|
|
|
|
|
তামিলনাড়ুর ধাঁচে ‘স্বাস্থ্য
জেলা’র দাওয়াই মমতার
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
পশ্চিমবঙ্গের শহরতলি ও গ্রামাঞ্চলে বেহাল স্বাস্থ্যের ছবি বদলাতে দাওয়াই হতে চলেছে ‘তামিলনাড়ু মডেল।’ তামিলনাড়ুর ধাঁচেই ‘হেলথ ডিস্ট্রিক্ট’ বা ‘স্বাস্থ্য-জেলা’ তৈরি করে জেলাগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের কর্মসূচির আওতায় গত ৩ মে থেকে ৫ মে তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরি-সহ কয়েক জন অফিসার। সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কয়েকটি দিক তাঁদের মুগ্ধ করেছিল। মমতা স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে স্বাস্থ্যকর্তারা সেই প্রসঙ্গ তোলেন। শোনার পরে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব মমতার পছন্দ হয় বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। তিনি তখনই স্বাস্থ্যকর্তাদের এ ব্যাপারে খসড়া তৈরির নির্দেশ দেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গকে মোট ৩৮টি ‘স্বাস্থ্য-জেলা’য় ভাগ করা হবে।
স্বাস্থ্য-জেলা ব্যাপারটা ঠিক কী? শুভময়বাবুর ব্যাখ্যা, একটি জেলায় সাধারণত একটি সদর হাসপাতাল ও এক জন মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা থাকেন। তার বদলে এই ব্যবস্থায় এক-একটি জেলাকে দুই থেকে তিনটি ‘স্বাস্থ্য-জেলা’য় ভাগ করা হবে। ধরা যাক, বর্ধমান শহর ও তার আশপাশের কিছু অঞ্চল এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে একটি ‘স্বাস্থ্য-জেলা’ হল। বর্ধমান শহর থেকে ওই জেলারই সালানপুরের দূরত্ব ১৪৩ কিলোমিটার। সেখানে কিছু এলাকা নিয়ে তৈরি হল আর একটি স্বাস্থ্য জেলা। সেখানকার কোনও বড় মহকুমা হাসপাতাল হবে ওই স্বাস্থ্য-জেলার প্রধান হাসপাতাল। প্রতিটি ‘স্বাস্থ্য-জেলা’য় আলাদা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাও থাকবেন। তাতে জেলার প্রত্যন্ত অংশের মানুষকেও পরিষেবা দেওয়া সুবিধাজনক হবে। একই সঙ্গে এর ফলে জেলার কোনও একটি বড় হাসপাতালের উপর রোগীর চাপ যেমন কমবে, তেমনই চাপ কমবে কলকাতার হাসপাতালগুলিরও।
এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, “তামিলনাড়ুর জেলাগুলির আয়তন এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম। তা সত্ত্বেও জেলাগুলিকে ৪৩টি ‘স্বাস্থ্য-জেলা’য় ভাগ করা হয়েছে। এতে জেলার কোনও একটি প্রধান হাসপাতালের উপর চাপ পড়ছে না। রোগী ‘রেফার’-ও কমেছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছনোও অনেক সহজ হচ্ছে।” পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি এমনিতেই আয়তনে বড়। ফলে একটিপ্রধান জেলা হাসপাতাল দিয়ে পরিষেবা চালানো কঠিন। এক জন মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার পক্ষে সবটা সামলানোও অসুবিধাজনক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। |
স্বাস্থ্য ভাবনা |
|
•গড়া হবে ৩৮টি স্বাস্থ্য জেলা |
•স্বাস্থ্য নিগম মারফত ওষুধ ক্রয়, বিক্রয় ও বণ্টন |
•জেনেরিক নামে লেখা হবে ওষুধ |
•ওষুধের হিসেব রাখতে হাসপাতালের পাশ বই |
|
এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “এ বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে। যেখানে যা ভাল, মুখ্যমন্ত্রী সেটা গ্রহণের পক্ষপাতী।” এ ক্ষেত্রে অসুবিধা একটাই। মহকুমা হাসপাতালগুলির পরিষেবা বাড়াতে প্রয়োজন আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। স্বাস্থ্যকর্তাদের আশা, আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ব্যবস্থা হবে।
এর আগে তামিলনাড়ুর হেলথ কর্পোরেশনের অনুকরণে নিগম গঠন করেছিল পশ্চিমবঙ্গও। কিন্তু সেই নিগম কার্যত অকেজো হয়ে রয়েছে। নতুন কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজের বাড়ি তৈরির দায়িত্ব সম্প্রতি তাদের দেওয়া হয়েছে। সেই কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তামিলনাড়ু সফরে সেখানকার ‘হেলথ কর্পোরেশনে’র মাধ্যমে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ওষুধ কেনার ব্যবস্থাও পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তাদের ভাল লেগেছে। সেই ভাবে এখানেও স্বাস্থ্য নিগমকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, তামিলনাড়ুতে প্রত্যেক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটা করে ‘পাশ বই’ থাকে। কর্পোরেশন কবে কত ওষুধ দিচ্ছে, তা সেখানে তুলে রাখা হয়। বছরের প্রথমে প্রত্যেক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওষুধের জন্য কত টাকা তাদের বরাদ্দ রয়েছে। পাশ বই থাকে বলে কোনও ওষুধ পুরোপুরি ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার তা কেনার কথা কর্পোরেশনকে জানাতে পারে। স্বাস্থ্য কর্পোরেশনই হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান ইউনিট ও ওষুধের দোকান চালায়। চিকিৎসকেরা ‘জেনেরিক’ (ওষুধের উপাদানগত নাম) নামে ওষুধ লেখেন। ফলে হাসপাতালে ওষুধ সংস্থার প্রতিনিধিদের দেখা যায় না। হুবহু এই ব্যবস্থাই পশ্চিমবঙ্গে চালু করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। |
|
|
|
|
|