পচন ধরা হাত নিয়ে শৌচাগারের পাশে রোগী
‘অন্তঃসত্ত্বা’ মহিলার গর্ভে অস্ত্রোপচারের পরে বাচ্চা নয়, পাওয়া গিয়েছিল ‘গ্যাস’!
কিন্তু, আল্টাসোনোগ্রাফি করলেই তো অস্ত্রোপচার এড়ানো যেত। চিকিৎসকের সাফাই ছিল, ‘পরিকাঠামো নেই।’
কৃষ্ণনগরের সেই জেলা সদর হাসপাতাল থেকে মেরেকেটে তিন কিলোমিটার দূরে শক্তিনগর হাসপাতালও সেই পরিকাঠামোর অজুহাতেই হাসপাতালের শৌচাগারের সামনে টানা চার দিন ধরে ফেলে রাখল হাতে পচন ধরে যাওয়া এক ভবঘুরেকে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে নার্স, বছর পঞ্চাশের চিত্তরঞ্জন সাউ নামে ওই রোগীর পাশ দিয়ে দিনভর হেঁঁটে গেলেও এ ক’দিনে এক বারের জন্যও ফিরে তাকানোর সময় পাননি। কেন? যাঁর তত্ত্বাবধানে ওই রোগী ভর্তি হয়েছেন সেই চিকিৎসক জয়ন্ত পাঠক নির্বিকার গলায় বলছেন, “ও তো পাগল, ওষুধ দিলেও খায় না।”
‘পাগল’-কে নিয়ে আর কে মাথা ঘামায়!
অতএব, গত চার দিন ধরে ওই হাসপাতালের শৌচাগারের সামনেই খোলা মেঝেতে পড়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ। চিকিৎসকদের তেমন হেলদোল না হলেও গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি অন্যান্য রোগীর আত্মীয়েরা এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁরা সুপারের কাছেও দরবার করেছেন। কিন্তু চিত্তরঞ্জনবাবুর জন্য শয্যা বরাদ্দ হয়নি। হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় পিন্টু মজুমদার বলেন, “ভাবতেই পারছি না একটা মানুষকে ওই ভাবে শৌচাগারের সামনে ফেলে রেখে দেওয়া যায়। হাসপাতালের কারও-ই কী চোখে পড়ছে না?”
নিজস্ব চিত্র।
ওই হাসপাতালেই ২০ শয্যার স্বতন্ত্র ওয়ার্ড রয়েছে মনোরোগীদের জন্য। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে চারটি শয্যায় রোগী থাকলেও বাকিগুলি খালিই পড়ে রয়েছে। সেখানে ওই রোগীকে স্থানান্তর করা যায় না? উত্তর মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। শক্তিনগর হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল। তিনি একাধারে জেলা সদর হাসাপাতালেরও দায়িত্ব সামলান। হত কয়েক দিন ধরে ‘অন্তঃসত্ত্বা বিতর্কে’ জেরবার তিনি। শক্তিনগর হাসপাতালে আসার সময়ই পাননি। কাজলবাবু বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে যা অবস্থা, শক্তিনগর হাসপাতালে পা-ই দিতে পারিনি। তাই ওখানে কী হয়েছে জানি না। তবে শৌচাগারের সামনে কোনও রোগীকে কোনও অবস্থাতেই ফেলে রাখা যায় না। এ’টা হয়ে থাকলে ঘোর অন্যায় হয়েছে।” কিন্তু সেই ‘অন্যায়’-এর প্রতিকার কী? বলাবাহুল্য কাজলবাবুর কাছে তার উত্তর মেলেনি।
শক্তিনগর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে স্থানীয় ওই ভবঘুরেকে এলাকার বাসিন্দারাই হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলেন। শরীরে এক টুকরো কাপড় নেই। বাঁ হাতের কব্জির ক্ষতে পচন ধরেছে। ব্যান্ডেজ চুঁইয়ে রস-রক্ত। দুর্গন্ধময় শৌচাগারের পাশে এনামেলের থালায় পড়ে রয়েছে বাসি খাবার। তাঁকে ঘিরে মাছিদের পরিপাটি সংসার। বেঁচে রয়েছেন তো? কাছে গেলে গোঙানির পাশাপাশি ক্ষিণ স্বরে কিছু বলতে চাইছেন। বোঝা যায় না। হাসপাতালের কর্মীদের অবশ্য ফিরেও তাকানোর সময় নেই। জয়ন্তবাবু বলেন, “এমন তো কতই হয়। ও তো পাগল খেতে চায় না। ওষুধ দিলে ফেলে দেয়। ওকে কী করে জোর করে খাওয়াবো বলুন?” সে দায় তাহলে কার?
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.