|
|
|
|
গড়বেতায় আক্রান্ত তপনের বাড়ি |
বরুণ দে ² গড়বেতা |
ছোট আঙারিয়া মামলার ‘ফেরার’ অভিযুক্ত সিপিএম কর্মী দিল মহম্মদকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে শুক্রবারই মেদিনীপুর আদালতে আবেদন করেছে সিবিআই। নতুন করে ছোট আঙারিয়া মামলা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এ দিনই গড়বেতার দাপুটে সিপিএম নেতা তপন ঘোষের বাড়িতে হামলা হল।
গড়বেতার ধোবাবেড়িয়ায় প্রাসাদোপম বাড়ি তপনবাবুর। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই অবশ্য তিনি বাড়িছাড়া। শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়ির শ’দেড়েক মিটার দূরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস চত্বরে প্রথমে অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি চালায় কিছু গ্রামবাসী। |
|
করুণ আর্তি। তপনের মা গৌরী ঘোষ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল |
স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়েছিল, ওই পাম্পহাউস চত্বরে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম রয়েছে। তল্লাশিতে ড্রিলিং মেশিন-লোহালক্কড়, বন্দুকের অংশ উদ্ধার হয়। পাম্পহাউসের উল্টো দিকে প্রভাকর সর্দারের বাড়ি। তিনিও সিপিএম কর্মী এবং তপনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হওয়ায় জনতার সন্দেহ গিয়ে পড়ে তাঁর উপরেও। প্রভাকরবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাড়ির উঠোনের খড়ের গাদা সরিয়ে মাটি খোঁড়া শুরু করে জনতা। মেলে ৯টি একনলা বন্দুক, ৩টি পাইপগান, ২টি পিস্তল। সঙ্গে কয়েকশো রাউন্ড কার্তুজ। প্রভাকরবাবুর স্ত্রী অনিতাদেবী তখনই বলে বসেন, তপনবাবুর নির্দেশেই তাঁদের বাড়ির উঠোনে অস্ত্র পোঁতা হয়েছিল। তার পরেই ক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হয় তপনবাবুর বাড়িতে।
যথেচ্ছ ঢিল-পাটকেল ছুড়ে কাচ ভাঙার পাশাপাশি ভিতরে ঢুকে আসবাবপত্রও তছনছ করে জনতা। ভয়ে তপনবাবুর বৃদ্ধ বাবা-মা নির্মল ও গৌরী ঘোষ এবং স্ত্রী শ্রাবণী-সহ অন্যরা একটি ঘরে লুকিয়ে পড়েন। আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে। আধা সেনা-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। ৬ জনের নামে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও জানান তপনবাবুর বাবা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানিয়েছেন, ওই ৬ জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সিপিএম কর্মী প্রভাকরবাবুর স্ত্রী অনিতাদেবীকে আটক করেছে পুলিশ। |
|
ঘর তছনছ। আতঙ্কিত তপনের স্ত্রী শ্রাবণী। নিজস্ব চিত্র |
দুপুরে তপনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব কিছুই তছনছ করা হয়েছে। তবে বাড়ির লোকজনকে মারধর করা হয়নি। তপনবাবুর বৃদ্ধা মা গৌরীদেবী চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, “আমরা তো কারও ক্ষতি করিনি। তাই যারা এসেছিল, হাতজোড় করে তাদের বলেছি, আমাদের মারিস না।” তার পরেই তাঁর আক্ষেপ, “আগেই তপনকে বলেছিলাম, পার্টি ছেড়ে দে। আমার কথা আর শুনল কই!” তপনবাবুর বাবা নির্মল ঘোষ বলেন, “আর কিছুই ভাল লাগছে না। শুধু ভাঙচুর নয়, কিছু জিনিসপত্রও লুঠ হয়েছে।”
দুপুরে ডিএসপি (অপারেশন) অনীশ সরকারের উপস্থিতিতে যৌথ বাহিনীও এক দফা তল্লাশি চালায় তপনবাবুর বাড়িতে। দেখা যায়, পিছন দিকের গুদামে কেরোসিন তেলের প্রায় ৪০০ ড্রাম সার দিয়ে রাখা রয়েছে। তপনবাবুর এক ভাই কেরোসিন ডিলার হলেও এক সঙ্গে এত ড্রাম দেখে পুলিশ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার কথা বলেছে। এ দিনই ছোট আঙারিয়া মামলার এক অভিযুক্ত (প্রমাণাভাবে খালাস) সালমৎ শেখকে তিলডাঙা থেকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসীরা। পুরনো একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। |
|
গড়বেতায় সিপিএম নেতা তপন ঘোষের বাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরের পাশাপাশি তল্লাশিও
চলে শুক্রবার। হদিস মেলে প্রচুর কেরোসিন তেলের ড্রামের। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
তপনবাবুর বাড়িতে হামলা নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব বা কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অস্ত্র-উদ্ধার প্রসঙ্গে সাধারণ ভাবে সেলিমের বক্তব্য, “অস্ত্র উদ্ধার হলে তার ব্যালিস্টিক-ফরেন্সিক পরীক্ষার মতো কিছু পদ্ধতি রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল কর্মীরা যেখান-সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করে দায় চাপাচ্ছে আমাদের উপরে। সব সাজানো। সরকার তদন্ত করে জানাক, কে কী ভাবে অস্ত্রগুলি এত দিন ব্যবহার করেছে।” গড়বেতার তৃণমূল নেতা জয় রায় অবশ্য তপনবাবু-সহ যে কোনও সিপিএম কর্মীর বাড়িতে হামলার নিন্দা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষের একাংশ উত্তেজিত হয়ে কোথাও কোথাও হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছেন। পুলিশের উচিত, কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা।” |
|
তপনের বাড়ির কাছেই এক সিপিএম কর্মীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অস্ত্র। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
শুক্রবার দুপুরে কলকাতার নিউ টাউনের থাকদারি এলাকা থেকে মেলে দু’টি ৯ এমএম পিস্তল, একটি ওয়ান শটার ও ২৬ রাউন্ড গুলি। একটি মন্দিরের কাছে ঝোপের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যাগে মেলে আগ্নেয়াস্ত্র। |
|
|
|
|
|