নাটক সমালোচনা ২...

ত্রয়ী সম্পর্কের দ্বন্দ্ব

বীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’ এমনই এক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের গন্ধ যা মঞ্চে নিয়ে আসা অতি দুরূহ কর্ম। তার উপরে আবার দর্শকদের মাথায় রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের কাব্যময় নির্মিতি ‘চারুলতা’। সেই কঠিন কাজকেই সম্ভব করেছেন নাট্যরূপে ও নির্দেশনায় শেখর সমাদ্দার। শুরুতেই অমলের কিছুটা সূত্রধরের ভূমিকা পালনের মুহূর্ত ছাড়া নাট্যগতি পুরোপুরিই রবীন্দ্র-অনুসারি। মঞ্চে, পোশাকে, অভিনয়ে নির্দেশক কোথাও তার সুরকে উচ্চকিত হতে দেননি। চারু-ভূপতি-অমল এই ত্রয়ী সম্পর্ক মানসিক দ্বন্দ্বের চমৎকার জাল বুনতে থাকে ধীরে ধীরে, নাটকের গতি শ্লথ হতে দেয় না। ‘কলাপী’র প্রযোজনার বয়স মাত্র দুই, সেখানে তাদের নাট্যনির্মিতিতে এই সংযম, সততা ও নিষ্ঠা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
এ নাটকের অনেকখানি দাঁড়িয়ে আছে অভিনয়ের উপরে। সেই দায় মূলত বহন করেছেন ভূপতীবেশী জ্যোতির্ময় বক্সী। প্রথম পর্বে তন্ময়, ভূপতি, মধ্যপর্বে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েও স্ত্রী চারুর সাহচর্যে জ্বলে ওঠা ভূপতি, শেষ পর্বে অমলের প্রতি চারু আসক্ত এই আবিষ্কারের পর সব হারানো ভূপতি এত সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন জ্যোতির্ময়। অমলের ভূমিকায় বিশ্বজিৎ আচার্যকে ভাল মানিয়েছে। চারুবেশী পাপিয়া সরকার যথাযথ হলেও চরিত্রের মূল অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রখর হয়ে উঠতে আরও একটু যত্নবান হতে হবে। না হলে শেষে অমলের বুকে আছড়ে পড়ে চারুর ক্রন্দন দৃশ্যটি যেন আরোপিত হয়েই থাকে। গৌতম চক্রবর্তী, চৈতালি মৌলিকের অভিনয় সুন্দর। তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সঙ্গীত প্রযোজনা নাটকের মাধুর্য বাড়িয়েছে।

অন্য নাটকের থেকে এই নাটক কিছুটা স্বতন্ত্র। এখানে দেখা গেছে ‘ইকো-ফেমিনিজম’-এর নতুন ভাবনার প্রতিফলন। ১৯৭৪ সালে প্রথম এই সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা হয়। ভারতে আসে অনেক দেরিতে। এই নাটকে সেই প্রভাব যথেষ্টই উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এক দিকে রাজা দত্তাত্রেয়-র পুরুষতান্ত্রিক বলশালী দেশ। অন্য দিকে, নারী অধ্যুষিত সুজলা, সুফলা পার্শ্ববর্তী দেশ। এক যুগ অন্তর পুরুষতান্ত্রিক দেশ লুঠ করে সুজলা, সুফলা ভূমিকে। চলে ধর্ষণও। কিন্তু কিছুই থেমে থাকে না। আবার বুক বেঁধে মাথা তোলার পালা। সৃষ্টি পুত্রসন্তানের। একটু বড় হতেই বদলা নিতে সে চলে যায় পাশের দেশে। কাব্যিক ও ছান্দিক সংলাপ এই নাটকের প্রাণস্পন্দন। ছৌ নৃত্য, দক্ষিণ ভারতের শিল্প ‘কালারি’ ও অন্যান্য প্রাচ্য ধারার মিশ্রণে নাটকে যুদ্ধের দৃশ্যগুলি নাটককে অন্য মাত্রা এনে দেয়। নাটকে প্রাধান্য পেয়েছে লালন ও বাউলের গান।
অভিনয়ে অন্তিকা চট্টোপাধ্যায়, পারিজাত সরকার, রূপসা মুখোপাধ্যায়, দেবযানী গুপ্ত, তনুশ্রী সরকার, শ্রেষ্ঠা সরকার, সুমিত দে, সুপ্রতিম প্রমুখ। আবহে অনিন্দ্যসুন্দর চক্রবর্তী।

Previous Item Patrika Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.