ছোট আঙারিয়ায় নতুন করে তদন্তে সিবিআই
শ বছর পরে ফের ছোট আঙারিয়ায় সিবিআই।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু হল প্রায় কফিনে চলে যাওয়া ছোট-আঙারিয়া কাণ্ডের তদন্ত। নথিভুক্ত করা হল সেই বক্তার মণ্ডলের বক্তব্য। যাঁর বাড়ি ঘিরেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় করা সেই ঘটনা। অভিযোগের আঙুল তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সিপিএমের দিকে। তদন্তকারী অফিসারেরা কথা বললেন মামলার পুরনো সাক্ষী এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গেও। ঘুরে দেখলেন ঘটনাস্থল।
এ দিন এলাকা ঘুরে দেখলেন সিবিআইয়ের সেই সব অফিসারেরা, যাঁরা দশ বছর আগের সেই তদন্তের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন না। নতুন করে তাঁরা সমস্ত নথি জোগাড়ে নেমেছেন। এসপি পদের অফিসার অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন। ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি? তা জানতে মঙ্গলবার তাঁরা কথা বললেন এমন এক গ্রামবাসীর সঙ্গে যিনি দশ বছর আগের সে দিন নিজের চোখে গোটা ঘটনা দেখেছেন বলে দাবি করলেন।
সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে প্রায় ভেস্তে যাওয়া মামলা ফের প্রাণ পেয়েছে ‘ফেরার’ এক অভিযুক্ত, সিপিএম কর্মী দিল মহম্মদ গ্রেফতার হওয়ার পরেই। তাঁকে সিবিআই এখন নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। কলকাতায় রেখে টানা দু’দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু মুখ খোলেননি দিল। সিবিআইয়ের এক অফিসারের কথায়, “পোড় খাওয়া অপরাধী যেমন, ঠিক তেমনই একটি কথাও বলতে চাইছে না দিল।” রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে গত ১৫ মে পুরনো এক অস্ত্র-মামলায় গড়বেতার খড়কুশমা থেকে গ্রেফতার হন তিনি। ছোট আঙারিয়া মামলায় তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়ে মেদিনীপুর আদালতে আবেদন করে সিবিআই। গত শনিবার ৭ দিনের জন্য অভিযুক্তকে সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
সিবিআই অফিসারদের মঙ্গলবার নিজের বাড়ির আশপাশ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন বক্তার মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
এ দিকে দিলকে কলকাতায় রেখে অপূর্ববাবুর নেতৃত্বে সিবিআইয়ের ৭ সদস্যের একটি দল সোমবার রাতেই পৌঁছে যায় মেদিনীপুরে। সকালে তাঁরা গড়বেতায় পৌঁছে স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই ছোট আঙারিয়ায় আসেন। বক্তারের বাড়ির অদূরে গাছতলায় দফায় দফায় নিমাই পাত্র, হবিদ আলি খান, শেখ হাবিবুল, ফজলু মণ্ডল, রফিক মণ্ডলদের সঙ্গে কথা বলেন অফিসারেরা। রফিকের বাড়ি চমকাইতলার নিশ্চিন্তপুরে। ২০০১-এর সেই রাতে যে ক’জন বক্তারের বাড়িতে ছিলেন, রফিক তাঁদের এক জন। মঙ্গলবার সিবিআই অফিসারদের কাছে সে রাতের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি। রফিকের দাবি, সদ্য ধরা পড়া দিল মহম্মদই রবিয়াল নামে এক জনকে কুপিয়ে, গুলি করে খুন করে। পাশাপাশি রফিক জানান, সে রাতের হামলায় বক্তারের বাড়িতে জড়ো হওয়া কয়েক জন যেমন নিহত হয়েছিলেন, তেমনই কয়েক জন কোনও রকমে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। রফিক তাঁদেরই অন্যতম।
মেদিনীপুর আদালতে আগের দফায় মামলার শুনানি চলাকালীন এই রফিকও অবশ্য ‘বিরূপ সাক্ষী’ হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “প্রাণে বাঁচতেই মিথ্যে সাক্ষী দিয়েছি। এখন আদালতে গেলে যা সত্যি, তাই-ই বলব।” সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলিদের নামে সরাসরি অভিযোগ করে রফিকের বক্তব্য, “ওরা বলেছিল আদালতে ওদের শেখানো কথার বাইরে একটা কথাও বললে পরিবারের কেউ বেঁচে থাকবে না। ভয়ে তাই মিথ্যে কথাই বলেছি।”
সে-রাতের ঘটনার পর থেকে দশ বছরেও খোঁজ মেলেনি তিলাবেড়িয়ার জয়ন্ত পাত্র, তিলডাঙার মুক্তার আলির। অভিযোগ, খুন করে তাঁদের দেহ লোপাট করা হয়েছিল। এই দু’জনের পরিজনেরাও মঙ্গলবার সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেন। জয়ন্ত-র বৃদ্ধ বাবা নিমাই পাত্র বলেন, “ছেলে সিপিএমের সন্ত্রাসে সে-সময়ে দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া ছিল। ৩ জানুয়ারি কয়েক জনের সঙ্গে ছোট আঙারিয়ায় আসে। তার পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি।”
মুক্তারের বৃদ্ধ বাবা হবিদ আলিও সিবিআইয়ের কাছে তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করেন। ছোট আঙারিয়া লাগোয়া হেতাশোলের শেখ হাবিবুল আবার বলেন, “সে-রাতে বাড়িতেই ছিলাম। বক্তার গিয়ে বলেছিল, ওর বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। ঝোপ-জঙ্গলের পথে এগিয়ে এসে দেখি, আগুন জ্বলছে। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বেশ কয়েক জনের দেহ। ভয়ে রাতেই গ্রাম ছাড়ি।” বক্তারের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রী আনিসা বিবির সঙ্গেও এ দিন আলাদা করে কথা বলেন সিবিআই অফিসারেরা। আনিসা বলেন, “এর আগে মামলা চলার সময়ে আমাদের ধাদিকার এক বাংলোয় নিয়ে গিয়ে শেখানো হত, কী বলতে হবে আদালতে। সিপিএম নেতাদের সঙ্গে ওঁদের এক আইনজীবীও সেখানে থাকতেন। শেখানো বুলির বাইরে একটা কথাও বলার জো ছিল না।”
First Page Medinipur Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.