|
|
|
|
মান্নানের ঠাঁই হল না যাদবপুরে, বিধি নিয়ে প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²শ্রীরামপুর |
শেষ পর্যন্ত শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালেই ভর্তি হতে হল আরামবাগের যক্ষ্মা রোগী মান্নান খানকে। সরকারি বিধির জাঁতাকলে পড়ে তাঁর স্থান হল না যাদবপুর টিবি হাসপাতাল বা জলপাইগুড়ি টিবি হাসপাতালে। অথচ মান্নানের যা অবস্থা, তাতে ওই দুই হাসপাতালের কোনও একটিতে জায়গা হলে তবেই তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হত। শ্রীরামপুরের হাসপাতালে তাঁকে ‘সুপারভাইজ ক্যাট-২ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানো হবে।
স্রেফ সরকারি বিধির কারণে যক্ষ্মা আক্রান্ত এক রোগীকে যে ভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে, তাতে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিধি বড়, না জীবন? একটি প্রাণ বাঁচানোর জন্য কোনও অবস্থাতেই কি বিধি শিথিল করা যায় না? মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা মান্নানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে এখনই বিধি পরিবর্তন হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
চিকিৎসার পরিভাষায় মান্নান ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ রোগী। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট ওষুধগুলি তাঁর কাজ করে না। একমাত্র ওই দুই হাসপাতালের কোনও একটিতে ভর্তি হলে তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হত। কিন্তু সরকারি বিধি অনুযায়ী হুগলি জেলার বাসিন্দা হওয়ায় দু’টি হাসপাতালের কোনওটিতেই ভর্তি হতে পারবেন না তিনি। যাদবপুরের হাসপাতালটিতে কলকাতা, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনার রোগীরা ভর্তি হতে পারেন। জলপাইগুড়ির হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের রোগীরা। |
 |
শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালে মান্নান। নিজস্ব চিত্র |
প্রায় দু’বছর ধরে মান্নানের চিকিৎসা চলেছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে মান্নানের বিষয়ে গত ২৩ মে অবগত করেন। এর পরেই রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (যক্ষ্মা) শ্যামাপ্রসাদ বসাক ওই রোগীকে শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। কিন্তু শ্রীরামপুরে একই চিকিৎসা নতুন করে হবে জেনে যেতে চাননি মান্নান। গত ২৮ মে রাজ্য যক্ষ্মা কেন্দ্র থেকে ফের তাঁকে ১০ দিনের মধ্যে ওই হাসপাতালেই ভর্তি হওয়ার কথা বলা হয়।
মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে একই ওষুধ দেখে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। জানতে পারেন ‘ক্যাটিগরি-২’ পদ্ধতিতে তাঁর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। যে চিকিৎসা দীর্ঘদিন হয়েছে আরামবাগে। শ্যামাপ্রসাদবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালে ভর্তি রেখে ‘ক্যাটিগরি-২’ পদ্ধতিতে ৮ মাস ওষুধ খাওয়ানো হবে ওই রোগীকে। তার পরে বেলেঘাটার অ্যাক্রিডেটেড ল্যাবরেটরিতে কফ পরীক্ষা করানো হবে। তখনও যদি দেখা যায় ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’, তখন বিশেষ চিকিৎসা (এমডিআর) হবে।
এ দিন শ্রীরামপুর টিবি হাসপাতালের চিকিৎসক শৈলেন্দ্র লাহা মান্নানকে পরীক্ষা করেন। সুপার বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী জানান, ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা বেশ জটিল। শ্বাসকষ্ট রয়েছে। দু’টি ফুসফুসের অবস্থাই বেশ খারাপ। আজ, বুধবার তাঁর কফ পরীক্ষা করা হবে। প্রয়োজনে আরও দু’একটি পরীক্ষা করানো হবে।
দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, মান্নান শুয়ে রয়েছেন। ক্রমাগত কাশছেন। চোখে জল। সকলকে বলছেন, “এই ওষুধ আমার সহ্য হচ্ছে না। আমাকে অন্য ওষুধ দিন। না হলে মরে যাব।” কাঁদছিলেন তাঁর মা নুূরজাহান বিবিও। তাঁর কথায়, “সবাই বলছে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ছেলেটা ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু তার নাকি নিয়ম নেই। চোখের সামনে জোয়ান ছেলেটা শুকিয়ে যাচ্ছে। কী হবে আল্লা জানেন।” সোমবার আরামবাগ হাসপাতালের টিবি ইউনিটের চিকিৎসক গোবিন্দচন্দ্র মল্লিক ব্যক্তিগত ভাবে ৪০ কেজি চাল এবং ৪০০ টাকা দিয়ে আসেন নুরজাহানের হাতে। এ দিন হাসপাতালে আনার জন্য মান্নানকে যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তখন জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের বলতে শোনা গেল চোখের সামনে ছেলেটা তিল তিল করে মরছে। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল এতই করুণ যে ওঁর চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা যাচ্ছে না। |
|
|
 |
|
|