|
|
|
|
রোদে দু’ঘণ্টা নাচের মহড়া, অসুস্থ ৮ ছাত্রী |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
চড়া রোদে খোলা মাঠে নাচের মহড়া দিতে গিয়ে মঙ্গলবার অসুস্থ হয়ে পড়ল ৮ জন ছাত্রী। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া ওই ছাত্রীদের আলিপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে সাত জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর এক ছাত্রী, দেবার্পিতা দাস মাস দু’য়েক আগে আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছিল। এ দিন তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়নি।
স্কুল ও অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। তার জন্যই মাস দুয়েক ধরে মহড়া চলছিল। গত দু’সপ্তাহ ধরে এই মহড়া চলছিল টাঁকশালের খোলা মাঠে, চড়া রোদের মধ্যেই।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই স্কুলটি সকাল সাড়ে ছ’টায় শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১১টায়। অভিভাবক ও ছাত্রীরা জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ মহড়া শুরু হয়। শেষ হয় সাড়ে ন’টা নাগাদ। এর পরেই অসুস্থ বোধ করতে থাকে রিয়াঙ্কা চট্টোপাধ্যায়, প্রজ্ঞা ঘোষ, ডোনা ভট্টাচার্য, স্নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমিতা মুখোপাধ্যায়, দেবার্পিতা দাস, অদ্রিজা চক্রবর্তী ও রাজশ্রী ঘোষাল নামে আট ছাত্রী। এদের মধ্যে রিয়াঙ্কা, অদ্রিজা, ডোনা, রাজশ্রী, দেবার্পিতা অচেতন হয়ে পড়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে ছাত্রীরা জানায়, প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে রোদের মধ্যে মহড়া চলায় তাদের মাথা ঘুরছিল। এর পরেই অজ্ঞান হয়ে যায় অনেকে। কেউ কেউ বমি করছিল বলেও জানা গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন ছাত্রী মহড়া দিচ্ছিল। তাদের মধ্যে এরাই শুধু অসুস্থ হয়ে পড়ে।” প্রাথমিক ভাবে স্কুলেই ওই ছাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে শর্মিষ্ঠাদেবী জানান। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবার্পিতার মা ঝুমা দাস জানান, তিনি দশটা নাগাদ খবর পান, মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য এক অভিভাবকের দাবি, তিনি স্কুলগাড়ির চালকের কাছ থেকে ফোনে মেয়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়েছেন।
এই চড়া রোদে কেন খোলা মাঠে ছাত্রীদের মহড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ করেছেন অভিভাবকদের একাংশও। শর্মিষ্ঠাদেবীর দাবি, তাঁরা সকাল সাতটায় মহড়া শুরু করতেন। সাড়ে আটটার মধ্যে তা শেষ হয়ে যেত। যদিও অভিভাবকদের দাবি, ন’টা-সাড়ে ন’টা পর্যন্তও মহড়া চলত। খোলা মাঠে মহড়া নিয়ে তাঁদের আপত্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ। তাঁরা আরও জানান, খোলা মাঠে মহড়ার কথা প্রথমে বলা হয়নি। পরে যখন তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন, তখন মহড়া থেকে মেয়েদের ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, যে সব অভিভাবকেরা এ নিয়ে আপত্তি তুলছেন, তাঁদের মেয়েদের মহড়ায় আসতে বারণ করা হয়েছিল।
স্কুল কতৃর্র্পক্ষ তাঁদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও রোদের মধ্যে একটানা এ ভাবে মহড়া চালানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অঞ্জন সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “এই প্রচণ্ড গরমে এতক্ষণ থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়ারই কথা। ছাত্রীরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তখন কিছু ত্রুটি তো হয়েছেই। পড়ুয়াদের যাতে অসুবিধা না হয়, তা শিক্ষকদেরই খেয়াল রাখা উচিত ছিল। আমরা কৈফিয়ত তলব করব।” এ বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ নেবেন বলেও অঞ্জনবাবু জানিয়েছেন। |
|
|
 |
|
|