হরিপদ পেরেছে, পরীক্ষায় আবারও বসবে শুকদেবরা
থ দেখিয়েছে ওরা চার জন। এক জন সাফল্য পেয়েছে। বাকি তিন জন না পারলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছে, এ বার হল না। পরের বার অবশ্যই হবে।
এই চার জনের হাত ধরে এক নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালের গ্রাম তানাসি। যে গ্রামের ইতিহাসে প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওরা চার জনহরিপদ মাঝি, শুকলাল টুডু, সুকু টুডু ও মুকেশ মুর্মু। দিন আনি দিন খাই বললেও বোধহয় কম বলা হবে, পুরুলিয়ার আড়শা ব্লকের এই গ্রামের দারিদ্র সম্পর্কে। গ্রামের পাশে বান্দু নদী। গ্রাম গা ঘেঁষে উঠে গিয়েছে অযোধ্যা পাহাড়। জঙ্গলঘেরা ছবির মতো গ্রাম এই তানাসি। শ’দুয়েক পরিবারের কমবেশি সব সদস্যেই দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে জঙ্গল থেকে কাঠ বা ডালপালা সংগ্রহ করেন। হাটে বেচে দিনে সাকুল্যে আয় ২৫-৫০ টাকা। বিদ্যুতের আলো আজও ঢোকেনি সেখানে।
মার্কশিট হাতে বাড়িতে হরিপদ। নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে একটা প্রাথমিক স্কুল আছে বটে। কিন্তু খাটুনি আর পেটের চিন্তায় এত সময় চলে যায় যে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সময় পান না অভিভাবকেরা। মিড-ডে মিলের সময় পড়ুয়াদের ভিড় বাড়ে। অধিকাংশই আবার তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির পরে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বড়দের বেশির ভাগই নিরক্ষর। মায় গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য ভরত মাঝি পর্যন্ত। সেই গ্রামেই আজ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হরিপদ, শুকলাল, সুকু আর মুকেশ। অভাব তাদের থামিয়ে দিতে পারেনি। তারা স্বপ্ন দেখেছিল সাফল্যের। হরিপদর কথায়, “অনেকেই বলত, ‘তোদের পাশ করতেই হবেক’। তখনই বুঝেছিলাম, আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করাটা গ্রামের সবার কাছে কতটা গর্বের বিষয় হবে।”
ভরতবাবুর কথায়, “গাঁয়ে কাজ নেই। অনেকেই পূবে খাটতে যান। সঙ্গে যায় ছেলেমেয়েরাও। পড়াশোনা করবে কখন? তা ছাড়া, দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করাই যেখানে একমাত্র চিন্তা, সেখানে পড়াশোনার ঠাঁই অনেক পরে। তার মধ্যেও যে হরিপদ, শুকদেবরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, এটাই ওদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। ওদের দেখে বাকিরাও উৎসাহ পাবে।” গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূতনাথ মণ্ডল বললেন, “ওরা তো এই স্কুলেই পড়ে বড় হয়েছে। ওদের জন্য গ্রাম গর্বিত।”
আড়শা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিলেও হরিপদদের পড়ার জন্য নাগাড়ে উৎসাহ দিয়েছেন নুনিয়া শিশুশ্রমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাবীর মাহাতো। তাঁর কথায়, “হরিপদ প্রায় দিনই স্কুলে আসত। ওর বোন এখানেই পড়ে। আমরা ওকে উৎসাহ দিতাম। আরও কয়েক জন পরীক্ষা দিয়েছিল। হরিপদ পেরেছে। বাকিরা না পারলেও আমাকে কথা দিয়েছে, পরের বার ফের পরীক্ষায় বসবে।” শুকলাল, সুকুরা বলছে, “বাড়ির লোকের খুব আশা ছিল। তবে এত দূর যখন এসেছি, আমরা পিছু হটব না। হরিপদ যখন পেরেছে, আমরাও পারব।”
এই প্রত্যয়টাই আগে কখনও ছিল না তানাসিতে! শুকদেবদের সবচেয়ে বড় সাফল্য বোধহয় এটাই।
First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.