|
|
|
|
কল্যাণী মেডিক্যাল |
ফের এমসিআই-এর প্রশ্নের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ |
সোমা মুখোপাধ্যায় ও বিতান ভট্টাচার্য ² কলকাতা |
একই দৃশ্য। দ্বিতীয় অঙ্কেও।
মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) পরিদর্শকেরা একই ভাবে কৈফিয়ত চাইছেন। একই ভাবে সদুত্তর দিতে পারছেন না মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কেমন সেই দৃশ্য? “এটা অপারেশন থিয়েটার? এখানে আপনারা রোগীদের অস্ত্রোপচার করেন? এখানে তো প্রতি পদে সংক্রমণের ভয়!” রীতিমতো ধমকে উঠলেন এমসিআই-এর পরিদর্শকরা। সামনে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে প্রশাসক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা। কিছু একটা যেন বোঝানোরও চেষ্টা করলেন তাঁরা। কিন্তু এমসিআই পরিদর্শকেরা কোনও ‘যুক্তি’ই মানতে নারাজ।
তাঁদের বক্তব্য, একে তো প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক-চিকিৎসক নেই, তার উপরে অপারেশন থিয়েটারের যদি এমন চেহারা হয়, তা হলে একে মেডিক্যাল কলেজ বলা হবে কোন যুক্তিতে?
প্রসূতি বিভাগে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াচ্ছে বেড়াল। এমনকী রোগিণীর শয্যাতেও উঠে পড়ছে তারা। দেখে বিরক্তি গোপন করেননি
পরিদর্শক দলের সদস্যেরা। তাঁদের মন্তব্য, “ঝাঁ চকচকে বাড়ি তৈরি করলেই হয় না। পরিচ্ছন্নতার দিকটাও দেখতে হয়। আপনারা কি কোনও নজরই দেন না?”
এক বার অনুমোদন বাতিল
হওয়ার পরে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয়বার
আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার এমসিআই-এর তিন পরিদর্শক এখানে আসেন। কিন্তু ছবিটা এ বারেও অপরিবর্তিত তো থাকলই, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৈন্যদশা আরও বেশি করে প্রকট হল। পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত না থাকা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কলেজ খুলে বিপাকে পড়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। আর এ বার নয়া সরকার কাজ শুরু করতে না করতেই সেই
বেআব্রু দশাটাই আরও একবার সামনে এল।
চলতি বছরে পরিদর্শনের পরে কল্যণী মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছিল এমসিআই। যুক্তি একটাই। প্রয়োজনীয় শিক্ষক এবং অন্যান্য পরিকাঠামো নেই। অনুমোদন বাতিলের ফলে চলতি বছরে এই মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে কি না, সেটাও এখন অনিশ্চিত। এবারেও পরিদর্শকেরা এ ভাবে উষ্মা প্রকাশ করায় মেডিক্যাল কলেজের ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়ে গেল।
শিক্ষক-চিকিৎসকের কম সংখ্যার পাশাপাশি এ বার সামনে এসেছে মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতাল অর্থাৎ জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতালের অব্যবস্থার ছবি। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের চেহারা দেখে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিদর্শকেরা। একটি অপারেশন থিয়েটার ভাঙা হয়েছে। তার মধ্যে দিয়েই সিঁড়ি উঠে গিয়েছে আরেকটি অপারেশন থিয়েটারে। সংস্কারের কাজ চলছে বলে সর্বত্র ধুলোবালি। পরিদর্শকেরা প্রশ্ন করেন, “আর কবে আপনাদের সংস্কার শেষ হবে?” যদিও কথা আছে আটটি অপারেশন থিয়েটার তৈরি হওয়ার।
অটোক্লেভ যন্ত্র খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে, ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোনও পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এ নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন পরিদর্শকেরা। নমিতা দাস নামে এক রোগিণী ১৮ মে থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জরায়ুর অস্ত্রোপচারের জন্য। তাঁর বাড়ির লোকের অভিযোগ, একাধিকবার তাঁকে প্রস্তুত করে ওটিতে ঢোকানো হয়েছে। তার পরে কোনও না কোনও যন্ত্র খারাপ থাকায় অস্ত্রোপচার না করিয়েই বের করে আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রবীর সুর বলেন, “ছ’মাস আগেই অপারেশন থিয়েটার তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হল না। পরিদর্শকেরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অল্প দিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ করে ওটি চালু করে দিতে পারব বলে আশা করছি।”
এর আগের বারেও অপারেশন থিয়েটার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এমসিআই পরিদর্শকেরা। তা হলে এ বারে পরিদর্শনের আগে সে দিকে আরও যত্নবান হলেন না কেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর কারও কাছেই পাওয়া যায়নি।
কেন এই মেডিক্যাল কলেজে এমন অব্যবস্থা? হাসপাতালের সুপার নিরুপম বিশ্বাসের যুক্তি, “সরকারি বিধি মেনে কাজ করতে হয়। তাই ইচ্ছা থাকলেও সব কিছু তাড়াতাড়ি করা যায় না। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
তবে অপারেশন থিয়েটার দ্রুত ঠিক করা হবে।” |
|
|
|
|
|