|
|
|
|
|
ফ্রন্ট নেতৃত্বে বদল চাইল
ফব, ক্ষুব্ধ সিপিআইও নিজস্ব সংবাদদাতা ² কলকাতা |
|
দলের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য কমিটির বৈঠকেই তোপের মুখে পড়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এ বার বামফ্রন্টের দুই শরিক প্রকাশ্যে তোপ দাগল সিপিএমের বিরুদ্ধে। ‘ঐতিহাসিক’ বিপর্যয়ের পরে জমি পুনরুদ্ধারে সরাসরি বামফ্রন্টের নেতৃত্ব বদলের দাবি জানাল ফরওয়ার্ড ব্লক। বামফ্রন্ট ছাড়ার কথা না-বললেও আর এক বাম শরিক সিপিআই জানিয়ে দিল, বিপর্যয়ের জন্য দায়ী বড় শরিকের ভুল নীতি এবং ঔদ্ধত্যই।
প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ব্যর্থতা নিয়ে বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুদের সমালোচনায় ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটি। কিরণময় নন্দের সোশ্যালিস্ট পার্টি নির্বাচনী বিপর্যয়ের জন্য সিপিএমকে দায়ী করে বামফ্রন্টে থাকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। এরই মধ্যে ফ ব এবং সিপিআই যে অবস্থান নিল, তাতে হায়দরাবাদে দলের আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগে আরও চাপে পড়লেন বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুরা। ফ ব সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বামফ্রন্ট নেতৃত্ব এবং নীতির বদল না-হলে তারা ‘অন্য রাজনৈতিক অবস্থান’ নিতে ‘বাধ্য’ হবে। অর্থাৎ সিপিএমের প্রতি পুরোদস্তুর ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছে তারা।
ফ্রন্টের মধ্যে শরিকি ঐক্যে বহু বারই টানাপোড়েন এসেছে। কিন্তু নজিরবিহীন নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে সিপিএম যে ভাবে শরিকি আক্রমণের মুখে পড়ল, তা-ও প্রায় বেনজির। অন্য দিক থেকে দেখলে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন সিপিএমকে বাকি শরিকদের থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করে আরও ‘কোণঠাসা’ করে ফেলতে। ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু সে দিকেই এগোচ্ছে।
কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পরে ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস সোমবার বলেছেন, “বামফ্রন্ট নেতৃত্ব সম্পর্কে যে ধারণা মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে, তা আমূল বদলাতে হবে। নেতৃত্বের ভাবভঙ্গি এবং মনোভাব বদলাতে হবে। শুধু জনগণ নয়, এই নেতারা দলের কর্মীদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন! ৩৫ বছর ধরে একটা ধারা যাঁরা চালিয়ে এসেছেন, তাঁদের সামনে রেখে এই কাজ হবে বলে মনে হয় না।” পশ্চিমবঙ্গে ‘নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নতুন নেতৃত্বে’র দাবি তোলা হয়েছে ফ ব-র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে। এই বিষয়ে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট এবং এ বি বর্ধনের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চান বলে দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কারাট এবং বর্ধনের সঙ্গে আমি কথা বলব। পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-সহ যা যা হয়েছে, তাতে কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন ছিল? এ রাজ্যে সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট যে ভাবে চলেছে, সে ভাবেই এখনও চলবে কি না, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তা দেখতে হবে।”
ঘটনা হল, বামফ্রন্টের বিপর্যয়ে ফ ব-র মতো শরিকেরাও অংশীদার। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ রেকর্ড সময় ধরে ওই পদে আছেন। তাঁরা কি নেতৃত্ব বদলাবেন? দেবব্রতবাবু বলেন, “আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কোনও দলেই নেতৃত্ব আকাশ থেকে পড়ে না, আমরা জানি! আমাদের দলে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি, নতুন প্রজন্মকেও আহ্বান জানাচ্ছি।” নেতৃত্ব বদলের এই দাবি কি তাঁরা সরাসরি সিপিএমকে জানাবেন? দেবব্রতবাবুর জবাব, “আলিমুদ্দিন বা এ কে জি ভবনের দরজা-জানালা বন্ধ নেই! তারা নিশ্চয়ই শুনবে। আত্মম্ভরিতা, অহং বোধ ছেড়ে নেতারা নিজেদের পাল্টাতে পারলে ভাল! কিন্তু সেটা জনগণকে দেখাতে হবে। এই নেতৃত্বকে দিয়েই সেটা সম্ভব কি না, প্রশ্ন আছে।”
ফ্রন্টের মধ্যে সিপিএমের ‘একাধিপত্যে’র বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ভাবে সরব হয়েছেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারও। সিপিআইয়ের রাজ্য কর্মসমিতির নির্বাচনী বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের সঞ্চিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বুদ্ধবাবুর নাম না-করেও সালিম গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তিকে তাঁর জীবনের ‘স্মরণীয়’ দিন বলে ঘোষণা, ‘পুঁজির কোনও রং হয় না’ বা ‘আমরা ২৩৫, ওরা ৩০’ জাতীয় মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। মঞ্জুবাবু এ দিন বলেন, “শ্রমিকেরা পি এফ বা অন্য বকেয়া পাননি। অথচ আমরা আন্দোলন করতে পারিনি সরকারের ক্ষতি হবে ভেবে।
বামফ্রন্ট সরকারের সাংবিধানিক কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু বামফ্রন্টের সে সব ছিল না। তা সত্ত্বেও বামফ্রন্ট আর বামফ্রন্ট সরকারকে এক করে ফেলা হয়েছিল।” বিভিন্ন সময়ে সিপিএমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নানা প্রস্তাব বা দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি।
মঞ্জুবাবুর কথায়, “ফ্রন্টের ঐক্যের কথা ভেবে অনেক কথা আমরা বাইরে বলিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, প্রকাশ্যে বলে জনগণকে জানতে দিলে ফ্রন্টের কোনও ক্ষতি হত না। বরং ভাল হত!”
তবে এত সবের পরেও ফ্রন্টের মধ্যে থেকেই ফ্রন্টকে শোধরানো সম্ভব বলে মনে করছেন মঞ্জুবাবুরা। কেন? সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, “আশা করছি, এই বিপর্যয়ের পরে ওঁরা (সিপিএম নেতৃত্ব) কথা শুনবেন। আমাদের বিরোধীরা তো বিকল্প হতে পারেন না! বিকল্প আমাদেরই গড়তে হবে।” |
|
|
|
|
|