|
|
|
|
সুর চড়াচ্ছেন যোগগুরুও |
সম্পত্তি থেকে ওষুধ, রামদেবকে ঘিরে তদন্তের জাল ছড়াচ্ছে কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা ² নয়াদিল্লি |
রামদেবের ‘প্রকৃত স্বরূপ ফাঁস করতে’ আদাজল খেয়ে নেমে পড়ল সরকার ও কংগ্রেস। এক দিকে যেমন চড়া সুরে রামদেবের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব, তেমনই রামদেবের সম্পত্তির খতিয়ান, ট্রাস্টের অধীনে ব্যবসা এবং ওষুধ তৈরি সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ খতিয়ে দেখার তোড়জোড় শুরু করছে সরকার। সেই সঙ্গে রামদেবের ছায়াসঙ্গী বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে জাল পাসপোর্ট নিয়ে ঘোরা এবং অস্ত্র আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলা হচ্ছে সরকারের তরফে।
কংগ্রেস ও সরকারি সূত্রে এমন বার্তা দেওয়া হলেও বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ এ-ও বলছেন, সরকার কতটা তদন্ত করবে, তা সময়ই বলবে। এই সব খবর রটিয়ে রামদেবকে সরকার তথা কংগ্রেস-বিরোধী প্রচার থেকে বিরত করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলেই তাঁদের মত।
রামদেব অবশ্য আজও সরকার-বিরোধী আক্রমণ বজায় রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘তাঁর অপরাধের জন্য ক্ষমা’ করে দেওয়ার কথা জানিয়েও তিনি বলেন, “মনমোহন সিংহ ব্যক্তিগত ভাবে সৎ হলেও তিনি দুর্নীতির রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।” |
 রামদেব |

বালকৃষ্ণ |
|
শুধু রামদেব নয়, আন্না হাজারের ব্যাপারেও আগের মনোভাব ছেড়ে এখন প্রকাশ্যেই কড়া অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস। আজ দলের নেতা বি কে হরিপ্রসাদ তাঁকে ‘সঙ্ঘ পরিবারের মুখোশ’ বলে অভিহিত করেছেন। এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করার পাশাপাশি লোকপাল বিল নিয়ে সরকারকে এক হাত নিয়েছেন আন্না-সঙ্গীরা। লোকপাল নিয়ে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে ফের সরব হয়েছেন তাঁরা। আন্না ও তাঁর সঙ্গীদের সম্পর্কে সরকারের মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে আরও একটি বিষয়ে। রামলীলায় শনিবার মধ্যরাতের ‘অপারেশন রামদেব’ নিয়ে ‘ক্ষোভ’ জানাতে বুধবার যন্তর মন্তরে এক দিনের জন্য অনশন-সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিলেন আন্না ও তাঁর সঙ্গীরা। কিন্তু সেখানে পুলিশি অনুমতি মেলেনি। তাই তাঁরা বুধবার রাজঘাটের কাছে অনশনে বসবেন বলে আজ ঘোষণা করেছেন। হরিদ্বার থেকে রামদেবও জানিয়ে দিয়েছেন, কাল তাঁর সমর্থকেরা ওই অনশনে সামিল হবেন।
সরকারের বিরুদ্ধে রামদেব যত আক্রমণাত্মক হচ্ছেন, ততই সুর চড়াচ্ছে কংগ্রেসও। রামদেবের সঙ্গী বালকৃষ্ণকে নিয়ে আজ সরব হন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অভিযোগ যে, বালকৃষ্ণ নেপালের বাসিন্দা। তিনি সেখানে অপরাধ করে ভারতে পালিয়ে এসেছেন। শনিবার রাতের পরে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ জানান, বালকৃষ্ণের পাসপোর্ট নকল বলে অভিযোগ। রামদেবের এই সঙ্গী ৩৪টি বাণিজ্যিক সংস্থার ডিরেক্টর বলেও খবর। এ সবেরই তদন্ত হওয়া উচিত বলে জানান দিগ্বিজয়। আবার সরকারের একটি সূত্র বলছে, রামদেবের ট্রাস্টের নামে বালকৃষ্ণ ও মুক্তা আনন্দ ২০০টি বাণিজ্যিক সংস্থা চালাচ্ছেন। এবং এ সবই হয়েছে গত পাঁচ বছরে। এমনকী বালকৃষ্ণের বিরুদ্ধে জোর করে জমি দখলের অভিযোগও উঠেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও রকম অনিয়মের নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। কিন্তু আয়কর দফতর এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এ বার সব কিছু খতিয়ে দেখবে।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, ধর্মগুরুরাও এখন রামদেবের সম্পত্তির হিসেব খতিয়ে দেখার দাবি তুলছেন। পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী অধ্যক্ষজানন্দ তীর্থ আজ বলেন, “রামদেবের বহু কোটির টাকার সম্পত্তি রয়েছে। এর তদন্ত হওয়া দরকার।” পুরীর শঙ্করাচার্য মুখ খোলায় স্বাভাবিক ভাবেই উজ্জীবিত কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “রামদেব যে সন্ত নন, ব্যবসায়ী, তা ধর্মগুরুরাও বুঝছেন। এখন তাঁরাও একঘরে করে দিচ্ছেন এই যোগগুরুকে।”
এখানেই শেষ নয়। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, রামদেবের আয়ুর্বেদিক ওষুধ মার্কিন মুলুকে বিপণনের অনুমতি পায়নি। এই অবস্থায় আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছেন, বিতর্ক থিতু হলে ওষুধের ফর্মুলা থেকে শুরু করে সব কিছুই খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
সব মিলিয়ে দু’পক্ষই এখনও চড়া সুর বজায় রেখেছে। তার মধ্যেই সরকার-বিরোধী সমালোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সহানুভূতি আদায়ের প্রয়াসও পুরোদস্তুর চালু রেখেছেন রামদেব। ৪ জুন মধ্যরাতে রামলীলা ময়দানে পুলিশের হানার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন বালকৃষ্ণ। তার আগে তাঁকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল ওই দিন সন্ধ্যায় অনশন মঞ্চে। তারও আগে এই ‘অনশন-সত্যাগ্রহে’র জন্য দিল্লিতে বসে বিপুল অঙ্কের তহবিল সংগ্রহ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আজ দিগ্বিজয় তাঁকে নিয়ে সরব হওয়ার পর বিকেলে হরিদ্বারে আত্মপ্রকাশ করেন বালকৃষ্ণ। সাংবাদিক সম্মেলনে কান্নাকাটি করে জানান, তিনি কোনও অনিয়ম করেননি। তাঁর বাবা-মা নেপালি, কিন্তু তাঁর জন্ম হয়েছে ভারতে।
সার্বিক ভাবে স্পষ্ট যে, ‘অনশন’ প্রশ্নে ‘নাটকীয়’ সব ঘটনার প্রবাহ এখনও থামেনি। বরং পুরোমাত্রায় চলছে। কাল রাজঘাটের কাছে আন্না-সমর্থকদের অনশন আটকাতে ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফলে কাল রাজঘাটে পুলিশ বনাম আন্না-সমর্থকদের একপ্রস্থ গোলমালের সম্ভাবনা রয়েইছে। এবং সে ক্ষেত্রে আর এক দফা হইচই যে শুরু হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
তাই আপাতত অপেক্ষা বুধবারের সকালের জন্য।' |
|
|
 |
|
|