|
|
|
|
 |
হাঁটুন, রোজ ব্যায়ামও করুন
হাঁটলেই কিন্তু মেদ কমে না বা ফিটনেস বাড়ে না। হাঁটা একটা মাত্র পদ্ধতি।
ফিট থাকতে ব্যায়াম আর শৃঙ্খলা প্রয়োজন। ফিটনেস এক্সপার্ট বিশ্বজিৎ তপাদার
|
 |
|
আমাদের জীবনশৈলীর সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক ও মানসিক রোগগুলির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, টেনশন, স্ট্রেস বা মানসিক অবসাদ কাটাতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস একটা ন্যাচারাল থেরাপি হিসাবে কাজ করে। অস্টিয়োপোরোসিস-এর ঝুঁকি কমাতেও হাঁটার অভ্যাস কাজে লাগে।
ফিটনেসের ভাষায় বললে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসকে একটা ন্যাচারাল এনডিয়োরেন্স ট্রেনিং বলা যেতে পারে। সকালবেলায় হাঁটলে মন সারা দিন চনমনে থাকে, বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাঁটলে সারা দিনের ক্লান্তি দূরে সরিয়ে আগামী কালের জন্য মন ও শরীরকে তৈরি করা যায়।
জীবনের প্রতি ভালবাসা থেকেই যদি হাঁটতে হয়, তা হলে কিন্তু হাঁটাটা হাঁটার মতো হওয়া চাই। হেলতে দুলতে, গল্প করতে করতে কিছু ক্ষণ হাঁটলেন অথবা একটু হেঁটেই চা-বিস্কুট নিয়ে বসে পড়লেন, তা হলে কিন্তু হবে না। বছরের পর বছর সকালবেলা হেঁটে চলেছেন, কিন্তু পেটের টোপলা ভুঁড়িটি যে-কে সে-ই, শরীরের ওজন প্রথম প্রথম সামান্য কম লাগলেও পরে দেখা যায় একই আছে, বিন্দুমাত্র এ দিক ও দিক হয়নি এমন অভিজ্ঞতা কিন্তু অনেকেরই হয়েছে। হাঁটা দিয়ে শুরু করে হাঁটাতেই যদি সারা দিনের জন্য শরীরচর্চার ইতি টানতে চান, তা হলে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে হাঁটতে হবে। ফিটনেসের সহজ পাঠ বা প্রথম ধাপ হিসেবে নিয়মিত হাঁটাচলার অভ্যাসকে ‘ফিটনেস ওয়াকিং’ বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে ‘এয়ারোবিক ওয়াকিং’ বলা হয়। |
 |
কী এই এয়ারোবিক ওয়াকিং? খুব ছোট ও সামান্য একটা তত্ত্ব, যা হল, আপনাকে ঘণ্টায় সাড়ে তিন থেকে চার মাইল গতিতে অন্তত তিরিশ মিনিট হাঁটতে হবে, যা পরবর্তী কালে ফ্যাট বার্নিং হার্ট রেট (২২০ বিয়োগ আপনার বয়স গুণ ০.৫৫) এবং কার্ডিয়াক হার্ট রেট (২২০ বিয়োগ আপনার বয়স গুণ ০.৯)-এর মাত্রাকে কাজে লাগিয়ে গতি আরও বাড়ানো যেতে পারে। এয়ারোবিক ওয়াকিং শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল (এল ডি এল) এবং ত্বক ও মাংসপেশির মাঝখানে জমে থাকা মেদ কমাতে সাহায্য করে, সঙ্গে সঙ্গে হার্টের পক্ষে উপকারী কোলেস্টেরল (এইচ ডি এল)-এর পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে হার্ট অ্যাটাককে প্রতিরোধ করতে পারে। এ ছাড়া ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’-এর মতো ক্ষতিকারক সুগারফ্যাট-এর মাত্রা কম করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
তবে সবার শরীর তো আর রোগে ভরে যায়নি অথবা সবাই একদম রুগি হয়ে যায়নি। তাই আপনি কেন হাঁটবেন বা হাঁটছেন, সে ব্যাপারে ধারণাটা পরিষ্কার হওয়া উচিত। ধরুন, আপনার কোলেস্টেরল, সুগার বা প্রেশার-এর কোনও সমস্যাই নেই, পেটের গণ্ডগোল, অনিদ্রা, থাইরয়েড বা গাইনিকোলজিকাল অসুবিধাগুলিও খুব একটা নেই, অথচ আগামী দিনে যাতে এ সবে আক্রান্ত না হতে হয় সে ব্যাপারে আপনি সজাগ, আর এর পাশাপাশি আপনি আপনার শরীরটাকে সুন্দর করতে চাইছেন, টানটান রাখতে চাইছেন, মনে মনে আশা করছেন বয়সটা একটু কম লাগুক, শরীরকে গড়নের অসামঞ্জস্যকে বিদায় করে অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে স্লিম হতে চাইছেন, আপনার ফোলা গালটাকে ঠিক করতে চাইছেন, বা ধরুন মাংসপেশি ও সন্ধির কোমলতা এবং নমনীয়তা বাড়িয়ে তুলে শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি ঠিকঠাক রাখতে চাইছেন, আবার তার সঙ্গে দৈহিক ক্ষমতা, কর্মদক্ষতা, স্ট্যামিনা এবং যৌনক্ষমতা কোনওটাই কম হলে আপনার চলবে না। সত্যি কথা বলতে কী, এত কিছু চাওয়া, এত আশা পূরণ করা কিন্তু শুধু হেঁটে হবে না। অনেকে হয়তো ভাবছেন, ঠিক আছে, হেঁটে না হলে জগিং করব। হ্যাঁ, জগিং আপনি করতেই পারেন, তবে আপনার হাঁটু এবং কোমর জগিং-এর জন্য তৈরি কি না আর জুতোজোড়া জুতসই আছে কি না (Comfortable Arc Support Shock Absorbing Footwear বা CASSAF, একটু দেখে নেবেন।
আপনি হাঁটুন বা জগিং যাই করুন না কেন, সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম করার অভ্যেসও তৈরি করতে হবে। না হলে কিন্তু আশা পূরণ হবে না। তা ছাড়া প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ার-এর
যুক্তিযুক্ত প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করলে চলবে না। বয়স কম হোক বা বেশি, পুরুষ কিংবা নারী প্রত্যেককেই নিজের নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী ‘পিলাটিস’, ‘যোগচর্চা’ ‘স্ট্রেচিং’, ‘ফ্রি হ্যান্ড মোবিলিট’, ‘ক্যালিসথেনিক্স’, ‘সারকিট ট্রেনিং’, ‘ওয়েট ট্রেনিং’, ‘ফেশিয়াল ওয়ার্কআউট’, এবং সর্বোপরি ‘কার্ডিয়োভাসকুলার ট্রেনিং’ ও ‘রিল্যাক্সরসাইজ’ এর মতো ব্যায়ামগুলি ট্রেনার-এর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। |
এখন প্রশ্ন হল কোথায় করবেন এই সব ব্যায়াম? আপনার বাড়ির পরিবেশ যদি অনুকূল হয়, নিজেকে যদি ঠিকঠাক আগ্রহী করে তুলতে পারেন এবং ঠিক পদ্ধতি যদি জানা থাকে তাহলে অনায়াসে বাড়িতেই শরীরচর্চা করা যায়। তবে একা একা করতে গিয়ে যাতে চোট না পেতে হয় সে ব্যাপারে লক্ষ রাখবেন, আর আপনার সাধ করে কেনা ‘হোমজিম’ ধুলোবালিতে মাখামাখি, ‘ট্রেডমিল’-এর ঠাঁই শেষ পর্যন্ত বারান্দায় জামাকাপড় শুকনোর কাজে বা ‘ডামবেল’, ‘বারবেল’ মরচে পড়ে ফেরিওয়ালার কাছে কিলোদরে বিক্রি করার মতো পরিণতি না হওয়াই মঙ্গল।
এই মুহূর্তে একটা জিম কিন্তু শরীরচর্চার আদর্শ স্থান হতে পারে। একই ছাদের নীচে সমস্ত ধরনের ওয়ার্ক-আউট’এর সুবিধা থাকার ফলে একটা ‘হলিস্টিক হেলথ ইউনিট ফিটনেস সেন্টার’ বা ‘ফিটনেস স্টুডিয়ো’ হিসেবে জিম সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। জিমে অভিজ্ঞ ট্রেনার থাকার ফলে রোজ রোজ একই ধরনের ব্যায়াম করে Workout Monotonia বা একঘেয়েমিতে ভুগতে হয় না যা কিনা বাড়িতে ব্যায়াম করলে হতেই পারে।
জিম সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অদ্ভুত ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি হয়েছে। যেমন জিম মানেই অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ব্যায়াম করার জায়গা, জিম করা ছেড়ে দিলে মোটা হয়ে যায়, জিম মানেই ভারী ভারী ওজন তুলে ব্যায়াম ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব ধারণার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। তাই বলব, জিমে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মানসিকতায় পরিবর্তন আনুন, একটা ‘হ্যাঁ করব’ গোছের মনোভাব নিয়ে জিমে যান।
আর অবশ্যই মনে রাখবেন, সারাটা দিন একের পর এক সিগারেটে সুখটান দিয়ে, যা ইচ্ছে তা-ই খেয়ে এবং রোজ রাতে মদ্যপান করে যতই সকালে হাঁটুন, জগিং করুন বা জিমে যান, লাভের লাভ কিছুই হবে না। আলসেমি, কুঁড়েমি ত্যাগ করে সংযমী জীবনযাত্রায় এবং একটা নিয়মানুবর্তিতায় আসতেই হবে। হঠাৎ বেশ উৎসাহ নিয়ে শুরু করে কিছু দিন পর সব বন্ধ কিংবা সময় নেই বা বয়েসের দোহাই দিয়ে আজ নয় কাল করে করে শরীরচর্চাকে পাশ কাটিয়ে গেলে আগামী দিনে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা বা অক্ষমতাগুলি অবশ্যই একান্ত আপনার। |
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
 |
|
|