|
|
|
|
জিতলেও আইপিএলের প্রভাব নিয়ে চিন্তা থাকছে |
দীপ দাশগুপ্ত |
ক্যারিবিয়ানে ভারত দু’টো ম্যাচ খেলে ফেলল। টি-টোয়েন্টিটা ঠিক ছিল। কিন্তু সোমবারের একদিনের ম্যাচটা দেখে তেমন মন ভরল না। এই নাকি বর্তমান ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন?
টি-টোয়েন্টির জমানায় এখন লোকে ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট দেখতে চায়। এখন ওয়ান ডে-তে তিনশো তাড়া করাও অসম্ভব নয়। এই তো বিশ্বকাপ ফাইনালেই ২৭০-এর উপর রান তাড়া করে জিতে গেল ধোনিরা। অথচ এ দিন দেখলাম দুটো টিমই রান তুলতে গিয়ে খোঁড়াল।
বিশ্বকাপ জেতার ঠিক পরেই এই সিরিজটা খেলতে এসেছে ভারত। যে টিমই যাক, বিপক্ষের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ যারা কি না মোটেই শক্তিশালী টিমের পর্যায়ে পড়ে না। লোকে তো চাইবে ওভারে নিদেনপক্ষে একটা বাউন্ডারি দেখতে। কিন্তু সেটা হল কোথায়?
|
|
উইকেট নেওয়ার পর হরভজনকে অভিনন্দন অধিনায়কের। সোমবার পোর্ট অফ স্পেনে। -এএফপি |
মানছি, কুইনস পার্ক ওভালের উইকেট স্লো ছিল। বল পড়ে থমকে আসছিল। কিন্তু তা বলে ২১৪ তাড়া করতে গিয়ে এমন হিমসিম খাওয়ার কোনও যুক্তি পাচ্ছি না। ধওয়ান-পার্থিবদের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা এখনও আইপিএলের দুনিয়ায় পড়ে আছে। ক্রিকেটে ‘গ্রাফটিং’ বলে একটা কথা আছে। মানে, চার-ছক্কা যখন আসছে না তখন খেটে রান নাও। এক-দুইয়ের জন্য লড়ো। কিন্তু ধওয়ানদের মধ্যে ব্যাপারটা দেখতে পেলাম না। ওরা সব সময় চাইছে বড় শট মারতে। আরও সমস্যা হয়ে গেল বিরাট কোহলি তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ায়। এই টিমটা কোহলির উপর অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ যে ভারতীয় দলটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছে, তাদের মধ্যে গত এক বছরে ওয়ান ডে টিমে নিয়মিত সদস্য ও-ই ছিল। |
|
রোহিত শর্মা: ম্যাচ জেতানো ৬৮। -এএফপি |
যদিও কোহলির ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে রোহিত। উইকেটের চরিত্র বুঝে ব্যাটিং করে এ দিন করল অপরাজিত ৬৮। এত দিন ও জাতীয় দলের বাইরে ছিল। এ বার সুযোগ এসেছে, এবং প্রথম ওয়ান ডে-তেই নিজের যোগ্যতা ভাল রকম বুঝিয়ে দিল রোহিত। দরকারে মেরেছে। আবার রান রেট ঠিক রাখার জন্য সিঙ্গলসও নিয়েছে। রায়নার কথাও বলতে হবে। ১০৪-৪ থেকে দু’জন মিলে আশি রানের পার্টনারশিপ দিয়ে গেল দলকে। যা ওই পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড দরকার ছিল। রায়না যখন আউট হল, ততক্ষণে ভারতের জয় অনেকটাই নিশ্চিত দেখাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভারত জিতল ৪ উইকেটে। তাই শুরুতে ঝামেলায় পড়লেও বলব ভারতীয় ব্যাটিংয়ে একটা চেষ্টা ছিল। যা খুঁজে পাইনি ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে। |
|
হাফসেঞ্চুরির পর ধওয়ান। সোমবার পোর্ট অফ স্পেনে। -এএফপি |
অনেকে প্রশ্ন তুলবেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ভারতীয়দের পার্থক্যটা কোথায়? ক্যারিবিয়ানদের মতো ভারতের রান রেটও তো অধিকাংশ সময় চারের আশেপাশে ঘুরেছে। কিন্তু তফাত আছে। শনিবারও দেখেছি, আজও দেখলাম, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ে রীতিমতো পরিকল্পনার অভাব। সারওয়ানের মতো ব্যাটসম্যান ৫৬ করতে প্রায় একশোটা বল নিচ্ছে, ওপেনার এডওয়ার্ডস ২১ করছে ৪৫ বলে! সবচেয়ে বড় কথা ৪৭ ওভারে টিম দুশো পেরোয়নি দেখেও কেউ মারার রাস্তায় যাচ্ছে না! বুঝলাম যে, ওদের ব্যাটিং লাইন আপে এমন কেউ নেই যে বিশ্বের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ঢুকতে পারে। বুঝলাম, শুরুতে তাড়াতাড়ি উইকেট চলে গিয়েছিল। কিন্তু তা বলে একমাত্র ডোয়েন ব্রাভো ছাড়া কেউ ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নেওয়ার রাস্তায় যাবে না? পাওয়ার প্লে ব্যবহারে এত ভুল থাকবে? দু’টো কারণে এ জিনিস হতে পারে। এক) ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কথা ভেবে খেলছে। আর দুই) নিজেদের ক্ষমতার উপর ওদের আস্থা নেই। বরং ভাল লাগল দু’দলের বোলিং দেখে। ভারতের হয়ে হরভজন তিনটে উইকেট নিল। মুনাফ, প্রবীণরাও খুব ভাল বল করেছে। তেমনই ক্যারিবিয়ান বোলারদের কথাও বলতে হবে। রামপল বেশ কয়েক বার বেকায়দায় ফেলেছে ধওয়ান-পার্থিবকে। বিশুর কয়েকটা টার্নও চোখে পড়ল। আর একমাত্র বোলিংয়ের সময়ই ক্যারিবিয়ানদের ছটফটানি দেখা যায়। কারণ স্যামিরাও ভাল রকম জানে যে, ওদের যতটুকু যা শক্তি সেটা বোলিংয়েই। |
|
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
সিমন্স ক হরভজন বো প্রবীণ ৬
এডওয়ার্ডস ক কোহলি বো হরভজন ২১
ডারেন ব্রাভো ক রোহিত বো মুনাফ ৪
সারওয়ান ক পার্থিব বো মুনাফ ৫৬
স্যামুয়েলস বো রায়না ৫৫
ডোয়েন ব্রাভো স্টা পার্থিব বো হরভজন ২২
বাও এলবিডব্লিউ হরভজন ১৬
স্যামি এলবিডব্লিউ প্রবীণ ৪
রামপল ন.আ. ৯
বিশু এলবিডব্লিউ রায়না ০
মার্টিন ন.আ.২
অতিরিক্ত ১৯
মোট ২১৪-৯ (৫০ ওভারে)
পতন: ২৩, ২৮, ৫৯, ১৪১, ১৭৭, ১৯১, ১৯৮, ২০৪, ২০৬।
বোলিং: প্রবীণ ১০-১-৩৭-২, মুনাফ ৯-১-৪৭-২, অমিত ১০-১-৩৮-০,
হরভজন ১০-০-৩২-৩, ইউসুফ ২-০-১৬-০, রায়না ৬-০-২৩-২, কোহলি ৩-১-১৬-০। |
|
ভারত |
পার্থিব রান আউট ১৩
ধওয়ান ক সিমন্স বো মার্টিন ৫১
কোহলি ক বাও বো রামপল ২
বদ্রিনাথ ক বাও বো বিশু ১৭
রোহিত ন.আ. ৬৮
রায়না ক সিমন্স বো মার্টিন ৪৩
ইউসুফ ক ও বো রামপল ১০
হরভজন ন.আ. ৬
অতিরিক্ত ৭
মোট ২১৭-৬ (৪৪.৫ ওভারে)
পতন: ২৯, ৩৪, ৬১, ১০৪, ১৮৪, ২১০
বোলিং: রামপল ১০-০-৫৮-২, মার্টিন ১০-০-৩৯-২, স্যামি ৯.৫-০-৫২-০,
বিশু ১০-১-৩৭-১, ব্রাভো ২-০-১৭-০, সিমন্স ৩-০-১১-০। |
|
|
|
|
|
|
|
|