হাওড়া-আমতা রোড
অমসৃণ যাত্রা
নামেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু হাল দেখলে বোঝার উপায় নেই। নেই ফুটপাথ। নেই যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ। বেপরোয়া যানবাহন এড়িয়েই এই রাস্তায় চলতে হয় পথচারীদের। পাশাপাশি, অধিকাংশ জায়গায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমনই বেহাল অবস্থা হাওড়া শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাওড়া-আমতা রোডের।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্রেফ প্রশাসনিক উদাসীনতায় বহু পুরনো এই রাস্তার বেহাল অবস্থা। যদিও প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই রাস্তাটির সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। তবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জেলার পুলিশকর্তারা কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি। তাঁদের এক জনের অভিমত, পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় এই মুহূর্তে ওই রাস্তায় আর পুলিশ বাড়ানো সম্ভব নয়।
হাওড়ার ইস্ট-ওয়েস্ট রোডের শানপুর মোড় থেকে শুরু হয়ে বাঁকড়া, শলপ, কাটলিয়া, মাকড়দহ, ডোমজুড় হয়ে রাস্তাটি আমতায় গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি আবার শলপের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছে। ফলে হাওড়া-আমতা রোডে গাড়ির চাপ স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। সরকারি, বেসরকারি বাস, গাড়ির পাশাপাশি প্রচুর লরিও এই রাস্তা ব্যবহার করে। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতি দিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার গাড়ি এই রাস্তায় যাতায়াত করে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, সঙ্কীর্ণ এই রাস্তায় প্রায় ২০টি বাসস্টপ রয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ট্রাফিক সিগন্যালও নেই। ফলে কোনও গাড়িই নিয়ম মানে না। যানবাহনের রেষারেষিতে মাঝেমধ্যেই হাওড়া-আমতা রোডের শানপুর মোড়, দাশনগর, বাঁকড়া, শলপ, শলপ বাজার এলাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটে। মাকড়দহের বাসিন্দা তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক দিন পুলিশ থাকে। কিন্তু তার পরে ফের একই ছবি। সদা ব্যস্ত রাস্তার মোড়গুলিতে ট্রাফিক পুলিশ অত্যন্ত জরুরি।”

জেলার পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন এসেছি। পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। সমস্যা থাকলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমস্যা রয়েছে ফুটপাথ নিয়েও। বাসিন্দাদের কথায়, শানপুর থেকে দাশনগর তদন্ত কেন্দ্র পর্যন্ত বহু দিন আগে রাস্তার একপাশে ফুটপাথ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দায়। ফলে প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে। অধিকাংশ জায়গায় রাস্তার দু’পাশেই গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান। সন্ধ্যের সময় রাস্তার পাশে শাক-সব্জির বাজার থেকে শুরু করে জামাকাপড়ের পসরা নিয়ে বসে পড়েন বিক্রেতারা। আবার এই রাস্তার অনেকটা শিল্পাঞ্চলের মধ্যে পড়ায় রাস্তার উপরেই কারখানার মালপত্র ও লরি রাখা হয় বলেও অভিযোগ। রাস্তার উপরেই পার্কিং করা হয় বিভিন্ন গাড়িও। দাশনগরের বাসিন্দা পার্থসারথি চৌধুরীর কথায়: “অবৈধ পার্কিং ও রাস্তার দু’পাশ দখল হয়ে যাওয়ায় রাস্তাটি আরও সরু হয়ে গিয়েছে। তার উপর হাওড়া-আমতা রোডে কোনও ডিভাইডার নেই। ফলে বাসগুলি নিজেদের ইচ্ছামতো যাতায়াত করে।”

বাসিন্দারা জানান, দাশনগর স্টেশনের কাছে রাস্তাটি বেশ কিছুটা চওড়া। সেখানে দ্বিমুখী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েক বছর আগে দাশনগর মোড় থেকে তদন্ত কেন্দ্র পর্যন্ত একটা বুলেভার্ড তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন পরেই সেটি যানবাহনের রেষারেষির ফলে ধাক্কা লেগে গুঁড়িয়ে যায়। এই রাস্তার উপরেই চপলাদেবী বালিকা বিদ্যালয়, মুক্তারাম দে হাইস্কুল, সেন্ট টমাসের মতো বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। সকালে স্কুল ও অফিসের সময় এই রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। আর তার মধ্য দিয়েই ছাত্রছাত্রীদের ও অফিস যাত্রীরা চলাফেরা করতে বাধ্য হন। সমস্যা রয়েছে নিকাশি ব্যবস্থারও। রাস্তার ধারের নর্দমার উপর দোকান তৈরি হওয়ায় নিকাশির সমস্যা হয়। বর্ষায় হাওড়া-আমতা রোডের অধিকাংশ জায়গায় জল জমে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিভাস হাজরা বলেন, “বহু বার সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসনকে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি। ফের আবেদন জানাব।”

বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, শানপুর মোড়ের কাছে দখলদারির ফলে রাস্তাটি কার্যত গলির আকার নিয়েছে। ওই মোড়েই রাস্তার উপর কয়েক দিন আগে পিচ উঠে খোয়া বেরিয়ে বড় বড় গর্ত হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সেই গর্তে স্রেফ প্যাচওয়ার্ক করেই দায় সেরেছে পূর্ত দফতর। দাশনগর রেলব্রিজের নীচেও একই অবস্থা। তবে শেষ কবে হাওড়া-আমতা রোডে পিচ হয়েছিল তা জানা নেই বলেই দাবি বাসিন্দাদের। রাস্তার আলো নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। বালিটিকুরির বাসিন্দা প্রলয় রায়ের মন্তব্য: “অধিকাংশ জায়গায় স্তম্ভ থাকলেও তাতে আলো জ্বলে না। আবার কিছু জায়গায় জ্বললেও তা পর্যাপ্ত নয়।” হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বললেন, “পূর্ত দফতরকে রাস্তাটির সংস্কারের জন্য জানিয়েছি। আলোর বিষয়ে কাউন্সিলর মারফৎ কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে।”
পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার দেবাশিস দেবনাথ বলেন, “রাস্তাটির যে অংশগুলিতে গর্ত হয়েছিল সেগুলি সারানো শুরু হয়েছে। তবে দাশনগর তদন্ত কেন্দ্র থেকে বালিটিকুরি পর্যন্ত কেএমডব্লিউএসএ-র পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলেই সেখানেও কাজ হবে। রাস্তার পুরোপুরি সংস্কারের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।”

ছবি রণজিৎ নন্দী
First Page

Howrah

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.