|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
জঙ্গিদের ভাঙন |
নাগা জঙ্গি সংগঠন এন এস সি এন-এর খাপলাঙ গোষ্ঠীর নেতা এস এস খাপলাঙ নিজেই তাঁহার সংগঠন হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছেন। তাঁহার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের অভিযোগ, তিনি একনায়কের মতো আচরণ করিতেছিলেন। এ ধরনের আচরণের সর্বশেষ নজির সংগঠনের ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ খোলে কনিয়াককে বরখাস্ত করা। গোষ্ঠীর নূতন নেতাও হইয়াছেন এই কনিয়াকই। এখন খাপলাঙ যদি অনুগামীদের লইয়া নিজের স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈয়ার করেন, তবে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদের সমস্যা আরও জটিল হওয়ারই সম্ভাবনা। কারণ ইতিমধ্যেই সরকার নাগাল্যান্ডে শান্তি ফিরাইতে মুইভা-ইসহাক গোষ্ঠীর এন এস সি এন-এর সহিত আলোচনা চালাইতেছে। আলোচনায় এখনও তেমন কোনও বরফ গলনের সম্ভাবনা দেখা না গেলেও অন্তত জঙ্গি নাগাদের বৃহত্তম গোষ্ঠীটি যে অস্ত্র-সংবরণ করিয়া আছে এবং নাশকতা ও অন্তর্ঘাতের পথ পরিহার করিয়া আলোচনার চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষায় রহিয়াছে, সেটাও কম কথা নয়। খাপলাঙ গোষ্ঠীও সরকারের সহিত সমান্তরাল আলোচনা চাহিলেও মুইভা-ইসহাকদের আপত্তিতে তাহা করা যায় নাই। এখন খাপলাঙ নিজেই বহিষ্কৃত। তিনি তৃতীয় একটি জঙ্গি সংগঠন গড়িলে মুইভা-ইসহাকদের সহিত সরকারের আলোচনার বৈধতা যে কিছুটা হ্রাস পাইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বড়ো, ত্রিপুরি, মণিপুরি, এমনকী আল্ফা জঙ্গিদের মধ্যে এ ধরনের বিভাজন বার বার লক্ষিত হইয়াছে। সাধারণত শীর্ষ নেতার অহমিকা, ঔদ্ধত্য, একতরফা সিদ্ধান্ত লওয়ার প্রবণতা, স্বজনপোষণ এবং পক্ষপাত অন্য নেতাদের তাঁহার প্রতি বিরূপ করিয়া তোলে। ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাতও প্রায়শ গুরুত্বপূর্ণ হইয়া ওঠে। আর সরকার যখন জনজাতীয় স্বায়ত্তশাসনের আশ্বাস লইয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেন, তখন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও আরও জঙ্গি কোনও নেতা আলোচনাকারীদের আপসকামী ও আত্মসমর্পণকারী আখ্যা দিয়া সমান্তরাল জঙ্গিয়ানার সূচনা করেন। ত্রিপুরি ও বড়ো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে এ রূপ বিভাজন ও ভাঙন একাধিকবার দেখা গিয়াছে। সম্প্রতি অরবিন্দ রাজখোয়া সহ আল্ফার গোটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সরকারের সহিত আলোচনায় সম্মত হওয়ার পরেও ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ পরেশ বড়ুয়া অনুগামীদের লইয়া মায়ানমারের জঙ্গল হইতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নাশকতা চালাইয়া যাইতেছেন। ক্রমে তিনিই নিশ্চয় নিজেকে প্রকৃত আল্ফা এবং শান্তিকামীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিবেন। ইহাই পরিচিত পরম্পরা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হইতে পারে, জঙ্গিদের মধ্যে এই ভাঙন বা বিভাজন সরকারের পক্ষে একটি ইতিবাচক ঘটনা, যেহেতু এ ধরনের ভাঙনে জঙ্গিরাই দুর্বল হয়। বাস্তবে কিন্তু সরকার ইহার ফলে সমস্যায় পড়িয়া যায়। জঙ্গিদের যে গোষ্ঠীর সহিত কথা চলিতেছে, তাহার বিরুদ্ধ গোষ্ঠী অতিরিক্ত বিপ্লবী সাজিয়া আলোচনা বানচাল করিতে নাশকতা তীব্রতর করে। আবার তাহাদের সহিত আলোচনা শুরু করিলে অন্য একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী অনুরূপ তৎপরতা শুরু করে। সকলেরই লক্ষ্য সরকারের কাছে কল্কে পাওয়া, স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর হইলে সেই শাসনক্ষমতা হাসিল করা। কিন্তু একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসিতে তাহারা নারাজ, পাছে সেই ক্ষমতার ভাগ কমিয়া যায়। খাপলাঙ তাঁহার সংগঠন হইতে বহিষ্কৃত হওয়ায় মায়ানমারে তাঁহার ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবির হাতছাড়া হইবে। ইহাতে ভারত লাভবান হইতে পারে। জঙ্গিরা ভারতের মাটিতে নাশকতা চালাইলে তাহাদের মোকাবিলা যত সহজ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকিলে ততই কঠিন। |
|
|
|
|
|