|
|
|
|
স্বাস্থ্য ভবনে চা খাইয়ে আলাপচারি |
চিৎকার নয়, কর্মীদের ভালবাসা দিয়ে কাজ চান মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²কলকাতা |
এত দিন না-জানিয়েই বিভিন্ন হাসপাতালের হাল দেখতে যাচ্ছিলেন। আর মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হানা দিলেন খাস স্বাস্থ্য ভবনে, সেখানকার কাজের পরিবেশ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে। প্রথম স্বাস্থ্য-সফরে নানা কারণে তাঁর ক্রুদ্ধ মুখ দেখা গিয়েছিল। এ দিন কিন্তু কর্মীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠার তাগিদ লক্ষ করা গিয়েছে তাঁর মধ্যে। কাজ আদায়ের জন্য কড়া দাওয়াইয়ের পরিবর্তে দেখা গিয়েছে ‘ভোকাল টনিক’ প্রয়োগের মুন্সিয়ানা।
স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে এটাই ছিল মুখ্যমন্ত্রী
তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রথম স্বাস্থ্য ভবন পরিদর্শন। দফতরের
কর্তাদের ডেকে তাঁর নির্দেশ, “রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এত দুর্নাম কেন, সেটা আমাদের খুঁজে বার করতে হবে। এক জায়গায় বসে কাজ করলে চলবে না। জেলায় জেলায় ঘুরে রিপোর্ট তৈরি
করুন। কেউ যেন বলতে না-পারেন যে, আমরা কিছু জানি না।” তিনি জানিয়ে দেন, কর্মী কম বলে অজুহাত দিয়ে কাজ ফেলে
রাখা চলবে না।
নিজের ঘরে বসে বৈঠক করার পরে স্বাস্থ্য ভবনের ক্যান্টিনেও ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী। জিজ্ঞাসা করেন, “এখানে ভাল চা পাওয়া যায়? সকলকে চা খাওয়ান তো।” তাঁকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে ভিড় উপচে পড়েছিল। হাসিমুখে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বলেন, “যাঁরা কাজ করেন, আমি তাঁদের সকলকে খুব পছন্দ করি। আর একটা কথা জেনে রাখুন, আমি যখন চেয়ারে বসি, তখন কিন্তু আমি তৃণমূলের কেউ নই। আমি আপনাদেরই এক জন। আর আমার কাছে সবাই সমান। সব কর্মচারীকে আমি খুব ভালবাসি।” প্রথম দিনেই মন্ত্রীর এমন ‘ভোকাল টনিক’-এ দফতরের কর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী সকলেই বেশ উদ্বুদ্ধ।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী বলেন, “কর্মীরা মন্ত্রীর এমন ব্যবহারে অভিভূত। উনি সকলকে সঙ্গে নিয়ে যে-ভাবে কাজ করার কথা বললেন, তার কোনও তুলনা হয় না। এর ফলে কর্মীদের কাজের মানও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।” |
 |
স্বাস্থ্য ভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র |
মহাকরণ থেকে বেরিয়ে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ স্বাস্থ্য ভবনে ঢোকেন মমতা। প্রথমেই নিজের ঘরে বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে আমার অজস্র বার কথা হয়েছে। আমি সবই জানি। এখন পরিস্থিতি কী ভাবে বদলানো যায়, কী ভাবে পরিষেবার মান বাড়ানো যায়, সেটা আমাদের দেখতে হবে।” জেলা স্তরে পরিকাঠামো বাড়ানোর উপরে জোর দেন তিনি। বলেন, “প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গবেষণাগার তৈরি করতে হবে। রক্তপরীক্ষার জন্য কাউকে অন্যত্র পাঠানো যাবে না। কথায় কথায় যেন কলকাতায় ছুটে আসার প্রয়োজন না-পড়ে।”
এর আগে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। শুনেছেন, বহু জায়গায় চিকিৎসকেরাই রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এর পিছনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অসততা ছাড়াও সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত দুর্বলতাও একটা বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি। মমতা বলেন, “এই প্রবণতা ঠেকাতেই হবে। তার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা সবটাই করব।”
যাদবপুরের যক্ষ্মা হাসপাতালের বেহাল অবস্থার কথা উল্লেখ করে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “বাঘা যতীন ও বিদ্যাসাগর হাসপাতালে প্রচুর জায়গা আছে। কী ভাবে সেটাকে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করুন।”
স্বাস্থ্য ভবনের সাধারণ কর্মীদের এ দিন কোনও নির্দেশ দেননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং অনুরোধের ভঙ্গিতে বলেছেন, “এটা জনগণের কাজ। দেখবেন, যেন ঠিকঠাক হয়।” এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে একটি কাগজ নিয়ে যাচ্ছিলেন পেনশন সেলের আধিকারিক ডালি সেনগুপ্ত। তাঁর হাত থেকে কাগজটি চেয়ে নিয়ে দেখেন মমতা। জানতে চান, “কোথাও কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তো?” স্বাস্থ্য ভবনের তেতলার অডিটরিয়ামও ঘুরে দেখেন তিনি। জানান, আগামী সোমবার সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধি সব মিলিয়ে প্রায় ৪০০ প্রতিনিধির সঙ্গে সেখানে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং বা নব মহাকরণে আচমকাই হাজির হয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেখেছিলেন, তাঁর অধীন বিদ্যুৎ দফতরের বেশ কিছু চেয়ার ফাঁকা। অন্য কিছু দফতরে হাজিরার হালও দেখেন তিনি। অনুপস্থিত কর্মী ও কর্তারা কোথায়, উপস্থিত সহকর্মীদের কাছে তারও খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা বাদে তিনি মহাকরণে বলেন, “এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো এক দিনের কাজ নয়। চিৎকার করে এ-সব ঠিকঠাক করা যাবে না। ভালবেসে কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে।”
এ দিন মহাকরণে ঢোকার মুখে সাংবাদিকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, হাজিরার ব্যাপারে তিনি কী ভাবছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জামাইষষ্ঠীর দিন আবার এ-সব প্রশ্ন কেন?” পরে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মীরা একটা পরিবারের মতো। রাজনৈতিক বা আদর্শগত ফারাক থাকতেই পারে। কড়া ব্যবস্থা নিলে লাভ হবে না। কর্মী সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছি। ওঁরা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।”
খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বেলা পৌনে ১২টায় প্রায় ফাঁকা বিভাগ দেখতে হল কেন? বিদ্যুৎসচিব মলয় দে মঙ্গলবার বলেন, “এমনিতে সোমবার এই বিভাগের কিছু কর্মী ছুটিতে ছিলেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও ছিলেন এ-দিক ও-দিকে।” বিদ্যুৎসচিবের দাবি, হাজিরা খাতায় সইয়ের নিয়ম ঠিকঠাকই মানা হচ্ছে। |
|
|
 |
|
|