|
|
|
|
ফের দুর্ঘটনায় খুদে পড়ুয়াদের স্কুলগাড়ি |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বাড়ি ফেরার পথে বড়সড় দুর্ঘটনার কবল থেকে বাঁচল ১৬ জন স্কুলপড়ুয়া।
বেপরোয়া ভাবে স্কুলগাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে রেলিং ভেঙে উল্টো দিকের রাস্তায় ঢুকে পড়ে গাড়িটি। ভাঙা রেলিংয়ের কিছুটা ঢুকে যায় গাড়ি ভেদ করে। আহত হয় এক জন খুদে পড়ুয়া। বাকিরা অল্পের জন্য রক্ষা পায়। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের সামনে। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা বিপ্লব মিত্র (২৬) নামে ওই চালক গ্রেফতার হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ মধ্য কলকাতার একটি স্কুলের প্রাথমিক শাখার একদল খুদে পড়ুয়াকে নিয়ে একটি স্কুলগাড়ি এপিসি রোড ধরে শ্যামবাজারের দিকে যাচ্ছিল। ডেন্টাল কলেজের সামনে অত্যধিক দ্রুত গতিতে যেতে গিয়ে স্কুলগাড়িটি রাস্তার ডিভাইডারে জোরে ধাক্কা মারে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, কর্তব্যরত এক ট্রাফিককর্মী জানান, এত জোরে ধাক্কা লাগে যে, ডিভাইডারের রেলিং ভেঙে গাড়িটি রাস্তার একেবারে উল্টো দিকে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ফুটপাথের কয়েক জন হকার জানান, রেলিং ভেঙে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন ও বনেটের মাঝখানে ঢুকে যায়।
মুচিপাড়া থানার পুলিশের অভিযোগ, স্কুলগাড়ির চালক বিপ্লব মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ট্রাফিক পুলিশের অভিযোগ, বিপ্লবের কাছে গাড়ির কাগজপত্র ছিল না। এমনকী, ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে পারেননি তিনি। শিয়ালদহ ট্রাফিক পুলিশের অফিসার ও কর্মীরা জানান, গাড়িতে ছিল ১৬ জন পড়ুয়া। নর্দার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা জ্যোতিরিন্দ্র দাস নামে চার বছরের এক পড়ুয়া পায়ে চোট পায়। বাকিরা অক্ষত। |
|
দুর্ঘটনার পরে খুদে পড়ুয়াদের উদ্ধার করে বাড়ি পাঠাচ্ছেন
এক ট্রাফিককর্তা। বৃহস্পতিবার, কনভেন্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র্র |
মৌলালি এবং শিয়ালদহ উড়ালপুলের ট্রাফিক সার্জেন্ট এবং কর্মীরাই স্কুলগাড়ি থেকে সব পড়ুয়াকে উদ্ধার করে কনভেন্ট রোডে কলকাতা পুরসভার ‘রোড রোলার’ বিভাগের কার্যালয়ে নিয়ে যান। স্কুলগাড়ির চালককেও আটক করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। শিয়ালদহ ট্রাফিক গার্ডের ওসি তপনকুমার মিত্র জানান, পড়ুয়াদের স্কুলের ডায়েরি থেকে তাদের বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর জোগাড় করে অভিভাবকদের খবর দেন ট্রাফিক গার্ডের কর্মীরা। দু’জন অভিভাবক কনভেন্ট রোডে এসে তাঁদের ছেলেদের নিয়ে যান। তাদের এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা করান পুরসভার কর্মীরা। বেলা দেড়টা নাগাদ কয়েকটি গাড়িতে ট্রাফিক কর্মীদের সঙ্গে দিয়ে বাকি ১৪ জনকে বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।
ওই স্কুলগাড়ি চালকের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যেক পড়ুয়াকে বাড়ি পৌঁছতে অত্যধিক না-হলেও জোরেই তাঁকে গাড়ি চালাতে হয়। এ দিনও স্কুল থেকে বেরিয়ে মৌলালি মোড় থেকে বাঁ দিকে গাড়ি ঘুরিয়েছিলেন তিনি। ডেন্টাল কলেজের কাছে তাঁর সামনে থাকা একটি ট্যাক্সি আচমকাই রাস্তার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে চলে যায়। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের দিকে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে দেন বলে জানিয়েছেন বিপ্লব।
তিনি কি নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন? বিপ্লবের জবাব, “হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আমায় পরীক্ষা করিয়েই তো পুলিশ তা জানতে পারবে।”
এ দিন কনভেন্ট রোডে পুরসভার কার্যালয়ে বসেও ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল খুদে পড়ুয়ারা। বেদান্ত দত্ত, জ্যোতিরাদিত্য দাস, ঈশান জয়সোয়াল, অর্পণ গড়াইরা বলে, “হঠাৎ দুম করে আওয়াজ হল। আমরা জোরে সামনে ঝুঁকে পড়লাম। এ-ওর গায়ে পড়ে গেলাম। খুব গরম লাগছিল আর জল তেষ্টা পাচ্ছিল।” ঈশানের বাবা পঙ্কজ জয়সোয়াল বলেন, “এ রকম ঘটনা এই প্রথম হল। ওই স্কুলগাড়িতে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতাম না। এ বার তো ভাবতে হবে আর ওই গাড়িতে পাঠাব কি না।
এ দিকে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কনট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে রাজ্য পরিবহণ দফতর স্কুলগাড়ি চালানোর ব্যাপারে যে সব নির্দেশ দিয়েছিল সেগুলি অনেকাংশেই মানা হচ্ছে না। এ দিনের দুর্ঘটনা তারই ফল। তাঁর আরও অভিযোগ, এ দিন ওই গাড়িতে ১৬ জনকে তোলা হয়েছিল। তা নিয়মবিরুদ্ধ। ‘পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক আবির রায় বলেন, “পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী চালক নেশাগ্রস্ত ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। অধিকাংশ স্কুলগাড়ির বৈধ লাইসেন্স না-থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।”
অন্য দিকে, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ হেস্টিংস এলাকায় কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস শাখার একটি গাড়ির সঙ্গে ট্যাক্সির ধাক্কায় তিন পুলিশকর্মী জখম হন।
পুলিশ জানায়, ডি এল খান রোডে দাঁড়িয়েছিল ওয়্যারলেস শাখার গাড়িটি। পিছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে এসে একটি ট্যাক্সি সেটিকে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় ট্যাক্সির এক যাত্রীও আহত হন। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে গাড়িটিও। |
|
|
|
|
|