সম্পাদকীয় ১...
জমির (রাজ)নীতি

সিঙ্গুর হইতে ভাট্টা পারসল। পশ্চিমবঙ্গ হইতে উত্তরপ্রদেশ। শিল্পের জন্য বা বৃহত্তর অর্থে উন্নয়নের জন্য কৃষি জমি ব্যবহারের নীতি ও পদ্ধতি লইয়া ভারতীয় রাজনীতির মন্থন অব্যাহত। সেই মন্থনে বিপুল অশান্তি এবং গোলযোগের সৃষ্টি হইয়াছে, রক্তক্ষয়ী এবং প্রাণঘাতী সংঘাতও ঘটিয়াছে, কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ সম্পর্কে নীতিকাররা নূতন করিয়া ভাবিতে বাধ্য হইয়াছেন। এত কাল কৃষি জমির রূপান্তর ঘটিতেছিল প্রধানত দুই ভাবে। এক, বেসরকারি শিল্পোদ্যোগী, প্রোমাটার ইত্যাদিরা কৃষকের জমি সরাসরি ‘বাজার দর’-এ কিনিয়া লইতেছিলেন। দুই, সরকার দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কার্যত ব্রিটিশ আমলের জমি অধিগ্রহণের নীতি মানিয়া জমির মালিককে কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়া কৃষি জমি অধিগ্রহণ করিতেছিল। উভয় ক্ষেত্রেই কৃষিজমির মালিকরা মার খাইতেছিলেন। এক দিকে তাঁহারা যথেষ্ট দর পান নাই। অন্য দিকে, তাঁহাদের সম্মতির অপেক্ষা না করিয়াই অল্প ক্ষতিপূরণে জমি অধিগৃহীত হইয়াছে। আন্দোলনের চাপে এই ঐতিহ্য বদলাইতেছে। কেন্দ্রীয় সরকার জমি নীতি সংশোধনের উদ্যোগ করিতেছে। পশ্চিমবঙ্গে জমি নীতি রচনার প্রস্তুতি চলিতেছে। অন্য কিছু কিছু রাজ্যও সেই পথের পথিক। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী তাঁহার রাজ্যের নূতন জমি নীতি ঘোষণা করিয়া দিয়াছেন। তাঁহার তৎপরতার কারণ সহজবোধ্য। ভাট্টা পারসল তথা গ্রেটার নয়ডা’র জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করিয়া কংগ্রেস তাঁহার সরকারের উপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করিয়াছে, অন্য বিরোধীরাও স্বভাবতই সুযোগসন্ধানী। এক বছরের মধ্যে রাজ্যে নির্বাচন। সুতরাং ঘর সামলাইবার তাগিদে মায়াবতী তৎপর। বিশেষত কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার এখনও নূতন জমি নীতি প্রণয়ন করিতে পারে নাই, সুতরাং মায়াবতী বলিবেন: আমিই কৃষকের প্রকৃত বন্ধু। অনুমান করা যায়, মনমোহন সিংহ-রাহুল গাঁধীরাও অতঃপর আপন তৎপরতা বাড়াইবেন। বন্ধুত্বের রেষারেষিতে কৃষকেরই মঙ্গল।
মায়াবতীর নীতির দুইটি প্রধান মাত্রা। এক, একটি জমি কিনিয়া বা অধিগ্রহণ করিয়া তাহাকে শিল্প বা অন্য উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করিবার ফলে তাহার বাজার দর বাড়িয়া যাহা দাঁড়াইবে এবং সেই জমি হইতে তাহা আয় হইবে, কৃষককে তাহার অংশীদার করিতে হইবে। অর্থাৎ জমির নূতন ব্যবহার হইতে আয়বৃদ্ধির ভাগ দিতে হইবে জমির মালিককে। স্পষ্টতই, ইহা একটি প্রয়োজনীয় এবং যুক্তিসঙ্গত নীতি। লক্ষণীয়, মায়াবতী এই নীতি কেবল সরকারি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন নাই, বেসরকারি ক্রেতাকেও এই নীতির নির্দেশ মানিয়াই জমির দর স্থির করিতে হইবে। জমির বাজার যদি যথেষ্ট উন্নত হইত, তবে সরকারকে কিছু করিতে হইত না, বাজারই কৃষককে যথেষ্ট দর মিলাইয়া দিত। কিন্তু জমির বাজার সেই ভাবে কাজ করে না, জমির ভবিষ্যৎ মূল্য হিসাব করিবার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা সেই বাজারে নাই, বরং সচরাচর প্রবল ক্রেতা এবং দুর্বল কৃষকের লেনদেনে কৃষক মার খাইয়া আসিয়াছেন। দুই, অন্তত সত্তর শতাংশ কৃষকের সম্মতি থাকিলে তবেই একটি এলাকার জমি লওয়া যাইবে, অর্থাৎ বাকি ত্রিশ শতাংশ সরকার অধিগ্রহণ করিতে পারিবে। সম্মতি নিশ্চয়ই আকাশ হইতে পড়ে না। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক যত বেশি, সম্মতির সম্ভাবনাও তত বেশি। একশো শতাংশ কৃষকের সম্মতি যদি থাকে, কোনও গোল নাই। কিন্তু বাস্তবে তাহার নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং ত্রিশ শতাংশের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে, অধিগ্রহণের অবকাশ। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত আইনেও এমন অবকাশ আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহাতে আপত্তি করিয়াছিলেন। তাঁহার মতে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও জমিই অধিগ্রহণ করা চলিবে না, অর্থাৎ কার্যত সব জমিই ক্রেতা কিনিয়া লইবেন। মত হিসাবে চমৎকার, কিন্তু কার্যকর নীতি হিসাবে সমস্যাসঙ্কুল। মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী তাহা বুঝিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় কী করেন, দেখিবার।

First Page Editorial Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.