দৃষ্টিহীন ছাত্রীকে ভর্তিই নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ
দ্রুত রিপোর্ট চাইল প্রশাসন
‘দৃষ্টিহীন’ হওয়ায় মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করা এক ছাত্রীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার গোস্বামী কাঙ্গালেশ্বর হাই স্কুলে। সোমবার কাবেরি ঘোষ নামে ওই ছাত্রী এই ব্যাপারে মালদহ জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। ২০১০ সালে ওই ছাত্রী মাধ্যমিক পাশ করে। তার পরে পুরাতন মালদহের একটির পর একটি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়। কোথাও ভর্তি নেওয়া হয়নি। এ বার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে নতুন করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে দিন তিনেক আগে ওই ছাত্রী মঙ্গলবাড়ির ওই স্কুলে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ওই ছাত্রী। অভিযোগ পেয়ে নড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ সিংহরায় বলেন, “সরকারি নিয়ম হল দৃষ্টিহীন ছাত্র বা ছাত্রী কোনও স্কুলে পড়াশোনা করতে চাইলে তাকে সেই সুযোগ দিতে হবে। মঙ্গলবাড়ির ওই স্কুলে কাবেরি ঘোষের ভর্তির ব্যাপারে কী হয়েছে সেটা সর্বশিক্ষার প্রকল্প আধিকারিককে দেখতে বলা হয়েছে।”
ছবি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।
সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তিনদিন আগে সে দাদার সঙ্গে মঙ্গলবাড়ির ওই স্কুলে যায়। তার অন্ধত্বের কথা জানার পরে প্রধান শিক্ষক এককথায় ভর্তির আবেদন নাকচ করে দেন। তার কোনও কথাই শুনতে চায়নি ওই শিক্ষক। ওই ছাত্রী বলেন, “আমি পড়তে চাই। প্রধান শিক্ষক আমার কথা না-শুনে গার্ড ডেকে স্কুল থেকে বার করে দেন। তিনি এমনও হুমকি দেন, যতই সরকারি নিয়ম থাকুক না কেন, তাঁর স্কুলে আমার কোনও জায়গা নেই।” ওই ছাত্রীর বাবা প্রভাতবাবু বলেন, “ মেয়েটা অন্ধ হলেও পড়াশোনার খুব ইচ্ছে। গত এক বছর ধরে মেয়েটাকে কোনও স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য ঘুরছি। এ বারও ব্যবস্থা না-হলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সরকারের বক্তব্য, “অন্ধ মেয়েকে পড়াশোনা করতে হলে অন্ধদের স্কুলে যেতে হবে। আমার স্কুলে অন্ধ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পরিকাঠামো নেই। তা ছাড়া ওই ছাত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে? এসব বোঝানোর পরেও ছাত্রীটি পীড়াপীড়ি করায় বলেছিলাম, সে যেখানে খুশি অভিযোগ জানাতে পারে। আমি তাকে স্কুলে ভর্তি নিতে পারব না।” মালদহ জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক চিন্ময় সরকার বলেন, “সরকারি নিয়ম হল অন্ধ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ব্যাপারে কোনও স্কুল প্রত্যাখান করতে পারবে না। কেনওই ছাত্রীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি সেই ব্যাপারে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কাবেরিকে বাড়ির কাছাকাছি কোনও স্কুলে ভর্তি করানো হবে।” কাবেরির বাড়ি পুরাতন মালদহের সারদা কলোনিতে। সে মাধ্যমিক পাশ করে মঙ্গলবাড়ির লাইট হাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড স্কুলে। সে ৪৩২ নম্বর পেয়েছে। তার মধ্যে ভৌত বিজ্ঞানে লেটার মাকর্স পেয়েছে। তার বাবা প্রভাত ঘোষ মঙ্গলবাড়ি বাজারে ডিম বিক্রি করে। তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে কাকলি অবশ্য সুস্থ। জন্মান্ধ ওই ছাত্রী প্রতিদিন স্কুলে যেত দিদির হাত ধরে। কিন্তু মাধ্যমিক পাশ করার পরে বিপাকে পড়ে যায় বন্ধদের ওই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনার ব্যবস্থা না-থাকায়। তার পরেই এলাকার ওই স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন জানায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বিমল পাণ্ডে বলেন, “ওই ছাত্রীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতেই পারতেন।”
First Page Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.