বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল মেলার আশা বনগাঁ পুর এলাকায়
পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পরিশোধিত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে বনগাঁ পুর এলাকায় একটি ওভারহেডেড রিজার্ভার এবং তিনটি আয়রন এলিমিনেশন প্ল্যান্ট বসানো হয়েছিল কয়েক বছর আগে। সে জন্য আটটি পাম্পহাউসও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু শহরবাসী আজও বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পান না। যদিও পাইপলাইনের মাধ্যমে রাস্তার ধারের ট্যাপকলে জল সরবরাহ হয় প্রতি ওয়ার্ডে। যদিও ওই জল আর্সেনিকমুক্ত নয়।
এ বার পুরএলাকার নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছনোর কাজে উদ্যোগী হয়েছে কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভা। সম্প্রতি পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য এই পরিষেবার দাবি জানিয়ে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রকল্পটি চালু করতে পরিকাঠামোগত কী কী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন, তার বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে জমাও দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ছাড়াও মন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ ও বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, সুব্রতবাবু গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। গোপালবাবু বলেন, “মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী এক মাসের মধ্যে তিনি দফতরের বাস্তুকারদের নিয়ে সরেজমিনে এসে প্রকল্পটি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।”
পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর স্বপন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বাড়ি বাড়ড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার দাবি বনগাঁবাসীর দীর্ঘ দিনের। নতুন পুরবোর্ডের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” কয়েক মাস আগে বিধায়ক থাকাকালীন গোপালবাবু সংশ্লিষ্ট দফতরের বার বার আবেদন জানিয়েছিলেন, বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও যেহেতু এই পুরসভায় বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল, সে কারণে দাবি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি রাজ্য সরকার।
১৯৫০ সালে তৈরি হয়েছিল বনগাঁ পুরসভা। বর্তমানে পুর এলাকায় জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮৮৭ জন। পুরসভার মোট এলাকা ১৫.০২৭৪ স্কোয়ার কিলোমিটার। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯৮২ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ দফতর এই পুরসভায় পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করে এবং তারা নানা রকম কারিগরী সহায়তাও করে। স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ের কাছে ১৯৮৬ সালে একটি রিজার্ভার তৈরি করা হয়। পুরসভা সূত্রে জানা হয়েছে, রিজার্ভার ছাড়া বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। ১৯৮৬ সালে তৈরি ওই রিজার্ভার থেকে সুযোগ পাবে মাত্র ৪টি ওয়ার্ড। যেখানে জনসংখ্যা ২২,৯২৪ জন। পুর এলাকায় বর্তমানে ১৪,৪৩১টি বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার আছে। তাদেরকেও জল দেওয়া যায়নি। বনগাঁ পুরসভা একটি মহকুমা শহর। যা রাজ্যের অন্যতম পুরনো পুরসভাগুলির মধ্যে একটি। শহরটি বাংলাদেশে যাওয়ার প্রবেশদ্বার।
মন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পরিুস্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সমস্যা বর্তমানে ভয়াবহ। সমস্যা আরও বাড়ে গরমকালে। এই পুর এলাকায় জলের একমাত্র উৎস ইছামতী নদীটি মৃতপ্রায়। নদীতে জোয়ার-ভাটা বন্ধ। সে কারণে এখানে বেশিরভাগ মানুষ ভুগর্ভস্থ জলের উপরে নির্ভরশীল। পুরসভার পক্ষ থেকে মোট ২২টি ওয়ার্ডে ২০০টিরও বেশি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। যদিও ওই জল পানের উপযুক্ত বা আর্সেনিকমুক্ত নয়। ইছামতীর জল পরিশোধন করে পানের উপযোগী করে তোলা সম্ভব। প্রতিদিন পুরএলাকায় প্রয়োজন ১০ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৭০ লিটার জল। মন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে, রিজার্ভার এবং আয়রন এলিমমিনেশন প্ল্যান্টগুলির আধুনিকীকরণের প্রয়োজন। পানীয় জল সরবরাহের এলাকা বাড়াতে হবে। জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে এবং পানীয় জলের বাড়ি বাড়ি সংযোগ দিতে হবে।
মন্ত্রীর পাশাপাশি মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরের মুখ্যবাস্তুকারের কাছেও একটি চিঠি দিয়েছেন জ্যোৎস্নাদেবী। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পুর এলাকার এক হাজার বাড়িতে পানীয় জলের লাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অতীতে ওই কাজের জন্য রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে টাকাও জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এ বার আমাদের দাবি মিটবে।”
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.