সিঙ্গুরে জমি ফেরত

‘দিদি’র উপরে ভরসা রাখতে বললেন পার্থ

শিল্পমন্ত্রী হয়ে সিঙ্গুরে প্রথম সফরে গিয়ে জমিাহারাদের একটি কথাই বলে এলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, “দিদির উপরে ভরসা রাখুন।”
শিল্পমন্ত্রীর দাবি, জমি দিতে অনিচ্ছুকদের জমি ফেরতের বিষয়ে জন্য গত পাঁচ দিন ধরে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। বৈঠক করেছেন শিল্প দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও। কর্মীদের বলেছেন, সমাধানসূত্র থাকলে তা জানাতে। পার্থবাবুর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে অধিগৃহীত জমিতে গেলাম। এত দিন তো ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। যেখানে তাপসী মালিককে খুন করা হয়েছিল, সেখানেও গিয়েছিলাম।” জমি ফেরতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেখে মনে হয়েছে মমতার ইচ্ছেকে বাস্তবায়িত করতে খুব বেশি সমস্যা হবে না। চাই শুধু হৃদয় আর সদিচ্ছা।”

জমি ফেরতের আর্তি। শিল্পমন্ত্রীর কাছে জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষক পরিবারের মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মঙ্গলবার প্রথম সিঙ্গুরে এলেন তৃণমূলের কোনও নেতা-মন্ত্রী। এ দিন প্রকল্প এলাকা খুঁটিয়ে দেখেন শিল্পমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, হরিপালের বিধায়ক তথা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বেচারাম মান্না, রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত গুপ্ত। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা মানিক দাস, মহাদেব দাসদের মতো কয়েক জন চাষিও ছিলেন পার্থবাবুর সঙ্গে। সাংবাদিকদের অবশ্য প্রবেশাধিকার ছিল না। পার্থবাবু পরে বলেন, “সবটা দেখে গেলাম। সকলের সঙ্গে কথা বললাম। এ নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীকে দেব। উনি যা নির্দেশ দেবেন, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিন ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা বাজতে না বাজতেই শিল্পমন্ত্রীর কনভয় টাটাদের প্রকল্পের প্রধান গেট (যে গেটের সামনে এক সময়ে ধর্নামঞ্চ বেঁধেছিলেন মমতা) দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। গাড়ি নিয়ে সোজা কারখানার অর্ধসমাপ্ত নির্মাণের দিকে চলে যান পার্থবাবু। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে ভিতরের জমি ঘুরে দেখেন।
শিল্পমন্ত্রী আসছেন শুনে বেশ কয়েক জন অনিচ্ছুক চাষি প্রকল্পের মূল গেটের সামনে ভিড় জমান। ওই চাষিরা প্রায় সকলেই শুরু থেকে জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ভেবেছিলেন, তাঁদেরও হয় তো ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে। কিন্তু ঢুকতে না পেরে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। শ্যামলী পাকিরা বলেন, “জমি যে ফিরে পাব, নিশ্চিত। কিন্তু আর কত দিন অপেক্ষা করব! পার্থবাবুকে সে কথাটাই বলতে এসেছি।” পৌনে ১০টা নাগাদ প্রকল্প এলাকা থেকে বেরনোর মুখে গাড়িতে বসে থাকা শিল্পমন্ত্রীর হাত চেপে ধরে জমি ফেরতের আর্জি জানান কৃষক-রমণীরা। তাঁদের আশ্বস্ত করে জয়মোল্লার দিকে কিছুটা এগিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই প্রকল্প এলাকা দেখেন শিল্পমন্ত্রী। এলাকার ম্যাপ নিয়ে ভিতরের জমির ব্যাপারে কথা বলেন।
পরে প্রকল্প এলাকার মধ্যেই থাকা সেরামিক কারখানার ভবনে বৈঠকে বসেন পার্থবাবু। তত ক্ষণে অনিচ্ছুক কৃষকেরাও সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন। বৈঠক সেরে বেরিয়ে তাঁদের মুখোমুখি হন শিল্পমন্ত্রী। তাঁর কাছে ফের জমি ফেরতের আর্জি জানান সকলে। পার্থবাবু তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আপনারা দিদির উপরে ভরসা রাখুন।” পার্থবাবুর কথায়, “অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিয়ে শিল্পস্থাপন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন মমতা। মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তকে কত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত করা যায়, সেই চেষ্টাই চলছে।”
Previous Story First Page Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.