কেন্দ্রের অনুদান চাই না, বলেছিল রাজ্যই

বিপুল ঋণের সঙ্গেই ঘাড়ে
বকেয়া বিলের বোঝাও
²

নুন আনতে যে রাজ্যের পান্তা ফুরোয়, তা ভোটের প্রচারে বারবার তুলে ধরেছে তৃণমূল। কুর্সিতে বসার ১২ দিনের মাথায় রাজ্যের কোষাগারের বেহাল দশার সেই চিত্রের একাংশ প্রকাশ করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সেই সঙ্গে জানালেন, বিভিন্ন দফতরে কাজ করিয়ে পাওনাদারদের প্রচুর টাকার বিল বকেয়া রেখে গিয়েছে আগের সরকার। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ৩৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিল বকেয়া রয়েছে। এই টাকা মেটানোর দায়ও নতুন সরকারের ঘাড়ে এসে পড়েছে।
রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি এখন কী রকম?

অর্থ-চিত্র

কেন কেন্দ্র সাহায্য করেনি

৩ সেপ্টেম্বর ২০১০

৩ ডিসেন্বর ২০১০

৪ ডিসেম্বর ২০১০

রাজ্য ২৯৮৫
কোটি চায়

আর্জি কমে
২৩৪৫ কোটি

রাজ্য জানায় তারা
অনুদান চায় না

দুরবস্থা কতটা

l ২০১০-১১ সালে রাজস্ব ঘাটতি ১৬৪৪১ কোটি
l পুঞ্জীভূত ঋণ বেড়ে ২০৩৪৪৮ কোটি
l মাথাপিছু ঋণ ২১৬৯৭
l ৩৫০০ কোটিরও বেশি বিল বাকি রাখায় বেড়েছে বোঝা

পাওনাদারদের ধার মেটাতে

l বাজার থেকে ৩০০০ কোটি
l স্বল্পসঞ্চয় খাতে ৫০০ কোটি ধার করে

* সব হিসেব টাকায়

এত দিন বেতন হল কী করে

l সব বিল আটকে রেখে, পাওনাদারদের টাকা না দিয়ে
l কেন্দ্রের কাছ থেকে সামঞ্জস্যহীন ভাবে ঋণ নিয়ে

সবিস্তার না জেনে
মন্তব্য করব না
মঙ্গলবার মহাকরণে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১০-১১ সালে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৬,৪৪১ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণের দিক থেকে দেখলে, পশ্চিমবঙ্গের পরে রয়েছে মহারাষ্ট্র। কিন্তু তাদের ঘাটতির পরিমাণ এ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক (৭৬৫৫ কোটি টাকা)। অন্য দিকে, এই সময়ে বিহার, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ অন্য রাজ্যগুলির রাজস্ব উদ্বৃত্ত। তিনি জানান, রাজ্যের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ২১,৬৯৭ টাকা। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “রাজ্যগুলির মধ্যে এটাই সর্বাধিক। যে শিশু এ দিন জন্মাচ্ছে, তার ঘাড়েও এই ঋণের বোঝা চাপছে।” রাজ্যের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ বেড়ে এখন ২,০৩,৪৪৮ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পুঞ্জীভূত এই বিপুল ঋণের পাশাপশি, গত কয়েক মাস ধরে পাওনাদারদের বিল না মেটানোর জন্য নতুন সরকারের ঘাড়ে প্রচুর টাকার বোঝা এসে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, বিভিন্ন দফতর থেকে হিসেব নিয়ে দেখা যাচ্ছে, মার্চ মাস পর্যন্ত ২৫০০ কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। এপ্রিল ও মে মাস যোগ হলে ওই বকেয়ার পরিমাণ ৩৫০০ কোটি টাকারও বেশিতে গিয়ে দাঁড়াবে। অমিতবাবু বলেন, “আগের সরকার এই দায়ভার চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে। পাওনাদারদের কাজ করিয়ে বিল না দেওয়া সম্ভব নয়। তা হলে তাঁরা আদালতে মামলা করবেন। এই বিল দেওয়ার উপরে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার থেকেই তা তুলে নেওয়া হয়েছে।” তবে প্রতিটি বিল পরীক্ষা করে দেখা হবে, সেখানে হিসেবের কোনও গরমিল করা হয়েছে কি না।
কিন্তু কোষাগারের এই দুর্দশার মধ্যে কোথা থেকে জোগাড় হবে এত টাকা?
অমিতবাবু বলেন, “৫০০ কোটি টাকা স্বল্পসঞ্চয় থেকে ঋণ নেওয়া হবে। বাকি টাকা বাজার থেকে তুলবে রাজ্য সরকার।” তবে রাজ্য অর্থ দফতর সূত্রের খবর, এর মধ্যে রাজ্যের কোষাগারের হাল ফেরাতে কেন্দ্রের সাহায্য নিয়েও কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির উপরেও রাজ্য সরকার অনেকটা ভরসা করে রয়েছে। এই ভরসা থেকেই রাজ্য সরকার শিক্ষকদেরও মাস পয়লাতেই বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে বলে অর্থ দফতর সূত্রের খবর।
রাজ্যের এই আর্থিক পরিস্থিতিতে আগের সরকার কী করে বেতন দিত, তা নিয়েও এ দিন তথ্য প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “পাওনাদারদের বিল আটকে রেখে, কোষাগারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, টাকা আটকে রাখা হত। পাশাপাশি, সামঞ্জস্যহীন ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে রাজ্য।” অমিতবাবুর দাবি, রাজ্য সরকার বছরে সর্বোচ্চ যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিতে পারে, তার ৮.৩৩ শতাংশ প্রতি মাসে তোলার কথা। কিন্তু গত দু’মাসে ১২ শতাংশ করে ঋণ নিয়েছে আগের রাজ্য সরকার। এটা সামঞ্জস্যহীন ভাবে তোলা হয়েছে। বকেয়া মেটানোর ক্ষেত্রেও শেষ কয়েক মাস প্রায় সব বিলই চেপে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অমিতবাবু।
রাজ্যের আর্থিক হাল ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে। এই দুর্দশার জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করে সোমবার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত বলেছিলেন, “এই কেন্দ্রীয় সাহায্য আগেই দেওয়া উচিত ছিল।” অসীমবাবুর এই বক্তব্যের উত্তরে এ দিন সরকারি ফাইল থেকে তথ্য হাজির করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ২০১০ সালে ৩ সেপ্টেম্বর রাজ্য ২,৯৮৫ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছিল। পরে, ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর, তা কমিয়ে ২,৩৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু এর পর দিনই, অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর, রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দেয়, তাদের অনুদান দরকার নেই! অমিতবাবুর কথায়, “এর পরে তো বলা যায়, আপনিই কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাননি। সে ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগ কী করে ওঠে!”
রাজ্য সরকারের এই আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে কি কোনও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে চায় নতুন সরকার? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এখনও সবটা জানতে পারিনি। পুরোটা জানতে পারলে তবে তো শ্বেতপত্রের কথা আসবে। এখন যতটা জেনেছি, তার কিছুটা জানালাম।”
নয়া অর্থমন্ত্রীর এই তথ্য নিয়ে কী বলছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত? এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি এখনও সবটা জানি না। সব জেনে কয়েক দিন পরে এ নিয়ে মন্তব্য করব।”
First Page Rajya Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.