|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
কমিশন কেন |
কলেজ সার্ভিস কমিশনকে কী করিয়া সংস্কার করা হইবে, তাহা লইয়া নূতন রাজ্য সরকার বড়ই চিন্তায় পড়িয়াছে। কাহারা কমিশনের সদস্য হইবে, কী তাহার ভূমিকা হইবে, এই সকল প্রশ্ন সরকারকে বড়ই ভাবাইয়া তুলিয়াছে। এই শিরঃপীড়া নেহাত অকারণ। কলেজ সার্ভিস কমিশনের পুনর্গঠন করিবার কোনও প্রয়োজন নাই। তাহার সম্পর্কে একটি সিদ্ধান্তই যথাযথ বাতিল করা। তাহা বাতিল করাই সরকারের কর্তব্য। এই কমিশন কেবল অপ্রয়োজনীয় নহে, ইহা শিক্ষার উৎকর্ষের বিরোধী। কলেজ সার্ভিস কমিশনের ব্যর্থতার কারণ কেবল এই নহে যে তাহার সদস্যরা রাজনীতি-প্রভাবিত, অদক্ষ অথবা উদাসীন। এমন একটি কমিশন থাকাই উচ্চশিক্ষার স্বার্থের জন্য হানিকর। তাহার কারণ দুইটি।
এক, শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থার মধ্যে ক্ষমতার যে কেন্দ্রীকরণ রহিয়াছে, তাহার অপব্যবহার সহজ এবং স্বাভাবিক।
দুই, কোন কলেজে কোন শিক্ষক কাজ করিবেন, তাহা স্থির করিবার ভার কমিশন লইবার ফলে কলেজগুলি তাহাদের স্বাতন্ত্র্য এবং সক্ষমতা হারাইয়াছে। কলেজগুলির মধ্যে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবার উৎসাহই জন্মায় নাই। ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ করিবার মানসিকতা লইয়া শিক্ষকরা প্রশাসন এবং শিক্ষকতা করিয়া যাইতেছেন।
উন্নত দুনিয়ায় কিন্তু সচরাচর এইরূপ প্রথা নাই। সর্বত্রই কলেজগুলিকে প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য দেওয়া হইয়াছে, যাহার অঙ্গ রূপে তাহাদের পছন্দের শিক্ষককে নির্বাচন করিবার অধিকার দেওয়া হইয়াছে। ইহার ফলে ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকলেরই মঙ্গল। উত্তম ছাত্র এবং গবেষকদের আনিবার জন্য কলেজগুলি আগ্রহী হইবে, তাহাদের সুযোগসুবিধা দিবার জন্য সচেষ্ট হইবে, কারণ কলেজগুলিকে ছাত্রদের আকর্ষণ করিতে হইবে। বর্তমানেও ইহা স্পষ্ট যে, ছাত্ররা কলেজগুলির মান সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে বিভাগে উত্তম শিক্ষকরা পড়াইতেছেন, সেই বিভাগে তাহাদের পড়িবার আগ্রহ চোখে পড়িবার মতো। ফলে নিম্নমানের শিক্ষক নিয়োগ কলেজের গ্রহণযোগ্যতা কমাইবে, এই বোধ হইতে কলেজের আধিকারিকরা স্বজনপোষণ করিতে দ্বিধা করিবেন। কলেজের প্রতি ভাল ছাত্ররা আগ্রহ হারাইলে তাহা আধিকারিকদেরই দায়, সেই দায় এড়াইবার উপায় তাঁহাদের থাকিবে না। উত্তম ছাত্ররা কলেজের প্রতি আগ্রহী হইলে পরীক্ষার ফলে তাহার প্রতিফলন ঘটিবে। তাই নিয়োগের এই বিকেন্দ্রিত ব্যবস্থায় বর্তমান ব্যবস্থার চাইতে অধিক স্বচ্ছতার সুযোগ রহিয়াছে, ন্যায্য নির্বাচনের প্রতি অধিক আগ্রহেরও কারণ রহিয়াছে। উৎকর্ষের মূলে রহিয়াছে প্রতিযোগিতা। আরও ভাল পঠনপাঠন, আরও উত্তম গবেষণা, আরও দক্ষ প্রশাসন, এমন অনেকগুলি বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরস্পরের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করিলে উৎকর্ষ তৈরি হইবার প্রথম শর্তটিই পূরণ হয় না। যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রে রহিয়াছেন শিক্ষক, তাই শিক্ষক নির্বাচনের বিষয়টি কলেজের আধিকারিকদের থেকে কাড়িয়া লইলে তাঁহাদের প্রতি অন্যায় করা হয়। রাজ্য সরকার শিক্ষার মান উন্নয়ন করিতে অমর্ত্য সেন, সুগত বসু, অভিরূপ সরকার, সুগত মারজিৎ-এর ন্যায় শিক্ষকদের আহ্বান করিয়াছে। এই শিক্ষকরা যে সকল প্রতিষ্ঠানের সহিত যুক্ত, সেই সবগুলিই স্বশাসিত, যেখানে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণই তাহাদের নিজস্ব নির্বাচনের অধীন। ইহারা অবশ্যই প্রতিভাবান, কিন্তু ইহাদের অসামান্য সাফল্যের জন্য ইহাদের প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষও যে কাজ করিয়াছে, তাহা অনস্বীকার্য। ইহাদের ডাকিয়া যদি উৎকর্ষ-বিরোধী এক কমিশনের সদস্য করা হয়, তাহা হিতে বিপরীত ভিন্ন অপর কী হইতে পারে? |
|
|
|
|
|