|
|
|
|
আজ বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে |
৬০০০ কোটি লগ্নি করতে চায় ‘গেল’ |
জয়ন্ত ঘোষাল ²নয়াদিল্লি |
রাজ্যে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে আগামিকাল কলকাতা যাচ্ছেন গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (গেল) চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি সি ত্রিপাঠী। পশ্চিমবঙ্গে গ্যাস-ভিত্তিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে ছয় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার। কোন কোন প্রকল্পে কী ধরনের বিনিয়োগ তাঁরা করতে চান, ত্রিপাঠী সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সবিস্তার জানাবেন বলে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রের খবর। ‘গেল’-এর প্রকল্প গড়ে উঠলে তা রাজ্যের পক্ষে অত্যন্ত লাভজনক হবে বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের যথেষ্ট সঙ্কট রয়েছে। গত দশ বছরে রাজ্যে সে ভাবে কোনও বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পও গড়ে ওঠেনি। এই অবস্থায় গ্যাস বিকল্প শক্তির উৎস হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত ২০৫০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন পাতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘গেল’-কে। এর মধ্যে ৮২০ কিমি লাইন পাতা হবে পশ্চিমবঙ্গে। যার জন্য বিনিয়োগ হবে তিন হাজার কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশের গ্যাস এলে এক দিকে হলদিয়া ও দুর্গাপুরের সার কারখানাগুলি যেমন লাভবান হবে, তেমনই হলদিয়া, কলকাতা, দুর্গাপুর, সাগরদিঘি ও কাটোয়ার শিল্পাঞ্চলগুলিতেও গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। |
|
প্রকল্প নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলবেন ‘গেল’-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি সি ত্রিপাঠী। |
গ্যাস প্রকল্পের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে একটি ভাসমান ‘স্টোরেজ ও রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট’ তৈরি করতে চায় ‘গেল’। এই প্রকল্প তৈরি হলে প্রতি বছরে তিরিশ লক্ষ মেট্রিক টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে মজুত করা যাবে। যার থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিল্পে গ্যাসের চাহিদা মেটানো যাবে। ‘গেল’ চাইছে, হলদিয়া বন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে এবং দিঘার সমুদ্রতট থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মধ্যে ওই প্রকল্পটি তৈরি করতে। এর জন্য সমুদ্রের নীচ দিয়ে ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন এবং দিঘা থেকে হলদিয়া পর্যন্ত সমুদ্রতট বরাবর ৭৫ কিলোমিটার পাইপলাইন পাতা হবে। প্রকল্পটিতে লগ্নি হবে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। এই দু’টি প্রকল্পের জন্যই জমি প্রয়োজন। আগামিকালের বৈঠকে রাজ্য সরকার যদি জমির ব্যাপারে আশ্বাস দেয়, তা হলেই প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিতে চাইছেন ‘গেল’-কর্তারা।
রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন’-ও অধিগ্রহণ করতে চায় ‘গেল’। ওই সংস্থাটি বর্তমানে ডানকুনি কয়লা কমপ্লেক্স থেকে কলকাতা ও হাওড়া শহরে কয়লা-ভিত্তিক গ্যাস সরবরাহ করে। কলকাতা ও হাওড়ায় সংস্থাটির ৪৭২ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন রয়েছে। অধিগ্রহণের প্রযুক্তিগত, আইনি ও আর্থিক দিকগুলি খতিয়ে দেখে ২০০৩ সালেই বিস্তৃত রিপোর্ট তৈরি করেছিল ‘গেল’। সংস্থাটিকেও সেই রিপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু বামফ্রন্টের জমানায় বিষয়টি আর সে ভাবে এগোয়নি। রাজ্যে পালাবদলের পরে আবার সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চায় ‘গেল’। সংস্থাটি অধিগ্রহণের জন্য পাঁচ বছরে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা আছে ‘গেল’-এর। ‘গেল’-এর শীর্ষকর্তারা মনে করছেন, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে ‘গেল’-কে অংশিদারিত্ব দেওয়া হলে তাঁদের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলির মধ্যে আরও ভাল মেলবন্ধন হতে পারে। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে রাজ্য সরকার নিজের অংশ বিক্রি করতে চাইলে ‘গেল’ তা কিনতে আগ্রহী। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের সম্প্রসারণ ও নতুন অনুসারী শিল্প গঠনেও এর ফলে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন ‘গেল’-কর্তারা। তবে বিষয়টি একটু বিতর্কিত। কারণ, পেট্রোকেমিক্যাল্সের অন্যতম অংশীদার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সংস্থাও রাজ্য সরকারের অংশ কিনতে আগ্রহী। এ নিয়ে আগের বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে তাদের বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ‘গেল’-এর শীর্ষকর্তার সঙ্গে আগামিকালের বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকারও । কারণ ‘গেল’ নবরত্ন সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। তা ছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে গ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কারণ, পেট্রোলের দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় গ্যাস অনেক সস্তার জ্বালানি। অনেক বেশি পরিবেশ-বন্ধুও বটে। ‘গেল’-কর্তারাও আশা করছেন, তাঁরা নতুন রাজ্য সরকারের থেকে সক্রিয় সহযোগিতা পাবেন। |
|
|
|
|
|