গরু-ছাগল সহপাঠী, এসেও পড়ে রয়েছে ক্লাসঘর তৈরির টাকা
সৌজন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা।
আর তার জন্যই গরু-ছাগলের পাশে বসে পড়াশোনা করতে হচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কচিকাঁচাদের। ‘পুষ্টিকর’ খাবার খাওয়ার সময় পাশে ডানার ঝাপটা দিচ্ছে মুরগি। এ ভাবেই চলছে কেতুগ্রাম-১ ব্লকের ৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। অথচ, তাদের ঘর তৈরির জন্য এসেও পড়ে রয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা। বাম সরকারের আমলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ৩ লক্ষ করে টাকা। তা প্রায় ৭-৮ মাস আগের কথা। একটা ইটও গাঁথা হয়নি এখনও। বছর ঘুরতে হাতে আর মাস চারেক সময়।
কেতু্গ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের আশ্বাস, “ব্লক প্রশাসন থেকে আমাকে জানালে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হব। চেষ্টা করব, যাতে টাকাটা ফেরত চলে না যায়।”
কেন এই বিভ্রাট?
নিজস্ব চিত্র
জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী ঘর তৈরির জন্য জমি ‘দান’ করার কথা স্থানীয় বাসিন্দাদের। সরকারি পয়সা খরচ করে জমি কেনার ‘নিয়ম’ নেই। এত দিন পর্যন্ত গ্রামের মানুষজনকে বুঝিয়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জায়গা দিতে উৎসাহিত করত পঞ্চায়েত সমিতিই। কিন্তু পরিবর্তনের হাওয়ায় টলমল দশা এখন কেতুগ্রাম ১ ব্লক প্রশাসনেরও। সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির কতার্রা প্রশাসনিক কার্যকলাপ থেকে নিজেদের এক রকম সরিয়েই রাখছেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর থেকে টাকা আসার পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমর মাঝিকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন শিশু বিকাশ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক (সিডিপিও)। কিন্তু, কেতুগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতি গত কয়েক মাস ধরে কার্যত অচল। ফলে টাকা আসার পরেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য জায়গা খোঁজায় উৎসাহী হননি তাঁরা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমর মাঝি তা স্বীকারও করে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কয়েক মাস ধরে ‘বিভিন্ন কারণে’ পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে যাওয়া হচ্ছে না। ফলে সামাজিক-প্রশাসনিক সব কাজই প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।”
এমনই যখন হাল, তখন গরু-ছাগলের সঙ্গেই চলছে পড়াশোনা।
কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কাঁটারি গ্রাম ঘুরে পাওয়া গেল দুর্দশার নানা চিত্র।
১১৯ নম্বর কেন্দ্রটি গ্রামের পশ্চিমপাড়ায়। জাহাঙ্গির শেখের একফালি জায়গায় চলে পড়াশোনা। পাশেই একটি ডোবা। বাঁধা থাকে গরু, ছাগল-ও। পড়ুয়ার সংখ্যা এখানে ৮০। চড়া রোদ হোক বা মেঘ, স্কুল ছুটি দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। মুখ্য সহায়িকা আসমাতারা বেগম বলেন, “গরু-ছাগলের সঙ্গে এ দিক-ও দিক থেকে কুকুরও এসে জোটে। পড়ানোর থেকে পড়ুয়াদের সুরক্ষা নিয়েই বেশি মাথা ঘামাতে হয়।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবকের কথায়, “ভয়ে ভয়ে ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাই। কোন দিন যে কী অঘটন ঘটে যায়!”
গ্রামেরই ৪৫ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আবার অন্য রকম ছবি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য বছর খানেক আগেই জায়গা দিয়েছিল গ্রামের মির্জা পরিবার। ওই বাড়ির লাল্টু মির্জা বললেন, “স্কুল হবে ভেবে কাঠা খানেক জায়গা দিয়েছিলাম। বছর ঘুরে গেল, এখনও নতুন ঘর উঠল না।” পাশেই ৫০ বর্গফুটের একটি পরিত্যক্ত ঘরে ঠাসাঠাসি করে পড়ে ৪০টি শিশু। সহায়িকা সালেমা বেগমও বিস্মিত। বললেন, “জায়গা পাওয়া গিয়েছে। টাকাও আছে। তা সত্ত্বেও কেন যে ঘর হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।”
জায়গা যে আছে, সে খবরটাই নেই সিডিপিও-র কাছে। তবে সিডিপিও অমিতকুমার দাসের আশ্বাস, “এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে।”
কেতুগ্রাম ১-এর বিডিও তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, “জমি দান করতে সহৃদয় ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে ভাল হয়।”
সহৃদয় ব্যক্তির সন্ধান মেলে কি না সেটাই দেখার।
না হলে যেমন চলছে, চলবে তেমনই।

First Page Bardhaman Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.