|
|
|
|
আশঙ্কা দল ভাঙারও |
বহিষ্কৃত জয়ন্তকে ফিরিয়ে ডামাডোলে ফব |
নিজস্ব সংবাদদাতা ²কলকাতা |
দল ‘পুনর্গঠনে’র প্রক্রিয়া শুরু করল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। এবং তা করতে গিয়েই নতুন সঙ্কটের মুখে পড়ল। ভোটে ভরাডুবির পরে এ বার দলে ভাঙনের আশঙ্কাও।
দুর্নীতি এবং আরও কিছু অভিযোগে ৬ বছর আগে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা জয়ন্ত রায়কে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফব। জয়ন্তবাবু জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক নামে যে পৃথক দল গড়েছিলেন, সেই গোটা দলটিকেই ফব-র সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে দু’তরফের আলোচনায়। ঠিক হয়েছে, ২২ জুন ফব-র প্রতিষ্ঠা দিবসের আগেই জয়ন্তবাবুর দলে ফেরার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে পোস্ত কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে তৎকালীন কৃষি বিপণন মন্ত্রী ছায়া ঘোষের সঙ্গেই মুর্শিদাবাদের নেতা জয়ন্তবাবুকে ফ ব থেকে বহিষ্কার করা হয়। ছায়াদেবীর জায়গায় ওই দফতরের মন্ত্রী হন কমল গুহ।
কিন্তু দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত নেতাকে এই সঙ্কট মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না ফব-র রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশ। যার মধ্যে অগ্রগণ্য ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং রাজ্য কৃষি বিপণন পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন চট্টোপাধ্যায়। দলে ‘গণতন্ত্র’ নেই বলে অভিযোগ করে ক্ষুব্ধ নরেনবাবু জানান, দলীয় সহকর্মীদের আলোচনা করে শীঘ্রই ‘একটা সিদ্ধান্ত’ নেবেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ইঙ্গিত, দল ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন তিনি। |
সঙ্কট আঁচ করে ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ মঙ্গলবার বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তে দলের মধ্যে কারও বিভ্রান্তি বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে তাঁরা খোলাখুলি দলের সঙ্গে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে আমি তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে পারি।” বস্তুত, দীর্ঘ ৬৩ বছর ফব-র রাজ্য সম্পাদক পদে-থাকা (এ দেশের রাজনীতিতে যা রেকর্ড) অশোকবাবুর ভার লঘু করার প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে পরপর পদক্ষেপ করা হবে বলে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর। |

অশোক ঘোষ |
|
জয়ন্তবাবুদের ফিরিয়ে আনাও সেই প্রক্রিয়ার অঙ্গ। ফব-র এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “৬৩ বছর এক ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরবর্তী প্রক্রিয়া একটু জটিল তো হবেই। জয়ন্তবাবুর মতো নেতাকে ফিরিয়ে এনে দলের বোঝা করে নিশ্চয়ই রাখা হবে না! তাঁকে সংগঠনে প্রয়োজনীয় জায়গা দেওয়া হবে।” বামফ্রন্টের অন্যতম স্থপতি, প্রবীণ নেতা অশোকবাবু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকার থাকার সময় অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু করেছি। এখন ভেবেচিন্তেই কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।” ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই বামফ্রন্ট বৈঠকে যোগ দিতে আর আলিমুদ্দিনে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন অশোকবাবু।
ফব-র রাজ্য দফতরে এ দিন সকালে দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস এবং জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা জয়ন্তবাবু দীর্ঘ আলোচনায় বসেন। উপস্থিত ছিলেন অশোকবাবুও। দু’তরফের যোগাযোগ অবশ্য ছিল নির্বাচন-পর্ব মেটার পর থেকেই। বৈঠকের পরে যৌথ প্রস্তাবে সই করেন দেবব্রতবাবু এবং জয়ন্তবাবু। দেবব্রতবাবু পরে বলেন, “সোমবারই আমরা বলেছিলাম, নেতৃত্ব এবং সংগঠনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন মুখ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। বামপন্থী ঐক্যকে প্রসারিত করার কথাও বলেছিলাম। সেইমতো আমরাই প্রথম পদক্ষেপ করলাম।” জয়ন্তবাবুকে ফেরানো নিয়ে দলে বিদ্রোহের প্রশ্নে দেবব্রতবাবু বলেন, “বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিলে কিছু তো প্রতিক্রিয়া হবেই। আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো মেটাতে হবে।” আর জয়ন্তবাবু বলেন, “ছায়া ঘোষের নেতৃত্বে ১৯৬৫ সাল থেকে আমি ফব-র হয়ে কাজ করেছি। সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। মাঝে কিছু সমস্যা হয়ে ছেড়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এখন বামফ্রন্ট পরাজিত, বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্কট। সরকার না-থাকায় অন্য পিছু টানও নেই। এই সময়ে ওঁদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ফব-য় ফিরে যাওয়াই ঠিক বলে মনে করেছি।” প্রসঙ্গত, ফব-র তরফে মৌখিক প্রস্তাব পেয়ে তাঁদের দলকে মেলানোর লিখিত আবেদন জানান জয়ন্তবাবু।
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্য অভিযোগ ফব প্রত্যাহার করে নেবে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জয়ন্তবাবু। তাঁর কথায়, “এই মুহূর্তে আমি বিতর্ক বাড়াতে চাই না।” অশোকবাবু বলেন, “ওঁর সঙ্গে আমাদের কোনও নীতিগত বিরোধ হয়নি। কিছু অভিযোগ উঠেছিল, দল পরিচালনা নিয়ে কিছু সাংগঠনিক সমস্যাও হয়েছিল বলে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে আর ফেরানো যাবে না, এমন কোনও কথা নেই। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এই বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
‘সর্বসম্মত’ সিদ্ধান্তের কথা একেবারেই মানতে নারাজ নরেনবাবু। জয়ন্তবাবুর বিরুদ্ধে দলের যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল নরেনবাবুরই। তাঁর বক্তব্য, “সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, দিনহাটা-সহ নানা বিষয়েই সাম্প্রতিক কালে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা করা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত তারই চূড়ান্ত উদাহরণ!” প্রতিবাদে তিনি কি অন্য কোনও দলে যোগ দেবেন বা নতুন দল গড়বেন? নরেনবাবুর জবাব, “দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” ফব সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত দু’জন সদস্য, রাজ্য কমিটির প্রায় এক ডজন সদস্য এবং ৫-৬ জন জেলা সম্পাদক রয়েছেন নরেনবাবুর ‘সঙ্গে’। ফব-র সিদ্ধান্তে সব চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয়েছে জয়ন্তবাবুর জেলা মুর্শিদাবাদে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অশোকবাবুর কাছ থেকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও। |
|
|
 |
|
|