|
|
|
|
কংগ্রেস কর্মী-সহ দু’জন ‘অপহৃত’ কোটশিলায় |
প্রশান্ত পাল ²কোটশিলা |
ঘরে ঢুকে গৃহস্থকে দিয়ে রান্না করিয়ে খেয়েছিল তারা। বাড়ির পিছনে বৈঠকও করে। ফেরার সময় ১১ জনের দলটি ওই বাড়িরই এক কংগ্রেসকর্মী এবং এক রাজমিস্ত্রিকে ‘অপহরণ’ করে রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
পুরুলিয়ার কোটশিলা থানার হরতান গ্রামের এই ঘটনা যতটা রহস্যজনক, ঠিক ততটাই ধোঁয়াশা রয়েছে ‘অপহরণকারী’দের পরিচয় নিয়ে। রবিবার রাতে ওই ঘটনা ঘটলেও সোমবার রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। জেলা পুলিশের একাংশ মনে করছে, এর পিছনে মাওবাদীরা থাকতে পারে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “অপহরণের ঘটনার খবর পেয়েছি। তবে কোনও অভিযোগ না হলেও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।” জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, তারা ইতিমধ্যেই বোকারো পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
যে দু’জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাঁদের এক জন হলেন শ্যামাপদ মাহাতো। তিনি এলাকার পরিচিত কংগ্রেস কর্মী হওয়ার পাশাপাশি ঝালদা ২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সভাপতি মেনকা মাঝির দেওর। হরতান গ্রামেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক শ্যামাপদবাবু। অন্য ‘অপহৃত’ নবীন মাঝি শ্যামাপদবাবুর বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। |
|
বাড়িতে ‘অপহৃত’ শ্যামাপদর স্ত্রী ও মা। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
কোটশিলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হরতান গ্রামটির অবস্থান ঝাড়খণ্ড সীমান্তে। ছড়ানো-ছেটানো তিনটি পাহাড়ের মাঝে ছোট্ট জনপদ। এই গ্রামেরই নামোপাড়ার বাসিন্দা মেনকাদেবী ও তাঁর দেওর শ্যামাপদবাবু। তাঁদের যৌথ পরিবার। যথেষ্ট সম্পন্ন। মেনকাদেবীর স্বামী অর্থাৎ শ্যামাপদবাবুর দাদা লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো স্থানীয় রিগিদ পঞ্চায়েতের কর্মী (কর্ম-সহায়ক বা জব অ্যাসিস্ট্যান্ট)। ঘটনার সময় বাড়িতে ওই দু’জন ছাড়াও ছিলেন শ্যামাপদবাবুর স্ত্রী জাহ্নবীদেবী, শাশুড়ি সাবিত্রী মাহাতো। কিছু গ্রামবাসী জানান, তাঁরা রাস্তায় গল্প করছিলেন। হঠাৎই কালো পোশাক পরা জনা ১১-১২ জনের দলটি সেখানে হাজির হয়। সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। আধা বাংলা ও হিন্দিতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল তারা। তাদের হুমকিতে গ্রামের ওই লোকেরা বাড়িতে ঢুকে পড়েন।
সোমবার দুপুরে মেনকাদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, থমথমে পরিবেশ। জাহ্নবীদেবী প্রথমে মুখ খুলতে না চাইলেও পরে বললেন, “মোট ১১ জন এসেছিল। দলে কয়েক জন মহিলাও ছিল। রাত তখন ৮টা-সওয়া ৮টা হবে। আমার স্বামী টিভি দেখছিলেন। সঙ্গে ছিল নবীন। ঘরে ঢুকেই লোকগুলো সদর দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার স্বামী আর নবীনকে বাড়ির পিছনের দিকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়।” ওই অংশে কালো ত্রিপল বিছিয়ে দু’জনকে নিয়ে বৈঠকে বসে দলটি। জাহ্নবীদেবীর কথায়, “আমাদের ওরা রান্না করতে বলে। ভাত-ডাল-আলুসেদ্ধ করে দিই। এ ছাড়া ঘরে কিছু ছিল না।” এ দিনও বাড়ির পিছনে ত্রিপলটি পাতা ছিল। কোন দিকে দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয়, জানতে চাওয়ায় শ্যামাপদবাবুর বৃদ্ধা মা দূরের পাহাড়ের দিকে আঙুল তুলে বলেন, “ওই দিকে নিয়ে গিয়েছে।” ওই রাজমিস্ত্রি কোন গ্রামের বাসিন্দা, তা তাঁরা জানাতে পারেননি। ‘অপরহরণকারী’রা তাদের পরিচয় জানায়নি বলে জানিয়েছেন জাহ্নবীদেবী। তবে তারা ঘণ্টা দুয়েক ওই বাড়িতে ছিল। গ্রামের এক বাসিন্দার অবশ্য দাবি, “দলটি মাঝেমাঝে ‘লাল সেলাম জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিচ্ছিল।” এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেনকাদেবীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইলে তিনি বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।” ভয়ে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন শ্যামপাদবাবুর বাড়ির লোকজন। |
|
|
|
|
|