|
|
|
|
রাম-লীলা |
সমাধান অধরাই, আজ অনশনে রামদেব |
নিজস্ব সংবাদদাতা²নয়াদিল্লি |
অনশন সত্যাগ্রহ থেকে রামদেবকে বিরত করার এখনও কোনও চূড়ান্ত মীমাংসা সূত্র বেরলো না। বরং রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে এক অভিজাত হোটেলে আজ দুপুর থেকে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে চার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পর যোগগুরু জানিয়ে দিলেন, পূর্ব ঘোষণা মতোই কাল অনশনে বসতে চলেছেন তিনি। অন্য দিকে, সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, “রামদেব যে সব বিষয় তুলেছেন, এক দিনে তার সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের তরফে তাঁকে লিখিত কিছু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। তবে আলোচনা চলবে।”
রামদেবের তোলা প্রশ্নের জবাব কী ভাবে বিষয় ধরে ধরে দিয়েছে সরকার, রাতে সেটাই প্রকাশ করেছেন ক্যাবিনেট সচিব কে এম চন্দ্রশেখর। সেখানে দেখানো হয়েছে, কালো টাকা উদ্ধারে রামদেব আজ সেটা দাবি করছেন, সেই পথে আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট ভাবে হাঁটা শুরু করেছে সরকার। একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে, যারা ছ’মাস বাদে সরকারকে এই নিয়ে রিপোর্ট দেবে। তবে কালো টাকার কারবারিদের ফাঁসিতে ঝোলানোর যে দাবি করেছেন রামদেব, সে সম্পর্কে নীরব সরকার। যদিও বলা হয়েছে, এই বিষয়ে শাস্তির পরিমাণ ‘যথেষ্টই’ বাড়ানো হবে।
আলোচনার পরে বিবৃতি দিয়ে সরকার স্পষ্ট করে দিল, রামদেব ‘আবেগের বশে’ যে দাবি করছেন, বাস্তবে তা কঠিন হলেও তা নিয়ে এর মধ্যে সরকার পদক্ষেপ করেছে। একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে রামদেব সহমত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, চার ঘণ্টা বৈঠকের পরে বেরিয়ে এসে এই কথাটা কিন্তু স্বীকার করেননি যোগগুরু। তাঁর দাবিগুলির ‘অযৌক্তিক’ দিকগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বিবৃতি প্রকাশ করে সরকার দেখিয়ে দিল, রামদেব ও সরকারের মতভেদ খুব বেশি নয়। |
|
রামলীলা ময়দানে বক্তৃতা দিচ্ছেন রামদেব। শুক্রবার দিল্লিতে। রয়টার্সের ছবি। |
তবে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে পুরনো দিল্লির রামলীলা ময়দানে কাল সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক অনুগামীকে নিয়ে রামদেব যে অনশন সত্যাগ্রহে বসবেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বস্তুত, বহু কোটি অর্থব্যয়ে তৈরি সেই বর্ণময় সামিয়ানায় আজ সকালেই নিজের অনুগামী ও ‘জাতির’ উদ্দেশে এক দফা বক্তৃতা দিয়েছেন রামদেব। জানিয়েছেন, তাঁর কোনও গোপন অ্যাজেন্ডা নেই। রোজ রোজ সত্যাগ্রহে বসার সময়ই বা কোথায়? তাতে দেশের অসুবিধা, দশেরও দুর্ভোগ! তাই কাল থেকে যে সত্যাগ্রহ শুরু হবে, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসন এবং দেশ ও সমাজের উন্নতির লক্ষ্যে সেটাই হয়ে উঠবে সর্বরোগহর!
সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে রামদেব সোজা চলে যান রাজঘাটে, গাঁধীর সমাধিস্থলে। সেখান থেকে ফের আসেন রামলীলা ময়দানে। বলেছেন, “সরকার বিদেশি ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের কালো টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু কালো টাকা উদ্ধারের জন্য কোনও আইন প্রণয়ন বা অর্ডিন্যান্স জারির ব্যাপারে সম্মত হয়নি। সরকার বলেছে, যাঁরা কালো টাকার কারবারি, তাঁদের নাম ইন্টারনেটে তুলে দেবে। কিন্তু কত দিনের মধ্যে তা করবে, তা-ও বলেনি। কিন্তু আমার বক্তব্য, স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে এই দাবিগুলি না মানলে সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করা হবে না।”
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ও আরএসএস রামদেবের পূর্ণ সমর্থনেই দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে আরএসএস নেতৃত্ব অনশনের আসরে তাঁদের সমর্থকদের পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতৃত্ব এ-ও স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, রামদেবকে যদি সরকার গ্রেফতার করে, তা হলে বিজেপিরই লাভ। পর দিন থেকেই তারা হই হই করে পথে নেমে পড়বে। কিন্তু রামদেব যদি সরকারের কথায় ‘গলে’ যান, তা হলে তাঁদের সমস্যা হবে।
এর মধ্যে সরকারের একটি সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, রামদেবের সঙ্গে মোটামুটি একটা সম্মতি গড়ে উঠেছে। কিন্তু রামদেব দেখাতে চাইছেন না যে, তিনি আত্মসমর্পণ করছেন। বা তাঁকে নরম হতে হচ্ছে। কারণ যে রকম ঢক্কা নিনাদ করে তিনি ময়দানে নেমেছেন, তাতে তাঁর ‘সাফল্যটাও’ দেখানো জরুরি। তাই অন্তত অনশন শুরু করতে চাইছেন। তার পর সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যৌথ ঘোষণা করে তা প্রত্যাহার করে নেবেন। |
|
অনশনমঞ্চ সাজিয়ে তোলার ফাঁকে ক্ষণিকের ঘুম এক কর্মীর। পি টি আই |
পারস্পরিক এই দৌত্যে আর একটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ঘটে গিয়েছে। গত পরশু কেন্দ্রের চার মন্ত্রী যে ভাবে রামদেবের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিমানবন্দরে চলে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আচরণের পরিবর্তন হয়েছে সরকারের। সরকারি তরফে রামদেবকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, কোনও অন্যায্য দাবি মানা হবে না। কেন্দ্রের এক নেতার কথায়, “সরকার চালানো ছেলেখেলা নয়। কালো টাকা উদ্ধারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দৌত্য ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই সরকার একা আইন পাশ করে কিছু লাভ হবে না।” তিনি জানান, রামদেবকে এ-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, কালো টাকা উদ্ধারের বিষয়ই হোক বা দুর্নীতি দমন বা জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন কোনওটাই ‘ইনস্ট্যান্ট কফি’ নয় যে, চাইলেই কাপ-প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া যায়। এগুলির প্রতিটিই সময় সাপেক্ষ।
এক দিকে যেমন সরকার আগের থেকে দৃঢ় মনোভাব নিয়েছে, তেমনই রামদেবের বিরুদ্ধে সমালোচনাও শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রশ্ন উঠেছে, রামলীলা ময়দানে বহু কোটি টাকার সামিয়ানা তৈরি নিয়েও। কেন না, এই ধর্নামঞ্চ যন্তর মন্তরে আন্না হাজারের মঞ্চের মতো সাধারণ তো নয়ই, বরং অনন্য সাধারণ।
এমনকী, শবনম হাসমির মতো সমাজসেবীদের বক্তব্য, রামদেব আগে তাঁর সম্পত্তির হিসেব ঘোষণা করুন। স্কটল্যাণ্ডে তাঁর নিজস্ব দ্বীপ থেকে শুরু করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সব কিছু। এই সব সমালোচনাও আজ শুনতে হয়েছে রামদেবকে।
সব মিলিয়ে, দু’মাসের মধ্যে পরপর দু’বার অনশন-কাণ্ড নিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতি জমজমাট। পরিণতি কোন দিকে যায়, এখন সেটাই দেখার। |
l আড়াই লক্ষ বর্গফুট জুড়ে ৩০ ফুট উঁচু জল-নিরোধক মণ্ডপ
l এক লক্ষ লোকের বসার ব্যবস্থা
l ৬০ জন চিকিৎসক, ৪০ শয্যার অস্থায়ী মেডিক্যাল সেন্টার |
১০০
এলইডি স্ক্রিন |
৭৮০
পাখা |
১০০
কুলার |
৬৫০
অস্থায়ী শৌচালয় |
|
|
|
|
|
|