পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই সাংবাদিক সইদ সালিম শাহজাদের অপহরণ ও মৃত্যুর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করল। আজ সংস্থার তরফে জানানো হয়, আইএসআইয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই সব ‘গুজব’ ছড়াচ্ছে পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ।
রবিবার ইসলামাবাদের বাড়ি থেকে একটি টিভি চ্যানেলের দফতরে যাওয়ার পথে অপহৃত হন বছর চল্লিশের এই সাংবাদিক। ওই চ্যানেলে প্রতি রবিবার একটি অনুষ্ঠান করতেন তিনি। তার পর গত কাল পঞ্জাব প্রদেশের সরাই আলমগির এলাকায় তাঁর গাড়িটির খোঁজ মেলে। তার একটু দূরে একটি খাল থেকে উদ্ধার হয় দেহ। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, শাহজাদের দেহের একাধিক জায়গায় অত্যাচারের চিহ্ন মিলেছে। সাংবাদিকের পরিবারের অভিযোগ, আইএসআইয়ের গোয়েন্দারাই অপহরণ করে হত্যা করেছে শাহজাদকে।
কেন এই হত্যা? অপহরণের ঠিক দু’দিন আগেই ‘এশিয়া টাইমস অনলাইন’-এ শাহজাদের একটি লেখা প্রকাশিত হয়। ‘আল কায়দা হ্যাড ওয়ারনড অফ পাকিস্তান স্ট্রাইক’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটিতে আল কায়দা ও আইএসআইয়ের ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শাহজাদ। তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের দাবি, প্রতিবেদনটি পড়েই টনক নড়ে আইএসআইয়ের।
কী ছিল সেই প্রতিবেদনে? শাহজাদ লিখেছিলেন, ২২ মে করাচির নৌ-সেনা ঘাঁটিতে হামলার পিছনে আল কায়দার প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। তাঁর দাবি ছিল, পাক নৌ-সেনা সম্প্রতি আল কায়দার উপর নজরদারি বাড়িয়েছে। এমনকী, নজর রাখা হচ্ছে আইএসআইতে এই জঙ্গি সংগঠনের ‘বন্ধু’দের উপরেও। পাক নৌ-সেনাতে আল কায়দা নিজেদের লোক ঢুকিয়েছিল। সেই সব জঙ্গিকে চিহ্নিত করে তাদের আটকেও রেখেছিলেন নৌ-সেনার অফিসাররা। আটকদের মুক্তির দাবিতে আল কায়দা ও পাক সেনা অফিসারদের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তার বদলা নিতেই করাচির পিএনএস মেহরান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় আল কায়দা। শাহজাদের প্রতিবেদনের দ্বিতীয় কিস্তিও তৈরি ছিল। সেখানে দেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য ফাঁস করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
শাহজাদের কিছু সাংবাদিক বন্ধুও জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইএসআইয়ের গোয়েন্দারা শাহজাদকে ডেকেছেন। অপহরণের আগে শাহজাদ নিজেই নাকি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে আইএসআই হুমকি দিচ্ছে তাঁকে। ঘটনায় আইএসআইয়ের নাম প্রত্যক্ষ ভাবে জড়ানোয় নড়েচড়ে বসেছে পাক প্রশাসনও। আজই অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক শাহজাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। পরে তিনি বলেন, “শাহজাদ হত্যার সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগ রয়েছে কি না জানতে তদন্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিও এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।” এর পর থেকে পাক সাংবাদিকরা আত্মরক্ষার্থে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন মালিক। |