহাগে ভরিয়ে দেব, ঠিক যেমন ভাবে আমিও প্রেম চাই হয়তো পৃথিবীর কাছেই। ছুঁয়ে দেব আজ চাঁদের যাবতীয় লজ্জা। আমাদের ভালবাসাবাসি দেখেও সূর্য কি উঠবে কাল?
আমি বিড়ালের মতো সাবধানী গুটিগুটি পায়ে দোতলার সিঁড়ি ভাঙতে লাগলাম। বিকেলে সিঁড়ির দরজা আলতো ভেজিয়ে রেখে শাশুড়িকে বলে দিয়েছিলাম, হ্যাঁ মা, তালা লাগানো হয়ে গেছে।
মেঘা এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে। নিজের মেয়ে বলে বলছি না, সমস্ত ব্যাপারে ওর মাথাটা দারুণ কাজ করে। ঝকঝকে স্মার্ট মেয়ে। লেখাপড়া নিয়ে কোনও দিন ওর পেছনে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে হয়নি। মাধ্যমিকে একটুর জন্য কুড়ি জনের মধ্যে থাকেনি। চমৎকার গানের গলা। আর কী ব্যক্তিত্ব! ভাবলেই অবাক হয়ে যাই। আমার মেয়ে তো? আমার মেয়ে হয়ে সব ব্যাপারে এত ঠিকঠাক চলে কী করে। আমি তো এখনও ভাত চাপিয়ে টিভি দেখতে বসলে ভাতের কথা ভুলে যাই। এই তো দিন পনেরো আগে মেঘার বাবার টিফিন বাক্সে কিছু না দিয়ে খালি টিফিন বাটি ভরে দিয়েছিলাম অফিসের ব্যাগে। সে-দিন আবার মেঘার বাবা অমলদাকে বলেছিল, ‘আজ আমার সঙ্গে টিফিন করবেন।’ খুলে দেখে ফাঁকা। কী বিশ্রী ব্যাপার। বাড়ি এসে আমায় শুধু বলেছিল, ‘এ বার থেকে আমি আর টিফিন নেব না। লোকজনের সামনে জোকার হতে ভাল লাগে না।’ শাশুড়িমা খাটে বসে বসেই এক হাত নিয়েছিলেন, ‘বুবুর চেহারাটা দিন দিন কেন পাটকাঠির মতো হয়ে যাচ্ছে, এই বার বুঝতে পারলাম। বুবুকে এ বার থেকে আমি খেতে দেব।’ আমি ফস করে বলে ফেলি, ‘মা, ওর পাঁচ-সাত হাইটে বাহাত্তর কেজি ওজন, ডাক্তার বলে এটা ওভার ওয়েট।’ শাশুড়িমা খাটের এক কোনায় রাখা পানের ডিবা থেকে সুপুরি কুচানোর জাঁতিটা ছুড়ে মেরে বলেছিল, ‘ছিঃ ছিঃ, নিজের স্বামীর শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ খোঁটা দেয়?’ জাঁতিটা একটুর জন্য গায়ে লাগেনি। তবে পুরনো আমলের বাড়ির মেঝের চলটা উঠে গিয়েছিল। দুপুরে উনি ঘুমিয়ে পড়লে ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে দিই।
মেঘার বাবা বাড়ি থাকলে টিভিতে খবর দেখে, কাগজ পড়ে, এ-ঘর ও-ঘর পায়চারি করে। মেঘা যখন নীচের ক্লাসে পড়ত, তখন পড়াও ধরত। আমিও পড়াতাম মেঘাকে। কিন্তু আমার উপরে ভরসা ওদের সব সময় কম। মেয়ে বাবাকে অভিযোগ করত, ‘বাবা, মা যে সব বাংলা, ইতিহাস প্রশ্নের উত্তর লিখে দেয় বেশির ভাগ সেনটেন্স ইনকমপ্লিট থাকে।’ আমিও ভাল করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাতা দেখলাম, সত্যি মেঘার কথাই ঠিক। বেশির ভাগ বাক্যই অসম্পূর্ণ। যেমন, যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পরবর্তী ৪০০-৭০০ বছর বলা হয়ে থাকে। মেঘার বাবা গম্ভীর ভাবে বলে, ‘জয়া, মেঘার কোনও প্রশ্নের উত্তর তোমার লিখে দেওয়ার দরকার নেই। মুখে ধরবে।’ বিষয়টার মধ্যে সামান্য অপমান লুকিয়ে থাকলেও অভিমান হল না। মনে হল, বাঁচা গেল। পড়া ধরতে গিয়ে আরও এক খিটকাল। মেয়ে গড়গড়িয়ে বলে যাচ্ছে। আমি মেলাতে মেলাতে এক সময় কী হাবিজাবি ভাবনা শুরু করি। মেয়েকে ধমকে উঠি, ‘এই তুই এই প্যারাটা বলিসনি?’ মেয়ে গলার পারদ চড়ায়, ‘তুমি তো পৃষ্ঠাই ওল্টাওনি। আমার কখন বলা হয়ে গেছে। ধ্যাত্তেরি কী যে ভাব তুমি।’ মেয়ের সামনে লজ্জা করে। সত্যি কী ভাবি আমি? মেঘা মন খারাপ করে বাবার কাছে ফের অনুযোগ করে, ‘দেখো বাবা, আমি পড়া বলে যাই, মা কিছু শোনে না, উল্টে আমায় বকে।’ মেঘার বাবা এ বার আর গম্ভীর ভাবে না, শান্ত ভাবে বলে, ‘জয়া, মেঘার লেখাপড়ার মধ্যে তুমি আর নাক গলিয়ো না।’
আমার অবসর সময় কিছু বাড়ল। অবশ্য এখন সেটা খেয়ে নিচ্ছে শাশুড়িমার বাত। বেতো মানুষের তার্পিন তেল আর কেরোসিন মালিশ এখন আমার অবসর বিনোদন।
আমার মোবাইলটায় গান শোনা, গান ভরা, ছবি তোলা, এ সব করা যায় না। আগের দিনের সাদা কালো টিভির মতো সাদা-কালো মোবাইল। মেঘার মোবাইলে অসাধারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতের কালেকশন আছে। তাই মেঘা ঘুমিয়ে পড়লে বালিশের তলা থেকে ওর মোবাইলটা আগেই চুরি করে লুকিয়ে রেখেছিলাম। মাদুর, তার উপর একটা মাথার বালিশ আর জলের বোতল সন্ধ্যাবেলা বাবা মেয়ে যখন ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলা দেখছিল, তখনই রেখে এসেছিলাম। সব কিছু ব্যবস্থা একেবারে নিখুঁত। আজ কোনও ব্যাপারে কোনও রকম রিস্ক নিতে চাই না। এমন মাহেন্দ্রক্ষণ মানুষের জীবনে বারবার আসে না। ছাদে মাদুর বিছিয়ে তার উপর একটা বালিশ রেখে এসেছি। একটা জলের বোতলও রেখেছি। কতক্ষণ থাকব তার তো ঠিক নেই, যদি পিপাসা পায়! ব্লাউজের ভিতর মেঘার মোবাইলটা আগেই ঢুকিয়ে নিয়েছি। পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম। না সাবধানের কোনও মার নেই। তাড়াহুড়োর কোনও গল্প নেই। পূর্ণ যৌবনবতী চাঁদ সবে তার রূপ, রস, বর্ণ উজাড় করে ঢালতে শুরু করেছে। সিঁড়ির দরজাটা আলতো হাতে ঠেলে দিই। ক্যাঁচ করে শব্দ হয়। রাত গহীন হয়েছে। তাই শব্দটা একটু বেশিই হয়। অবশেষে আমি ছাদের বুকে পা রাখি। ছাদ তখন জ্যোৎস্না স্নান করছে। সাদা স্নিগ্ধ মায়াময় আলো চার দিক উছলে উঠেছে। আমাদের উঠোনের কাঁঠাল গাছের পাতাগুলো মনে হচ্ছে ভেলভেটে মোড়া। নারকেল গাছের কাঁদিতে ক’টা নারকেল আছে তাও গোনা যাচ্ছে। মোবাইলটা মাদুরের এক পাশে রেখে দিয়ে দু’হাত টানটান করে চাঁদের দিকে মুখ উঁচু করে দাঁড়াই। যেন আমি পাখি, আমার দুই হাত এখনই দুই ডানা হয়ে উড়ে যাবে চাঁদের কাছে। আমি জ্যোৎস্না-জলে ভিজে যাচ্ছি। জল-জ্যোৎস্না আমায় পাগল করে তুলছে। মাতাল করে দিচ্ছে। আকণ্ঠ জ্যোৎস্নার নেশায় আমার মন-প্রাণ ভরে উঠছে। স্কুলে পড়তাম যখন নাচ শিখতাম। টানা দশ বছর শিখেছিলাম। এখন আমাকে কেউ দেখলে আঁতকে উঠবে। এই চেহারায় নাচ! কিন্তু সত্যি নাচতাম এক সময়। এখনও চেষ্টা করলে ঝাঁপতালের তিন গুণ পর্যন্ত হাতে তালি দিয়ে বলে দিতে পারব।
শাড়ির আঁচলটা কোমরে পেঁচিয়ে নিয়ে এক পাক নেচে উঠি। ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে...’। একটুখানি নাচবার পরই হাঁপিয়ে উঠি। বেশ লাগছে। কত দিন পরে আমি নাচলাম। সত্যি হাঁপ ধরে গেছে। জল খাওয়ার জন্য বোতলটা সবে তুলে দু’ঢোক খেয়েছি, মেঘার ফোন বেজে ওঠে আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে...। কেটে যায়। আমি ছাদের কিনারে এসে দাঁড়াই।
চাঁদ তখন গলে গলে পড়ছে। চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণে আমি ভেসে যাচ্ছি। ছাদের ডান দিকের কোনায় জলে ট্যাঙ্কিটার পাশে নারকেল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না পড়েছে। পাতার ফাঁক গলে পড়ে চিরচিরে আলো তৈরি হয়েছে। বাতাসে নারকেল গাছের পাতাগুলো দুললে আলোটাও দোলে। আমার খুব মজা লাগে। এতটাই মজা লাগে যে, ঝিরঝিরে আলোতে এসে দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে হয় না, এ বার আমার সত্যি দুটো ডানা গজাবে। ঠিক তখনই মোবাইলটা আবার ধড়ফড় করে বেজে ওঠে। মফস্সলের বারোটা বেজে যাওয়া মানে অনেক রাতই হয়েছে।
আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কিছু বলার জন্য আঁকপাঁক করি। কিন্তু বোবায় ধরে আমায়। আমার ভিতর জলেই গোঁ গোঁ করতে থাকে কিছু বলতে চাওয়া কথার শব্দগুলো।
সজল নামে আমার মেয়ের বন্ধুটি ফোনের ভিতর চকাস করে একটা শব্দ করে। ফোনে এমন শব্দ আমি প্রথম শুনলেও বুঝতে পারি ওটা চুমু খাওয়ার শব্দ। আমি সোজা হয়ে বসি। আমাকে কিছু বলতে হবে। কী যেন একটু শব্দ করি। আর তখনই এলোপাতাড়ি ভাবে শব্দটা আমার কান স্পর্শ করতে থাকে। ‘উম... উম... উম... উম্ম্ম্ মেঘা আমি জাস্ট ক্যান নট ইমাজিন যে তুই ছাদে এসেছিস। একটাই চাঁদের নীচে জ্যোৎস্না আলোয় আমরা ভিজছি। তুই যখন সে-দিন বললি, ওই সব রাতের বেলা ছাদে উঠে জ্যোৎস্না-ফোৎস্না দেখার ভুতুড়ে আইডিয়ার মধ্যে আমি নেই, আমার খুব মন খারাপ করেছিল।’
আমি শক্ত হয়ে বসে শক্ত ভাবে ফোনটা কানে চেপে ধরে বলি না, আমি, মানে...।
বুঝতে পারি গলা দিয়ে ফ্যাসফ্যাসে একটা আওয়াজ বার হচ্ছে।
সজল, আমি...।
কোনও মানেটানে আমি আজ শুনব না। আমার মেঘা...। সোনা মেঘা...।
আবার সেই ফিসফিসে স্বর।
কী পরে আছিস তুই?
আমার অস্তিত্বে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। কেমন যেন শীত করতে শুরু করে।
সজল বলেই চলে তোদের বাড়ি শেষ যে-দিন গিয়েছিলাম, যে লাল-সাদা ফুলফুল স্লিভলেস নাইটিটা পরে ছিলিস, সেটাই তো?
ছেলেটার গলায় আব্দারের সুর অনুরণন তোলে আমি কিন্তু ওই নাইটিটাই তোকে পরতে অনুরোধ করেছিলাম।
আমি নিজেকে ধমকাতে থাকি জয়া কথা বল, ওই ছেলেকে ধমক দিয়ে কিছু বল।
যতটা পারা যায় গলার ভিতর গাম্ভীর্য এনে বলি শোনো, আমি মানে তোমার...।
ওই ছেলে আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝাঁঝিয়ে পড়ে মেঘা, তুই আমাকে তুমি বললি, উফ্ কত দিন কত অনুরোধ করেছি, একটু তুমি করে বলবার জন্য। ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরতে। অংশুমানকে দেখিয়ে বলতে, মেঘা শুধু আমার। আমি তোকে খুব ভালবাসি রে মেঘা, খুউব...
আমার যেন কী হয়। মেঘার খাতায় ইতিহাসের উত্তর লিখে দেওয়া অসম্পূর্ণ বাক্যের মতো মুখ থেকে ফস করে বেরিয়ে আসে আমারও খুব ইচ্ছা করে...।
সজল যেন অভয়বাণী দেয়, কী বল কী ইচ্ছা করে?
গলার কাছটা কেমন শক্ত হয়ে আসছে। কথা আটকে আসছে...। তবু বলি ভালবাসতে, এই চাঁদ, তার সাদা মখমলে সাদা রেশমের মতো জ্যোৎস্না...
আর আমায়?
চুপ করে থাকি। আমি কি
কাঁদছি? দু’চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।
সজল তাড়া দেয় আর আমায়?
আমার কান্নার শব্দ শুনতে পায় সজল। বিস্ময়ে বলে ওঠে মেঘা, তুই কাঁদছিস? তোকে আর কিছু বলতে হবে না। সত্যি তুই যদি আজ চাঁদ পৃথিবীর কাছে এলে কতটা জ্যোৎস্নাপ্রেম হয় দেখতে না আসতিস, আমি তোকে চিনতেই পারতাম না। একই মেঘার মধ্যে এত রকমের মেঘ লুকোচুরি খেলে জানতেই পারতাম না...।
বলে যায় ওই ছেলে আগল খুলে পাগলের মতো। তার ভেতরের সব ভালবাসাটুকু উজাড় করে যায় মোবাইলের স্পিকারে। এক সময় সতর্ক ভঙ্গিমায় সজল বলে ওঠে, সে দিন শুনলি না। পর পর দুটো আইসক্রিম খেয়ে গলার দফারফা করে ফেলেছিস। আজ আবার এতক্ষণ খোলা ছাদে। তুই নীচে যা মেঘা। কাকিমা, কাকু জেগে গেলে বিশ্রী ব্যাপার হবে।
আমি সিঁড়ি দিয়ে মাদুর, জলের বোতল, বালিশ সব নিয়ে নীচে নামতে নামতে শুনি পাখি ডাকছে। কত দিন পরে ভোরের পাখি ডাকা শুনলাম। এ-ঘর ও-ঘর উঁকি দিলাম। না সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
মোবাইলটার রিসিভড কল, কল লিস্ট সযত্নে ডিলিট করে মেঘার বালিশের নীচে রেখে আসি। মেয়েটা ঘুমোলে এখনও শিশুর মতো লাগে। ঝুঁকে পড়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঠিক ছোটবেলায় যেমন থাকতাম। শাশুড়ির তখন বাতের সমস্যা শুরু হয়নি। উনি দেখলেই ঝাঁঝিয়ে উঠতেন ওমা, ছি ছি কী সৃষ্টিছাড়া কাণ্ড। ঘুমন্ত সন্তানের মুখের দিকে মায়েরা কেউ ও ভাবে তাকিয়ে থাকে? দৃষ্টি লেগে যায় না?
যে ‘মেয়ে’ দেখতে আসত, বলত একেবারে মায়ের মুখটা বসানো।
খুব অহঙ্কার হত আমার মনে মনে। আনন্দ পেতাম। কত বছর পর ভুলে যাওয়া সেই অহঙ্কার আর আনন্দ নিয়ে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকি আমার এক টুকরো আমির দিকে।
সকালে আমরা চা খাই একসঙ্গে। আজ খুব ভোরে স্নান সেরে নিয়েছি। মেঘা জিজ্ঞাসা করে এত সকালে তুমি স্নান করেছ?
ওদের চায়ের কাপগুলো এগিয়ে দিতে দিতে বলি একটু কালিবাড়ি পুজো দিতে যাব।
মেঘার বাবা বলে, হঠাৎ!
আমি হাসি, হঠাৎ কেন হবে? কাল চাঁদ পৃথিবীর খুব কাছাকাছি এসেছিল। পৃথিবীর বুকে একটা মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হয়েছিল, তাই...।
শাশুড়িমা খুশি হয়।
প্রসাদে গুজিয়া কিনো বউমা।
মেঘার বাবা ঠোঁট ওল্টায়।
পারও তুমি।
মেঘা ‘মাই গড’ বলে আঁতকে ওঠে।
কালকে সে দিনটা ছিল!
বলে দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আসে। অবাক হয়ে জোরে জোরে বলে দেখেছ বাবা, মোবাইল সেটটা একদম ভাল না। বড় বড় কোম্পানিগুলো আজকাল শুধু নামে কাটে। কাল সন্ধ্যাবেলা চার্জ দিলাম। আর তা এখন বেমালুম লোপাট হয়ে গিয়ে সুইচ অফ!


ছবি: সায়ন চক্রবর্তী
Probondho Rabibasariyo Magazine



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.