স্বাধীনতার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে রুদ্রসাগরে মৎস্যচাষের অনুমতি পান মৎস্যজীবীরা। ১৯৫১ সালের ১২ নভেম্বর গড়ে ওঠে রুদ্রসাগর উদ্বাস্তু মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সমিতির সম্পাদক সত্যবান দাস জানাচ্ছেন, ষাটের দশকের শেষ থেকে বোরো ধানের চাষ শুরু হয়। তবে বছরে একবার। এখন সমিতির হাজার দুয়েক সদস্য পরিবারের মধ্যে শুধু মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন শ’পাঁচেক । বাকি দেড় হাজার পরিবার মাছ ও ধান দুইই চাষ করে থাকেন।
নোয়া ছড়া, কামতলি ছড়া ও দুলর্ভনারায়ণ ছড়া নামে তিনটি জলধারা রুদ্রসাগরে এসে পড়েছে। রুদ্রসাগর তার জল ঢালে গোমতি নদীতে নয়া কাছিগাঙ খালের মাধ্যমে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অভিযোগ, এই ধান চাষ করতে গিয়েই সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে এই জলাশয়ের। পর্ষদ চেয়ারম্যান মিহির দেবের কথায়, “গোমতি ও জলাশয়ের সংযোগকারী কাছিগাঙ খালের মধ্যে জলধারা স্লুইস গেট দিয়ে নিয়ন্ত্রিত করা হয়। ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলটুকুই ঢুকতে দেওয়া হয়। একই ভাবে ধানচাষের অতিরিক্ত জল বার করে দেওয়া হয়। ফলে রুদ্রসাগর তার স্বাভাবিক জল পাচ্ছে না। সমস্যা আরও বাড়িয়েছে তিনটি ছড়া থেকে আসা পলি। বছরের পর বছর এই কাণ্ড চলতে থাকায় পলি জমে জমে হ্রদে চড়ার পরিমাণ বাড়ছে। মৃত্যুঘন্টা বাজতে শুরু করেছে রুদ্রসাগরের।”
রাজ্য বন দফতর জানাচ্ছে, ক্রমাগত পলি জমায় নয়া কাছিগাঙ খাল দিয়েও বাড়তি জল গোমতি নদীতে আসছে না। মৎস্যজীবী সমিতির সত্যবানবাবুর কথায় “সত্তরের দশকেও জলাশয়ের গড় গভীরতা ছিল ৪ থেকে ৫ মিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে আধ থেকে এক মিটারে। জলাশয়ের বেশির ভাগ জায়গাতেই মোটরবোট বা নৌকা চালানোর মতো পর্যাপ্ত জলই নেই। ঘাট থেকে নীরমহলে যাওয়ার জন্য একটা ফুট চল্লিশেক চওড়া আর দেড় কিলোমিটার লম্বা জায়গা রয়েছে জলাশয়ে। নৌকা একমাত্র ওই স্বল্প পরিসরেই চালানো যায়।”
ধানচাষেই যে হ্রদের সর্বনাশ হচ্ছে এ কথা পুরোপুরি মানতে রাজি নন সমিতির সভাপতি রঞ্জিত বর্মন। তিনি বলেন, “স্লুইস গেট দিয়ে জল নিয়ন্ত্রণ করা হয় হ্রদের পাশে থাকা ১৬টি গ্রামের বাসিন্দাদের চাষের জমি বাঁচাতে। এর সঙ্গে রুদ্রসাগরের সম্পর্ক নেই। জল নিয়ন্ত্রণ করা হয় অক্টোবর মাসে আর বোরো ধান চাষ করা হয় ডিসেম্বর মাসে। হ্রদ মজছে মুলত তিনটি ছড়া থেকে ক্রমাগত পলি এসে পড়ায়। তবুও রুদ্রসাগরকে বাঁচাতে সমিতি ভাবছে ধানি জমি কমিয়ে মাছ চাষ বাড়ানোর কথা। নতুন জমিতে ধান চাষ করতে দেওয়ার অনুমতি বহু বছর হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও জড়িত। একা সমিতির পক্ষে সবটা করা সম্ভব নয়।”
আসলে রুদ্রসাগরের জলের আয়তন কমায় হু হু করে মাছ চাষের পরিমাণও কমছে। বনদফতরের হিসাব বলছে, ২০০৩ সালে যেখানে ১০৪ টন মাছ মিলেছিল জলাশয় থেকে, ২০০৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ টনে। রঞ্জিতবাবুই জানান, বছরে মাত্র দু’মাস মাছ ধরা যায় হ্রদে। |