|
|
|
|
ঘুঘনি বিক্রেতার কাছেও চোলাই, নীরব প্রশাসন |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² কাটোয়া |
শহর ছাড়িয়ে গ্রাম, যে দিকেই চোখ যাবে, রমরমিয়ে চলছে বেআইনি মদের দোকান। রাস্তার উপরে প্রকাশ্যেই চলছে মদের ঠেক। ইতিমধ্যেই বিষ মদে তিন জনের মৃত্যুর পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের।
পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ব্যান্ডেল-কাটোয়া ডাবল লাইন তৈরির কাজ চলছে। কাটোয়া শহরে লেভেল ক্রসিংয়ের ধারে থাকা দখলদারদের ইতিমধ্যেই উচ্ছেদ করেছে রেল। সেই জায়গাগুলিতে রাখা হয়েছে ‘স্লিপার’। আর ওই ‘স্লিপার’গুলির ফাঁকে লক্ষ করলেই দেখা যাবে, রয়েছে মদের বোতল। দিন-রাত ওই জায়গা থেকে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি মদ। তাও প্রকাশ্যে।
কিছুটা দূরেই কাটোয়া স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে পানুহাটে যাওয়ার একটি রাস্তা আছে। ওই রাস্তায় চাঁদোয়া টাঙিয়ে দিনের বেলাতেও বিক্রি হয় চোলাই। ছাউনির নিচে বসানো থাকে দু’টি মাটির হাঁড়ি। পাশেই গ্লাস। বিক্রেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায় না। ক্রেতা ছাউনির নিচে এসে দাঁড়ালেই ঠিক উদয় হন তিনি। গ্লাসে চোলাই ঢেলেই ফের উধাও। প্রতি গ্লাস চোলাই মেলে পাঁচ থেকে দশ টাকাতেই। |
|
রেললাইনের ধারে চোলাইয়ের ঠেক। নিজস্ব চিত্র। |
বিধানসভা নির্বাচনের আগেই কাটোয়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মেঝিয়ারি ও দোনা গ্রামে মদ খেয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। গ্রাম্য এলাকায় মুদির দোকানে চাল-ডাল-তেলের সঙ্গে মদের বোতল মেলে। এ রকমই দু’টি দোকানের মদ খেয়েই তিন জনের মৃত্যু হয় বলে গ্রামবাসীরা স্থানীয় কাটোয়া ২ বিডিও-র কাছে অভিযোগ করেন। ওই সময় দিন কয়েক ‘সর্তক’ ছিলেন ব্যবসায়ীরা। পরে আবার শুরু হয় মুদির দোকানে মদের কারবার। কেতুগ্রাম থেকে শ্রীবাটি, বিভিন্ন জায়গায় নকল বিদেশি মদ তৈরি হয়।
প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, কাটোয়া শহরে প্রকাশ্যে ৬২টি জায়গায় বেআইনি মদের কারবার চলে বলে জানানো হয়। শহরের কাশীরাম দাস বিদ্যায়তন মোড় বা কেডিআই মোড়, সর্দার পাড়া, জেটিঘাট, মুচিপুকুর পাড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় মদের কারবার চলে। শহরের সুবোধ স্মৃতি রোড থেকে নন্দদুলাল বসু রোডে যাওয়ার পথে মিলবে বিখ্যাত ‘ক্যারি’। পাউচ প্যাকেটে বিক্রি হয় চোলাই, যা শহরে ‘ক্যারি’ নামে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযাগ, ঘুঘনি ও ফুচকা বিক্রেতার কাছেও মিলবে চোলাই মদ। রাস্তার উপরেই মদের ঠেক থাকায় সন্ধ্যার পরে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়ে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও আবগারি দফতর সব বিষয়েই ওয়াকিবহাল। কিন্তু ওই সব দফতরের কর্মীদের সঙ্গে বিক্রেতাদের ‘বন্ধন’ থাকায় কোনও কিছুই তাঁরা ‘দেখতে’ পান না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলিও ক্ষুব্ধ।
সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সদস্য সুজিত রায় বলেন, “গত বছর পুলিশকে মদের ঠেকের নির্দিষ্ট তালিকা দিই। তখন একটু নড়াচড়া হলেও এখন আবার একই অবস্থা।” কাটোয়ার কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথ সাহার কথায়, “এই ব্যাপারে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত।” শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসার জন্যও আহ্বান জানান বিশ্বনাথবাবু।
আবগারি দফতরের ওসি অবশ্য বলেই দিলেন, “আমরা প্রতি দিনই তল্লাশি চালাচ্ছি। ন্যূনতম পরিকাঠামো নিয়েও চেষ্টা করে চলেছি।” এসডিপিও (কাটোয়া) জ্যোতির্ময় রায় বলেন, “আমরাও বেআইনি মদের ঠেকের ব্যাপারে কঠোর। শহরে বেশ কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই এই কারবার বন্ধ করে দিয়েছি।”
পুলিশ ও আবগারি দফতরের দাবির সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা, তা ভাল ভাবেই জানেন এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। |
|
|
|
|
|