|
|
|
|
প্রদীপ ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সর্বভারতীয় কংগ্রেস সূত্রে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। আজ এআইসিসি-র তরফে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদ আনুষ্ঠানিক ভাবে জানালেন, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদের দায়িত্ব আপাতত পালন করবেন রাজ্যের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবে জঙ্গিপুরের বিধায়ক মহম্মদ শোহরাবকে মনোনীত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রদীপবাবুর ‘সুসম্পর্ক’ সুবিদিত। তিনি কংগ্রেসে ‘জোটপন্থী’ নেতা হিসাবেই পরিচিত। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের ব্যাখ্যা, তাঁকে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে মমতাকেও বার্তা দিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। অর্থাৎ, কংগ্রেস যেমন চায় না যে, দিল্লিতে তাদের
নেতৃত্বাধীন সরকারে তৃণমূল কোনও অস্থিরতা তৈরি করুক, তেমনই
তারাও রাজ্যে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিব্রত করতে চায় না।
বরং ‘পারস্পরিক সুসম্পর্ক’ বজায় রাখতে চায়।
সাংবাদিক বৈঠক করে শাকিল আজ বলেছেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে মানস ভুঁইয়ার ইস্তফা গ্রহণ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত প্রদীপ ভট্টাচার্য ওই পদে কাজ করবেন।” শাকিলের এই মন্তব্যের পরেই মানসবাবু ও তাঁর অনুগামীরা বলতে শুরু করেছেন, এক ব্যক্তি এক পদ সূত্র অনুযায়ী তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু সেই স্থানে প্রদীপবাবুকে ‘অস্থায়ী’ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দলের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পাঁচ বছরের জন্য নতুন প্রদেশ সভাপতি নির্বাচন হবে। কংগ্রেসের অন্য অংশের অবশ্য বক্তব্য, তাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্ত প্রদেশ সভাপতিকেই নির্বাচিত হতে হয়। এমনকী, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়াও নির্বাচিত। প্রদীপবাবু আপাতত হাইকম্যান্ডের মনোনীত সভাপতি হলেও পরে তাঁকেও নির্বাচিত হয়ে আসবেন। ঠিক যেমন সনিয়া বা মানসবাবুর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। সুতরাং, এ নিয়ে ধোঁয়াশার কোনও জায়গা নেই।
আব্দুল মান্নান ও অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো প্রদীপ-শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, মানসবাবু ও তাঁর অনুগামীরা অকারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। যে নিয়োগপত্র আজ শাকিল আহমেদ দিয়েছেন, সেখানে কোথাও ‘অস্থায়ী’ শব্দটি লেখা নেই।
মানসবাবু রাজ্যে দু’টি দফতরের মন্ত্রী হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে ওই পদে
ইস্তফা দিতে হয়েছে। সেই স্থানে নতুন সভাপতি হয়েছেন প্রদীপবাবু। একই ভাবে মানসবাবুকেও এক সময় সভাপতি করা হয়েছিল। মান্নানদের এ-ও বক্তব্য, অস্থায়ী সভাপতি বা কার্যকরী সভাপতি বলে কংগ্রেসের সংবিধানে কোনও পদের কথা বলা নেই। সে জন্য এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন যখন প্রদীপবাবুকে কার্যকরী সভাপতি করেছিলেন,
তখন তিনি সনিয়ার অনুমতি নিয়ে বিশেষ নির্দেশ জারি করেছিলেন। মানসবাবুর ঘনিষ্ঠ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্র আজ বলেন, “প্রদীপবাবু সভাপতি হওয়ায় আমি খুশি। এই দায়িত্বের
জন্য তাঁর অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা দু’টিই রয়েছে।”
প্রদীপবাবুর সহাস্য বক্তব্য, “খামোখা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দলের একাংশ যদি ক্ষণিকের জন্য আনন্দ পেতে চায় তো পাক! এ ব্যাপারে আমি খুব ভাবিত নই।” তাঁর কথায়, “গত ৩৪ বছর ধরে কংগ্রেস রাজ্যে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে কেবল লড়াই করেছে। সে দিক থেকে রাজ্যে এখন নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন রাজ্যে কংগ্রেসের রাজনীতি হবে উন্নয়নমুখী। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে দলকে আরও সঙ্ঘবদ্ধ করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে চলব।”
প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি কবে গঠন করা হবে জানতে চাইলে প্রদীপবাবু বলেন, “প্রণববাবু কলকাতায় যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই সব বিষয় স্থির করা হবে।” তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কতগুলি বিষয় নিয়ে অচিরেই রাজনৈতিক আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। শাকিল আজ আরও জানান, কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা করা হয়েছে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। মুখ্য সচেতক করা হয়েছে হাসানের বিধায়ক অসিত মালকে। আর অজয় দে ও নেপাল মাহাতোকে যথাক্রমে পরিষদীয় দলের সচিব ও কোষাধ্যক্ষ করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|