সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র (এমএসকে)-কে পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরের আওতায় আনছে রাজ্য সরকার। এর ফলে ওই সব স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরির অনিশ্চয়তা দূর হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার জানান। সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, যোগ্যতা থাকলে কর্মরত
পার্শ্বশিক্ষকদের ধাপে ধাপে স্থায়ী করা হবে। ব্রিজ কোর্স পাশ করা পিটিটিআই পড়ুয়াদেরও প্রাথমিক
শিক্ষকের পদে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তে লক্ষাধিক শিক্ষক উপকৃত হবেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে এসএসকে, এমএসকে চালু করা হলেও পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরিকে কেন্দ্র করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অন্য দফতরের অধীনে থাকায় রাজ্যে স্কুলশিক্ষার মূল ধারার সঙ্গে এদের সমন্বয়ও ছিল না। সেই কারণেই ওই সব শিক্ষা কেন্দ্রকে স্কুলশিক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।
রাজ্যে এসএসকে এবং এমএসকের মিলিত সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সেখানে কাজ করেন প্রায় ৭৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা। এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পার্শ্বশিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। এক সরকারি কর্তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ দিনের এই সিদ্ধান্তের জেরে তাঁরা মূল স্রোতের স্কুলগুলির শিক্ষকদের মতোই বেতন পাবেন।
বিগত বামফ্রন্ট সরকার এসএসকে এবং এমএসকে-র জন্য পঞ্চায়েত দফতরের আওতায় পৃথক স্কুলশিক্ষা পর্ষদ গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সংক্রান্ত বিলও পাশ হয় বিধানসভায়। সেটি রাজ্যপালের বিবোচনাধীন ছিল। এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছিল সিপিএমের অন্দরেই। পঞ্চায়েতের অধীন স্কুলগুলিকে স্কুলশিক্ষার নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে আইনি সমস্যা আছে বলে সেই সময় সিপিএমের কোনও কোনও নেতা জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি, বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে বর্ধিত হারে বেতন দেওয়ার জন্য যে-বিপুল অর্থের প্রয়োজন, অন্তত বিগত সরকারের পক্ষে তার বন্দোবস্ত করা প্রায় অসম্ভব ছিল।
এ দিন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে দু’টি প্রশ্ন সামনে এসেছে।
l আরও ১৬ হাজার প্রাথমিক স্কুল এবং মাধ্যমিক স্তরের চার হাজার
স্কুলের ভার নেওয়ার মতো পরিকাঠামো প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আছে কি?
l লক্ষাধিক শিক্ষকের বর্ধিত বেতনের সংস্থানই বা হবে কী ভাবে?
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ধাপে ধাপে। এর জন্য সরকার তিন বছর সময় নেবে। তবে এই প্রশ্নও উঠেছে যে, সাধারণ স্কুলের শিক্ষকেরা নিযুক্ত হন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। পঞ্চায়েতের অধীন স্কুলগুলিতে নিয়োগ হয় স্থানীয় ভিত্তিতে। সরকারি কর্তাদের কারও কারও মতে, এই দুই শ্রেণির শিক্ষককে এক সারিতে বসানোর জন্য রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করতে হবে। নইলে আইনি সমস্যা অবধারিত। ঠিক কী উপায়ে সরকার এই সব জটিলতা কাটাবে কিংবা অর্থের সংস্থান করবে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেই ব্যাপারে বিশদ ভাবে কিছু বলেননি। স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও এই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারেননি।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “অবসর নেওয়ার পরে পেনশন পেতে স্কুলশিক্ষকদের হয়রানির সীমা থাকে না। অনেকে জীবদ্দশায় পেনশন পানই না। সরকারের সিদ্ধান্ত, এখন থেকে অবসরের এক মাসের মধ্যে শিক্ষকেরা ‘প্রভিশনাল পেনশন’ পাবেন।”
বিভিন্ন শিক্ষক এবং পিটিটিআই পড়ুয়াদের সংগঠন এই সব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে গোটা শিক্ষকসমাজ উপকৃত হবেন।” তবে এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায় বলেন, “আগে এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হোক। তার পরে প্রতিক্রিয়া জানাব।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোনও কোনও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তির সময় অনেক বেশি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ওই সব কলেজের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফেও কলেজ শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত কয়েকটি সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। স্কুলশিক্ষকদের মতো কলেজ-শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরাও মাসের প্রথম দিনেই বেতন পাবেন এবং অবসরের দিনেই তাঁদের অ্যাড-হক পেনশনের ব্যবস্থা করবে উচ্চশিক্ষা দফতর। |