রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের জেরে পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রূপায়ণেও প্রভাব পড়েছে কোথাও কোথাও। আরামবাগ মহকুমায় ‘জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য’ কর্মসূচি যেমন অচল হয়ে পড়েছে। এই কর্মসূচি খাতে প্রতিটি পঞ্চায়েতের সংসদ-পিছু বরাদ্দকৃত অর্থ বিডিও অফিস থেকে সংসদগুলির অন্তর্গত গ্রামোন্নয়ন সমিতির অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও সেই টাকায় কোনও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট বিডিওরাই। বিরাট অঙ্কের ওই টাকার ভবিষ্যৎ কী, তা-ও বলতে পারছেন না প্রশাসনের কর্তারা।
আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের অধীনে আছে ৬৩টি পঞ্চায়েত। বাম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতগুলির মোট সংসদের সংখ্যা ৭০৫। প্রতিটি সংসদে একটি করে গ্রামোন্নয়ন সমিতি আছে। জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব এই সমিতিগুলিরই। বিধানসভা ভোটের আগেই গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলিকে গড়ে ১৯ হাজার টাকা করে পাঠানো হয় হুগলি জেলা পরিষদের তরফে। কিন্তু ওই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই পড়ে আছে। গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলির তরফে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকায় গোটা মহকুমায় কাজের পরিবেশ নেই। তা ছাড়া, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সিংহভাগই বাম নেতা-কর্মী। তাঁদের অনেকেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এলাকা ছাড়া। এই পরিস্থিতিতে গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলি ন্যূনতম কাজেরও ‘ঝুঁকি’ নিতে রাজি নয়।
জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকল্পটি জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীনস্থ। এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য, জনগণের মিলিত চেষ্টায় প্রতিটি এলাকার সব মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা। বরাদ্দকৃত অর্থে গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলির কাজ হল, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা এবং ওই ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার জন্য স্বনির্ভর দলগুলিকে ভাতা দেওয়া, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য দেওয়াল লিখন, পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা মেরামত করা, পানীয় জলের গুণমান পরীক্ষা করা প্রভৃতি। এই সব পরিষেবা না পেয়ে বহু মানুষ বিডিওদের শ্মরণাপন্ন হচ্ছেন।
গোঘাট ১ এবং ২ বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল ও অনির্বাণ সোম, আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই, পুড়শুড়ার ফাইয়াজ আহমেদ, খানাকুল ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় এবং খানাকুল ২ যুগ্ম বিডিও বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি, প্রকল্পটিকে সচল করতে তবে এখনও আশাব্যঞ্জক তেমন কিছু হয়নি। পঞ্চায়েতগুলির সিপিএম প্রধানদের অনেকেরই বক্তব্য, “আমরা তো কার্যালয়ে যেতেই পারছি না। তৃণমূলের ছেলেরা মারমুখী হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলিকে কাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করার ঝুঁকি নেওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চেষ্টা করা হবে।”
আরামবাগের তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ, কিঙ্কর মাইতিরা বলেন, “কোথাও কোনও আতঙ্কের পরিবেশ নেই। সকলকে কাজে ফিরতে অনুরোধ করা হয়েছে। ওঁরা নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। তাই আতঙ্কে আছেন।”
রাজনৈতিক চাপানউতোরের মাঝে পড়ে পরিষেবাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। |